বাপ্পি লাহিড়ির বাড়িতে একসঙ্গে বসে কত কত ম্যাচ দেখেছি ওয়ার্ল্ডকাপের সময়ে। ওঁর বাড়িকে নিজেদের বাড়িই মনে করতাম। ওঁর ড্রয়িং রুম যেন আমাদের ড্রয়িং রুম। বাপ্পিদার বাড়ি খাওয়া-দাওয়ার বাহার ছিল দেখার মতো। তবে হ্যাঁ, বাপ্পিদার খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম একেবারে আলাদা।
বাপ্পি লাহিড়িকে নিয়ে লিখলেন শিবাজী চট্টোপাধ্যায়
পাঁচ থেকে ছ’দিন আগে ফোন করেছিলাম বাপ্পিদাকে। ওঁর গলার অবস্থা খারাপ বলে খোঁজখবর নিতে চাইছিলাম। কিন্তু ফোন বেজে গেল। ধরলেন না তিনি। আজ সকালে জানলাম, তিনি নেই।
আমার সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল বাপ্পিদার। তাঁর সুরে বাংলা এবং হিন্দি, দুই ভাষার গানেই গেয়েছি। কত স্মৃতি!
বাপ্পিদার বাড়িতে একসঙ্গে বসে কত কত ম্যাচ দেখেছি ওয়ার্ল্ডকাপের সময়ে। ওঁর বাড়িকে নিজেদের বাড়িই মনে করতাম। ওঁর ড্রয়িং রুম যেন আমাদেরই ছিল। বাপ্পিদার বাড়ি খাওয়া-দাওয়ার বাহার ছিল দেখার মতো। তবে হ্যাঁ, বাপ্পিদার খাওয়া দাওয়ার নিয়ম একেবারে আলাদা। অনেক বেলায় ঘুম থেকে উঠে বিকেল নাগাদ ভাত খেতেন। কিন্তু রুপোর থালা ছাড়া ভাত মুখে তুলতেন না। এই কথাগুলি লিখতে লিখতে একটি মজার ঘটনা মনে পড়ল।
এক বার আমাদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন নৈশভোজের জন্য। সে দিন সন্ধ্যা থেকে রেকর্ডিংও ছিল। কাজ সেরে ওঁর বাড়ি ঢুকতে ঢুকতে রাত ৩টে বেজে গিয়েছিল। নৈশভোজ যখন শেষ হল, তখন ঘড়িতে প্রায় ভোর ৪টে। বাপ্পিদার জীবনে তা খুবই স্বাভাবিক।
খুব সংসারী মানুষ বাপ্পিদা। ছেলে, স্ত্রী, মা, বাবা, সবার যত্ন নিতেন। মুম্বইয়ে বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। বাপ্পিদা বেলা করে ঘুম থেকে উঠতেন বলে তাঁর অতিথিদের আপ্যায়ন করতেন বাপ্পিদার বাবা অপরেশ লাহিড়ি। তিনিও মজাদার আড্ডাবাজ লোক ছিলেন।
কলকাতায় এসে যে হোটেলেই উঠতেন, রাত্রিবেলায় হইহই করে দেখা করতে যেতাম আমরা বন্ধুরা। সেই মিষ্টি মানুষটি নেই আর। হইহই-ও বন্ধ।
(লেখক বিশিষ্ট গায়ক)