ভোট দিতে গিয়ে হেনস্থার মুখে অনীক দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
ভোট দিতে গিয়ে হুমকির মুখে পরিচালক অনীক দত্ত। ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনার কথা জানালেন তিনি। বুথ নম্বর ২৮৮, ২৮৯। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সদর দরজার ও পারে দেখলেন একাধিক রাজনৈতিক দলের ক্যাম্প। “তৃণমূলের ক্যাম্পে অনেক লোক, সিপিএমের দুই জন টিমটিম করছে। আর বিজেপি তথৈবচ”, বললেন পরিচালক। হঠাৎ জনৈক ব্যক্তি তাঁকে বলেন, “এখানে এত জন কী করছেন? হয় ভোট দিতে যান না হলে বাড়ি চলে যান।” প্রাথমিক ভাবে পরিচালক ভেবেছিলেন, তাঁরা ঠিকই বলছেন, নিয়ম মেনে খুব ভাল কাজ হচ্ছে।
কিন্তু দেখলেন ১০-১৫ ফুট দূরে তৃণমূলের আরও একটি ক্যাম্প। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি-সহ প্রার্থীর বড় বড় ছবি। পরিচালক তাঁদের বলেন, “এটাও তো নিয়মবিরুদ্ধ। আজ ভোটের দিনে বুথের এত কাছে এই সব। শুধু পতাকা লাগানো যায়।’’ এই কথা শোনার পরে তাঁরা মেনে নেন, এটা নিয়মবিরুদ্ধ। পরিচালকের কথায়, “ওরা যে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছিল সেগুলো খুবই ছেঁদো।” কিন্তু কথা বাড়তে বাড়তে ক্রমশ তা বচসায় পরিণত হয়। সেই সময় ক্যাম্পের কিছু অংশ সরিয়ে নেয় তারা।
কিন্তু ভোট দিয়ে ফেরার পথে তাদের রোষের মুখে পড়লেন পরিচালক। অনীক দত্তের কথায়, “কানের পাশে দু’জন ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ বলে চিৎকার করে গেল। তার পরে ঝাঁকে ঝাঁকে লোক চলে এল।” পাশের বস্তি থেকে ছেলেদের দল, কিছু মহিলা এসে চড়াও হন পরিচালকের উপর। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ তাঁর পরিচিত। ছোটবেলা থেকে দেখছেন তাদের। দুষ্কর্মের জন্য নাম রয়েছে এলাকায়। তারা পরিচালকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গালিগালাজ শুরু করেন।
অনীক দত্ত বললেন, “আমাকে বলেছে, ‘কী করে সাহস হয়। জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে লাগতে এসেছ!’ কেউ কেউ বলল, ‘ব্যাটা বিজেপি!’” তাঁকে এও বলা হয়, “মেরে সাবাড় করে দেব।” হুমকি শোনার পরেও একরোখা তিনি। “আমি তো কোথাও চলে যাচ্ছি না। করুন না কী করবেন!” বলার পরে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পরিচালক। বললেন, “আপনাদের কিছু করার হলে করুন, তার পরে আপনাদের অনুমতি নিয়ে বাড়ি যাব।” পরিচালকের কথায়, “বাপ-বাপান্ত করে উল্টোপাল্টা কথা বলল আমাকে।”
এর পরে স্থানীয় প্রার্থীর স্বামীকে ফোনে সমস্ত ঘটনা জানান তিনি। যদিও পরিচালকের কাছে এই ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়। এ দিন তারা পরিচালককে না ছুঁলেও টানা হুমকি দিয়ে চলেছে। পরিচালকের কথায়, “ওরা আমাকে বলল, ৪ তারিখে শুধু আমার গায়ে হাত দেবে না। পারলে আমাকে ভ্যানিশ করে দেবে। আমি কিছুতেই ওদের বোঝাতে পারছি না। ৪ তারিখ পর্যন্ত তর সইছে না আমার। যা করার আজই করুক।” তিনি জানালেন, ভোটের ফল ঘোষণার দিন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল থেকে ডাক পেয়েছেন তিনি। তাই সে দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুশকিল।
জনতার উদ্দেশে পরিচালক বললেন, “আপনাদের জানিয়ে রাখলাম ঘটনাটি। পুলিশ হয়তো কোনও ভাবে দেখবেন বিষয়টি। আপনারা যদি দেখেন ৪ তারিখে আমার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হয়েছে তা হলে বুঝবেন কারা দায়ী। তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।” যদিও তিনি জানিয়েছেন, চাইলে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে পরিচালকের মতে, এই মুহূর্তে এফআইআর করার দরকার নেই। প্রয়োজনে জেনারেল ডায়েরি করে রাখবেন তিনি।