বিদিশা দে মজুমদার ছবি ফেসবুক।
নেটমাধ্যমে শেষ বার তাঁকে অনলাইন দেখিয়েছে বুধবার ভোরে। তার পর আর ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন দেখা যায়নি মডেল বিদিশা দে মজুমদারকে। কাজ না থাকলে বেলা করে উঠতেন ঘুম থেকে। সে কথা পরিচিতেরা জানতেন। তাই কারও কোনও রকমের সন্দেহ হয়নি। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে গেলেও ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় বিদিশার ‘ফ্ল্যাটমেট’ দিশানী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি কলেজ গিয়েছিলেন। ফিরে এসে সাড়া না পেয়ে ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকে দেখেন, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন বিদিশা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোন করেন বিদিশার এক পরিচিতকে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই পরিচিত ব্যক্তিই আনন্দবাজার অনলাইনকে বুধবার ভোর পর্যন্ত বিদিশার ‘অনলাইন’ থাকার কথা জানিয়েছেন।
বিদিশা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওই পরিচিতের গলায় স্মৃতি, যন্ত্রণা, ভয়, অস্বস্তি মিলেমিশে একাকার। তাঁর কাছে বিদিশা নিজের ছোট বোনের মতো ছিলেন। বিদিশার মা তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘‘আমার আর এক সন্তান!’’ সেই বিদিশার রুমমেট দিশানীর কাছ থেকে ফোন পেয়েই ছুটতে ছুটতে হাজির তিনি। মডেলের ঘরের দরজা তখনও ভেজানো। বাইরে পুলিশ। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের অনুমতি নিয়ে ভেজানো দরজা খুলতেই দেখি, গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছে আমার বোন!’’
নৈহাটিতে বাড়ি। কিন্তু বিদিশা থাকতেন নাগেরবাজারের রামগড় কলোনির দু’কামরার একটি ফ্ল্যাটে। সেখানে কলেজ পড়ুয়া দিশানী তাঁর ‘ফ্ল্যাটমেট’। কাজ না থাকলে দুপুর দুটো পর্যন্ত ঘুমোতেন মডেল। তার পর নির্দিষ্ট দোকান থেকে খাবার এলে খাওয়াদাওয়া সারতেন। দিশানী নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ চলে যেতেন। তাঁর কাছ থেকেই বিদিশার ওই পরিচিত জানতে পেরেছেন, আগের রাতে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন মডেল। দিশানীকে নিয়ে পার্লারেও গিয়েছিলেন। নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়েওছেন। ফোনও করেছিলেন ওই পরিচিতকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ফোনটা ধরতে পারিনি। পারিবারিক কারণে। আমি নিজে দেখেছি, ভোরেও অনলাইন ছিল বিদিশা।’’
তবে ফোন বন্ধ ছিল না বিদিশার। বেলার দিকে তাঁর মা অনেক বার ফোন করেছিলেন মেয়েকে। মেয়ে সাড়া দেননি। যেহেতু বেলা করে ঘুম থেকে উঠতেন বিদিশা, তাই ‘ফ্ল্যাটমেট’ও কলেজ যাওয়ার সময় কিছু বুঝতে পারেননি বলে দাবি করেছেন।
ওই পরিচিতের দাবি, কলেজ থেকে ফিরে দিশানী দেখেন, বিদিশার ঘরের দরজা বন্ধ। প্রথমে বাইরে থেকেই ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে খটকা লাগে তাঁর। দরজা ঠেলে দেখেন, বিদিশা গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন! তখন বিকেল ৫টা বাজে প্রায়। পুলিশের পাশাপাশি খবর পেয়ে আসেন বিদিশার মা পম্পা দে মজুমদার এবং বাবা বিশ্বনাথ দে মজুমদার। বিদিশার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে।