সৌমিত্র রায়। ছবি: সংগৃহীত।
বাঙালির ‘বারান্দায় রোদ্দুর’ এখন ভরা যৌবনে, ‘ভূমি’ পা দিচ্ছে ২৫-এ। নব্বই দশকের শেষ ভাগে নতুন করে বাংলা গানের পালে লেগেছিল হাওয়া। সোনালি-রুপোলি আলোয় ‘ভূমি’ দেখেছে দর্শকের উন্মাদনা। আবার তারাই সাক্ষী মর্মান্তিক ভাঙনেরও। একদল গানপাগল তরুণ মিলে জন্ম দিয়েছিলেন নতুন এক ব্যান্ডের, কেমন করে যেন একদিন সেই সংসারে ধরল ফাটল। তবে অতীতকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়াই নাকি লক্ষ্য! ২৭ জুলাই শনিবার রবীন্দ্র সদনে ‘ভূমি’ ব্যান্ডের ২৫ বছরের উদ্যাপনের অনুষ্ঠান। তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে নিজের গানজীবন থেকে সুরজিতের ‘ভূমি’ত্যাগ বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সখ্য— সব বিষয়েই অকপট সৌমিত্র রায়।
প্রশ্ন: ২৫ বছরের জন্মদিন, তার আগে কি ‘ভূমি’র শুরুর দিনগুলো মনে পড়ছে?
সৌমিত্র: হ্যাঁ, মনে তো পড়ছেই। কতগুলো গানপাগল ছেলের হাত ধরে শুরু হয়েছিল ভূমি। একসময়ে ওই ছেলেগুলি ভালবাসত পাশ্চাত্য গান। তার পর হঠাৎ ভাটিয়ালি, বাউল গানের সঙ্গে গিটার ড্রাম্স নিয়ে গুনগুন করা শুরু। শ্রোতাদেরও ভাল লেগে গেল। প্রথম অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, জ্ঞান মঞ্চে। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রশ্ন: ‘ভূমি’ই কি লোকগানকে শহুরে সংস্কৃতির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল?
সৌমিত্র: লোকগানকে ‘পপুলার কালচার’-এ নিয়ে এসেছিলাম আমরাই, এ কথা সত্যি। এখন অবশ্য অধিকাংশ ব্যান্ডই লোকগানের ভরসায় টিকে আছে। একটা কথা মনে পড়েছে, তখন ২০০২ সাল, দক্ষিণাপণে যাতায়াত লেগেই থাকত। ওখানে এক ক্যাসেটের দোকানের মালিক আমাকে ডেকে বলেন, “আপনারা আসার পর লোকে পূর্ণদাস বাউল, অমর পাল, নির্মলেন্দু চৌধুরীর গান শুনতে শুরু করেছে।” তিনিই জানিয়েছিলেন, ‘ভূমি’র গান তো বিক্রি হচ্ছেই, তারই সঙ্গে যে সব ক্যাসেটে ধুলো পড়ে গিয়েছিল, সেই সব লোকগানও বিক্রি হচ্ছে। আমরা একটা বড় প্রভাব ফেলতে পেরেছিলাম। আমার মনে হয় ঈশ্বর আমাদের লোকগানের দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: ‘ভূমি’ যেমন লোকসঙ্গীতকে মূলধারায় প্রচলিত করেছে, কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করার মতো কাজও তো করেছে?
সৌমিত্র: আচ্ছা, এখানে বলে রাখা ভাল, একটা গানের ক্ষেত্রেই এই ভুলটা হয়েছিল। সেটা ‘লাল পাহাড়ির দেশে’। এই ক্ষেত্রে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। আমরা প্রথম গানটা শুনেছিলাম ২০০০ সালে বাসুদেব দাস বাউলের কণ্ঠে একটি অনুষ্ঠানে। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ওঁর থেকে গানের কথা হাতে লিখে নিয়েছিলাম। বাসুদেব দাস অনুমতি দিয়েছিলেন গানটা আমাকে গাইতে। সে দিন তিনি যে গেরুয়া ফতুয়াটি পরেছিলেন সেটিও খুলে আমাকে দিয়ে দেন। তাতে ফুটো ছিল। বিড়ির আগুনে ফুটো হয়ে গিয়েছিল। এখনও আমার কাছে রয়েছে সেই জামা। ২৭ জুলাই রবীন্দ্র সদনে, অনুষ্ঠানের দিন ওই ফতুয়া পরেই ‘লাল পাহাড়ির দেশে’ গাইব। আর যাঁর লেখা গান, তিনি অরুণ চক্রবর্তী। আমার সঙ্গে যখনই তাঁর দেখা হয়েছে, পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। এখনও যখনই দেখা হয়, প্রতি বার ক্ষমা চাই। উনি বলেন, “ছেড়ে দে পাগলা, তুই তো ক্ষমা চেয়েছিস।” আমরা জানতাম না বলেই এই ভুলটা হয়েছিল।
প্রশ্ন: এতগুলো বছর কেটে গেল, শুরুতে কি কোনও পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন?
সৌমিত্র: কোনও ধরনের আশা বা লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামিনি। শুধু ভাল গান গাইব, আনন্দ করব, ব্যস! একটা কথা না বললেই নয়, বাংলার বাইরে ‘ভূমি’ প্রথম অনুষ্ঠান করেছিল সান ফ্রান্সিসকোয়। সে বছরই লস অ্যাঞ্জেলসের বঙ্গ সম্মেলনে গাওয়ারও প্রস্তাব আসে। কিন্তু আমরা সেটা গ্রহণ করিনি। একমাত্র কারণ পারিশ্রমিক। সান ফ্রান্সিসকোয় আমরা অনেক বেশি পারিশ্রমিকে গাইতে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: একটা সময় ‘ভূমি’র অনুষ্ঠানের টিকিট ‘ব্ল্যাক’ হত, গ্রামগঞ্জে মারামারি, এখন ততটা উন্মাদনা দেখতে পান দর্শকের মধ্যে?
সৌমিত্র: ঠিকই, একটা সময় ছিল, যখন ‘ভূমি’র অনুষ্ঠানের টিকিট ‘ব্ল্যাক’ হত। লাঠিচার্জ করতেও হয়েছে। তখন আসলে ব্যান্ডের গান নিয়ে উন্মাদনাটাই আলাদা ছিল। তবে আমার মনে হয়, আবার তেমন দিন ফিরে আসবে। এখন ‘রিয়্যালিটি শো’ হয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। উদ্যোক্তরা কম বাজেটে রিয়্যালিটি শোয়ের গায়ক-গায়িকাদের পেয়ে যাচ্ছেন। আমাদের যে পারিশ্রমিক দিতে হয়, তার থেকে কম টাকায় এই সব ‘উঠতি তারকা’দের পাওয়া যায়। সদ্য টিভিতে দেখা গায়ক-গায়িকাকে নিয়ে দর্শক-শ্রোতাও মাতোয়ারা। এতে আমাদের ক্ষতিই হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। ‘রিয়্যালিটি শো’য়ের গায়কদের জন্য আমাদের আগের পারিশ্রমিক ধরে রাখাটা কঠিন হচ্ছে।
প্রশ্ন: প্রতিযোগিতা বেড়ে গিয়েছে বলছেন?
সৌমিত্র: না, কোনও প্রতিযোগিতা নেই। আসলে আগে একজন শিল্পী যে পারিশ্রমিক পেতেন, সেই উচ্চতা থেকে খানিকটা নেমে গিয়েছেন। কোথায় ‘অরিজিনাল’, আর কোথায় ‘মেড ইন চায়না’! এরা তো নিজেদের গান গায় না। এরা তো কণ্ঠী। যোগ্য পারিশ্রমিক না পেলে শো করব না, ঠিক আছে। কিন্তু ‘ভূমি’র গুণগত মান নিয়ে কোনও আপস করব না।
প্রশ্ন: একটা সময় ‘বারান্দায় রোদ্দুর’ গাইতেই হত সব অনুষ্ঠানে, সেটার কি বদল ঘটেছে?
