‘লাপতা লেডিজ়’-এর কাহিনিকার বিপ্লব গোস্বামী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সকাল থেকে পর পর ফোন আসছে। একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আসছে। তাই একটু একটু করে খবরটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। ‘লাপতা লেডিজ়’ ৯৭তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। এক ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায় আমার কিছু উপলব্ধিও পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
এই মুহূর্তে আমি কলকাতায় রয়েছি। আর আজকে বেশি করে শুরুর দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। প্রতিযোগিতায় আমার চিত্রনাট্যের পুরস্কার জেতা। তার পর আমির খানের আগ্রহ। আমার লেখা কাহিনি নিয়ে কিরণ রাওয়ের ছবি তৈরির ইচ্ছাপ্রকাশ। লম্বা একটা সফর। কাহিনিটা লেখার সময় থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম, ছবিটা অন্য ধারার হবে। সকলেরই পছন্দ হবে। সেই সঙ্গে মনে হয়েছিল, ছবিটা সারা দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নেবে। অস্কার নিয়েও আমি আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সব আশা তো পূর্ণ হয় না! সেই ভাবেই খুব বেশি কিছু ভাবিনি। তার পর আজকের খবর জানতে পেরে আমি বাকরুদ্ধ!
আমার জন্ম হয় আগরতলায়। তার পর সিনেমার আকর্ষণেই কলকাতার এসআরএফটিআই-এ পড়তে আসা। সেই সঙ্গে ইন্ডিয়ান আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করা। তার পর আমার যাত্রাপথ পরিবারের সকলেই জানেন। সকাল থেকেই তাঁদের থেকে শুভেচ্ছা পেয়েছি। আমার মা, দিদি এবং দুই দাদা, সকলেই আনন্দিত। কিন্তু আজকে বেশি করে বাবার কথা মনে পড়ছে। বছর তিনেক আগে বাবা প্রয়াত হন। কিন্তু ছোট থেকেই দেখেছি, তিনি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সাহিত্য, সঙ্গীত নিয়ে চর্চা করতেন। সিনেমা নিয়ে আমার উৎসাহ এবং পরবর্তীতে পড়াশোনা— সবটাই বাবা শুরু থেকে সমর্থন করেছেন। তাই আবেগের জায়গা থেকে আজকে এই প্রাপ্তি তাই তাঁকেই উৎসর্গ করতে চাই। আর শিল্পের দিক থেকে আজ পর্যন্ত যে সমস্ত চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমাকে বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, তাঁদের উৎসর্গ করারও ইচ্ছা রয়েছে।
আমি দেখছি, আমাদের ছবিটার সিক্যুয়েল তৈরি হবে বলেও সমাজমাধ্যমে চর্চা শুরু হয়েছে। আনন্দবাজার অলাইনের মাধ্যমেই একটু স্পষ্ট করে দিতে চাই, এখনও পর্যন্ত আমি এ রকম কোনও কিছু শুনিনি। আমি নিজেও এ রকম কোনও কথা বলিনি। ছবির সিক্যুয়েল যদি তৈরি হয়, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই কিরণ রাও এবং আমির খানের।
সকাল থেকেই টিমের অনেক সদস্যের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তাঁদের পরিশ্রম ছাড়া তো ছবিটা এই সম্মান পেত না! আমার গল্প অনুসারে চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন স্নেহা দেশাই ও দিব্যানিধি শর্মা। তাঁদেরকে ধন্যবাদ। তবে এখনও পর্যন্ত কিরণের সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। আমির এবং কিরণ, দু’জনেই অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। খবরটা প্রকাশ্যে আসার পর আমি নিশ্চিত তাঁদের ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। কিন্তু আশা করছি, আজকেই হয়তো কিরণের সঙ্গে আমার এক বার কথা হবে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাব। আমিও দ্রুত মুম্বই গিয়ে সকলের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।
বাঙালি হিসেবে আজ সত্যিই গর্ব হচ্ছে। ২০২২ সালে শৌনক সেনের তৈরি তথ্যচিত্র (‘অল দ্যাট ব্রিদ্স’) অস্কারে মনোনিত হয়। চলতি বছরে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন অনসূয়া সেনগুপ্ত। আগামী বছর আমাদের ছবির মাধ্যমেই অস্কারের সঙ্গে আরও এক বার বাংলার যোগসূত্র তৈরি হল জেনে ভাল লাগছে। আরও একটা বিষয়। এর আগে অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে ‘লগান’ মনোনীত হয়। সেই ছবির মুখ্য চরিত্রে ছিলেন আমির এবং সহকারী পরিচালক কিরণ। আমাদের ছবির প্রযোজক আমির এবং পরিচালক কিরণ। যোগসূত্র সেই অস্কার। অদ্ভুত সমাপতন। ২২ বছর পর অস্কারের মঞ্চে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অস্কারের মঞ্চে আমরা খুব ভাল ফল করব, এই আশাতেই রয়েছি।