বাবার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পড়াশোনা মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়েছিলেন। চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন দু’বছরের মধ্যে তাঁকে পর্দায় দেখা যাবে আর ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখও হয়ে উঠবেন।
সময়ের একটু হেরফের হয়েছে বটে। দু’বছরের মধ্যে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নাম করতে পারেননি। তবে আজ দেবেন ভোজানিকে কে না চেনেন! ছোট হোক বা বড়, দুই পর্দারই জনপ্রিয় মুখ তিনি।
শুধু অভিনয় দিয়েই যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন সেটা বললে একটু হলেও খাটো করা হয় তাঁর প্রতিভাকে। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি স্ক্রিপ্ট লেখক, পরিচালক এবং প্রযোজক।
তাঁর প্রযোজনা সংস্থা এখনও পর্যন্ত যে ক’টি ছবি বা ধারাবাহিক করেছে তাতে সিংহভাগেই সাফল্য এসেছে।
মুম্বইয়ের একটি গুজরাতি পরিবারে জন্ম দেবেনের। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি নাটক করতেন। সে জন্য অনেক আগে থেকেই অভিনয় তাঁর নখদর্পনে ছিল।
কিন্তু দেবেন কখনও ভাবেননি অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বেছে নেবেন। তিনি নাটক করতেন ভালবেসে।
তাঁকে প্রথম পর্দায় দেখা যায় ১৯৮৭ সালে। ‘মালগুড়ি ডেজ’-এ। কলেজে পড়ার সময় এক সিনিয়র তাঁকে এই ধারাবাহিকের অডিশনের খবর দিয়েছিলেন। ‘মালগুড়ি ডেজ’-এর জন্য নতুন মুখের খোঁজে ছিলেন পরিচালক।
দেবেন অডিশন দেন এবং পরিচালকের পছন্দও হয়ে যায়। পাশাপাশি গুজরাতি নাটকও চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ রকমই একটি শো-এর জন্য বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে যেতে হত দেবেনকে। তিনি সে সময় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পড়াশোনাও করছিলেন। ইন্টার্নশিপও করছিলেন। অফিসে ছুটি চেয়েও মেলেনি।
সেই শো-এ দেবনের বদলে আমির খান অভিনয় করেছিলেন। আমিরের নাম প্রস্তাব করেন দেবেনই। তার আগে পর্যন্ত আমিরের কাজ ছিল মঞ্চের পিছনে সব কিছু সামলানো। অভিনয় তিনি করার অনুমতি পাননি। দেবেনের কথাতেই সেই সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
এর পরেই ১৯৯২ সালে আমির খানের ছবি ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ মুক্তি পায়। এই ছবিতে আমিরের সুপারিশে দেবেন সুযোগ পান। কিন্তু সে কথা বাড়িতে জানাতেই চূড়ান্ত অশান্তি শুরু হয়।
বাবা কিছুতেই দেবেনকে সিএ-র পড়া ছেড়ে ছবিতে অভিনয় করতে দিতে রাজি ছিলেন না। তখনই বাবাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন দেবেন। পড়া মাঝ পথেই ছেড়ে দিয়ে আমিরের সঙ্গে ছবি করতে শুরু করলেন।
ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়েছিল। তবে ছবিটি মুক্তি পেতে চার বছর লেগেছিল। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তা দেখে খুশি হয়েছিলেন বাবা।
এর পর ‘আন্দাজ’, ‘সারহদ: দ্য বর্ডার অব ক্রাইম’-সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় তো করেছেনই, পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও প্রচুর কাজ করতে শুরু করেন দেবেন।
‘দেখ ভাই দেখ’, ‘শ্রীমান শ্রীমতী’, ‘অফিস অফিস’-সহ একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিক করেছেন। ‘এক মহল হো সপনো কা’-তে অভিনয় করার সময় তাঁকে এর অনেকগুলি পর্বে পরিচালকের ভূমিকাও পালন করতে হয়েছিল।
সেই কাজ করার সময়ই দেবেন বুঝেছিলেন তিনি পরিচালনাও করতে পারবেন। ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’ তাঁর প্রথম পরিচালিত ধারাবাহিক। টানা কাজ করতে করতে জীবন একঘেয়ে লাগতে শুরু করেছিল তাঁর। ২০১০ সালে কাজ থেকে বিরতি নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান দেবেন।
এর পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব সার্দান ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ছবি পরিচালনা নিয়ে পড়াশোনা করেন। বছর দু’য়েক ইন্ডাস্ট্রি থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকার পর দেশে ফিরে ফের ২০১২ সালে তিনি কাজে হাত লাগান।
এ বার পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাও করতে শুরু করেছিলেন। নিজের প্রযোজনা সংস্থার নাম রেখেছিলেন ‘হ্যাটস অফ’।
২০১২ সালে ‘অগ্নিপথ’ ছবিতে অভিনয়ে কামব্যাক করেছেন তিনি। কিন্তু তার পর বড় পর্দায় সে ভাবে আর দেখা যায়নি তাঁকে। তবে ছোট পর্দাতে সমান তালে অভিনয় করে চলেছেন।