সৌমিত্র: এখন দর্শকদের চাহিদা হল ‘লালে লালেশ্বরী’। এ ছাড়াও ‘ফাগুনি পূর্ণিমা রাতে’ খুব পছন্দ দর্শকের। ‘বারান্দায় রোদ্দুর’ও গাই আমরা। তবে এই দু’টি গানের অনুরোধ সব থেকে বেশি পাই।
প্রশ্ন: ব্যান্ড শুরু হয় অনেকগুলি মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে, তবে তাঁদের একসঙ্গে চলাটা কি খুব কঠিন?
সৌমিত্র: সততা ও নিষ্ঠার একটা মূল্য আছে। আজকে ২৪ বছর ধরে রবীন, হেমন্ত, অভিজিৎ, আমি একসঙ্গে আছি। এর মধ্যে অনেক এসেছেন-গিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা রইল। আমার ছেলে আর্যেশ আমাদের সঙ্গে এখন বাজাচ্ছে, সেটা ভাবলেও অবাক লাগে। আমরা কেউ অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকার মানুষ নই।
প্রশ্ন: ব্যান্ডে সুরজিতের জায়গাটা ফাঁকা হতেই কি আর্যেশ যোগ দিলেন?
সৌমিত্র: ছেলে আমাদের ‘ভক্ত’ ছিল। নিজের একটা ব্যান্ড ছিল আর্যেশের। গানবাজনা করত। সুরজিৎ চলে যাওয়াতে আমাকে মাইকের সামনে যেতে হল। আমি ব্যান্ডের ড্রামার ছিলাম। একটা শোয়ের আগে আর্যেশকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ও বাজাবে কি না। একদম হুবহু করে দিয়েছে। সেই জায়গায় আর্যেশ তখন যুক্ত হল।
প্রশ্ন: ২০১৫ সালে সুরজিতের ‘ভূমি’ ত্যাগ করায় কতটা প্রভাব পড়েছিল?
সৌমিত্র: প্রভাব তো পড়বেই। দর্শকের একাংশের ধারণা হয়েছিল ‘ভূমি’ ভেঙে গিয়েছে। আসলে যৌথ পরিবার থেকে একজন বেরিয়ে গেলে আমাদের কিছু করার নেই। সেই সময় ছয়-সাত মাস বেশ ভুগেছিলাম। এক বছরে প্রায় ১৮-২০ টি অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছিল। তার পর আমেরিকায় একটি অনুষ্ঠান করলাম, তাতেই যা বোঝার বুঝে গেলেন দর্শক-শ্রোতা। আমাদের উপর তাঁদের যে আস্থা ছিল সেটাই ফিরে পেলাম ওই অনুষ্ঠানে। পর পর অনেকগুলি অনুষ্ঠান করেছি তার পর। ব্যস, সবটা পরিষ্কার হয়ে গেল সকলের কাছে। তার পর থেকে কোনও বাধাবিপত্তি আসেনি। এখনও অবধি ১৮৫১টা শো করেছে ‘ভূমি’। সংখ্যাটা কম নয় কিন্তু।
প্রশ্ন: ‘ভূমি’, ‘ফসিল্স’, ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘ক্যাকটাস’-এর বাইরে নতুন কোনও ব্যান্ড কলকাতায় সে ভাবে সফল হতে পারল না কেন?
সৌমিত্র: দর্শকদের কানে গান বসাতে হয়। সেটা না হলে কোনও ব্যান্ড টিকবে না। একটা সময় ছিল বাংলার এফএম চ্যানেল বাংলা গান শোনাত। যদিও ‘ভূমি’র গান কম শোনানো হত। কিন্তু অন্য অনেক শিল্পী, যেমন রূপঙ্কর বাগচী, শুভমিতা, মনোময় ভট্টাচার্যদের গান একচেটিয়া শোনা যেত। সেটা কিন্তু শ্রোতাদের কাছে পৌঁছতে সাহায্য করেছে। আমাদের গান যখন শ্রোতাদের মধ্যে চাহিদা তৈরি করল, তখন বাজানো শুরু হল। এখন অবশ্য ঠিক উল্টোটা। বাংলা গান শোনানোই হয় না, সর্ব ক্ষণ হিন্দি গান। আসলে সব ক’টা এফএম চ্যানেল বাংলা গানকে বয়কট করে দিয়েছে প্রায়। তীব্র প্রতিবাদ করছি এটার।
প্রশ্ন: এতগুলি বছরে বাংলা গানের শ্রোতার কতটা বদল দেখলেন?
সৌমিত্র: বাংলা গান একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। টিকে থাকাটাই বিরাট চ্যালেঞ্জ। বাংলায় বসে যদি সর্ব ক্ষণ ভোজপুরি, তামিল গান চালানো হয় তবে শ্রোতারা কী শুনবেন! আমি তাঁদের সমালোচনা করছি, তেমন নয়। আমাদের এখানে এত ভাল ভাল শিল্পী রয়েছেন, এত ধরনের কাজ হচ্ছে, কই সেটা শোনানো হচ্ছে না তো! একজন শিল্পী নিজের ঢাক নিজে না পেটালে গানটা শ্রোতার কানে পৌঁছতে পারছে না। এখান থেকে মুক্তির কী উপায়! জানি না।
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমের যুগে আপনারা টিকে থাকার জন্য প্রচারের তাগিদ অনুভব করেন?
সৌমিত্র: আমাদের সৌভাগ্য, আমরা এখন আর সেই পর্যায়ে নেই যে, সমাজমাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে হবে। আমরা এ সবের তোয়াক্কা করি না। কোথাও কোনও অনুষ্ঠানে করে আসার পর হয়তো কখনও তার কথা সমাজমাধ্যমে জানালাম, এমন হয়েছে। কারণ, আমাদের প্রচুর অনুরাগী জানতে চান আমরা কী করছি। তাঁদের জন্য যতটুকু প্রয়োজন করি। অনুরাগীরাই তো আমাদের তৈরি করেছেন।
প্রশ্ন: কলকাতায় ‘ব্যান্ড কালচার’ কি উঠে যাচ্ছে?
সৌমিত্র: অনুষ্ঠানে ডাক না পেলে অন্য বিকল্প পেশা বেছে নেওয়াটাই তো স্বাভাবিক। গানবাজনা করে যদি উপার্জন না হয়, তা হলে অন্য কিছু তো করতেই হবে। আমাদের ব্যান্ডের যে ক’জন সদস্য রয়েছেন, প্রত্যেকেরই ব্যান্ডের বাইরে অন্য পেশা রয়েছে।
প্রশ্ন: শুধু গান নিয়ে চর্চা করে ‘ভূমি’ ব্যান্ডের সদস্যদের পক্ষেও টিকে থাকা সম্ভব নয় তা হলে?
সৌমিত্র: পারব না, এমনটা নয়। তবে খানিকটা সমস্যার তো বটেই। আমার যেমন গান ছাড়া অন্য বিষয়েও আগ্রহ রয়েছে। আমি শিশুদের নিয়ে কাজ করছি, বই লিখি, সমাজসেবা করি।
প্রশ্ন: আপনি তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব ঘনিষ্ঠ, কতটা কাছ থেকে চেনেন?
সৌমিত্র: ওঁর কেরিয়ারের শুরুটা আমাদের বাড়ি থেকেই হয়েছিল, এটা বলাই যায়। আমার মা-বাবার সঙ্গে ওঁর খুবই ঘনিষ্ঠতা। ওঁদের খুব সম্মান করতেন দিদি। ১৯৮০ সাল থেকে আমাদের চেনাজানা। আমাকেও সেই সম্মানটা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশ্ন: এতগুলি বছর, এতটা কাছ থেকে দেখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিছু বদল চোখে পড়ল?
সৌমিত্র: যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। তবে এখন কাজের চাপটা অনেক বেশি, তাই দিদির প্রাণখোলা হাসিটা দেখতে পাই না আজকাল। এখন সে ভাবে কথাবার্তা হয় না, স্বাভাবিক কারণেই। তবু আমাকে উনি একটু আলাদা ভাবে স্নেহ করেন।
প্রশ্ন: আপনাকে নির্বাচনে দু’বার প্রার্থী করেছিলেন, তবে দু’বারই হেরে গিয়েছেন। খারাপ লাগেনি?
সৌমিত্র: আমি ভাত খাচ্ছি। সেই সময় দিদি ফোন করে বললেন, প্রার্থী করছেন। ২০১৪ সাল। তখন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘দুয়ারে সরকার’— কোনও প্রকল্পই ছিল না। তাই খুব কঠিন হয়ে যায় জেতা। আর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মৌসম বেনজির নুর। মায়ের সুবাদে বরকত জেঠুর (বরকত গনি খান চৌধুরী) পরিবারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ দিনের আত্মীয়তা। রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝিনি, হেরে গিয়েছি। তবে এখন ভাবি বেঁচে গিয়েছি।
প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললে আবার ভোটে দাঁড়াবেন?
সৌমিত্র: দিদিকে না করা যায় না।
প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এতটাই আন্তরিক?
সৌমিত্র: আশির দশকের একটা ঘটনা বলি। আমি তখন কলেজে পড়ি। পাম অ্যাভিনিউয়ের কাছে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টি নামল। আমি আর দিদি একটি চায়ের দোকানে চা খেতে ঢুকলাম, পা গুটিয়ে বেঞ্চের উপর বসে আড্ডা দিতে দিতে কখন সময় কেটে গেল। হঠাৎ জল ঢুকে পড়ল দোকানে। আমরা বেরিয়ে বাস ধরে যে যার বাড়ি চলে গেলাম। সেই সময় আমার মা ছিলেন মহিলা প্রদেশ কংগ্রেসের সভানেত্রী। দিদি ছিলেন দলের সক্রিয় কর্মী। সেখান থেকেই আলাপ। একদম গোড়া থেকে কাজ করেছেন দিদি। ভীষণ মনোযোগী ছিলেন কাজের বিষয়ে। দিদি এমন একজন, যিনি মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেন সহজে। সুজাপুরের একটা ঘটনা বলি। মা (মঞ্জু রায়) সুজাপুরের দলীয় বৈঠকে গিয়ে দেখেন নেতারা কথা বলে যাচ্ছেন, এ দিকে বরকত গনি খান চৌধুরী ঝিমোচ্ছেন। তখন মা বরকত জেঠুকে বললেন, “একটা মেয়ে আছে, মমতা, ওকে মাইক দেব।” বরকত জেঠু আপত্তি করেননি। দু’মিনিট দিদির বক্তৃতা শোনার পর বরকত জেঠু বলেন, “এ তো কঠিন চেংড়ি (মালদার ভাষায়)।” তখন দিদির হাতে মাইক উঠলে চার-পাঁচ হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যেত।
প্রশ্ন: ‘ভূমি’র উত্তরসূরি কারা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ব্যান্ডের?
সৌমিত্র: আমার ছেলে আর্যেশ রয়েছে। আরও নতুন ছেলেমেয়ে আসছে।
প্রশ্ন: সুরজিৎ-সৌমিত্রের ‘ব্রেকআপ’ হয়েছে অনেক বছর হল। ২৫ বছরে কি এক হবেন তাঁরা?
সৌমিত্র: ফোন করলে কেউ যদি না ধরে, তা হলে আর কী করতে পারি! এই প্রসঙ্গে আর কথা বলতেই চাই না, খামোকা অন্য কাউকে বাড়তি প্রচার পাইয়ে দিতে চাই না।