Bappi Lahiri Death

Bappi Lahiri Death: আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা গুণীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেঁধে ফেলি: বিক্রম ঘোষ

ইন্ডাস্ট্রি ভীষণ কঠোর। ছবি হিট হলে মাথায় তুলে নাচবে, না হলেই ‘অপয়া’ তকমা! আফশোস, বাপ্পিদা যদি একবারের জন্যও অ্যালবামের প্রয়োজনীয়তা বুঝতেন!

Advertisement

বিক্রম ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:১৪
Share:

বাপ্পি লাহিড়ির জীবন, কাজ নিয়ে কলম ধরলেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ।

খুবই উচ্চ মানের সুরকার ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। বলিউডে ডিস্কো ঘরানার জনক। তাঁর এই অবদান সেই সময়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। বিশেষত তাঁর সুর দেওয়া গানে ইলেকট্রনিকার ধারা খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সুরের দুনিয়ায়, গানের জগতে নতুনত্ব আনায় বাকিদের মতো আমিও ওর সুরের প্রেমে পড়েছিলাম অনায়াসেই। সমস্ত গানে যৌবনের বন্দনা। অদ্ভুত তার ছন্দ। আকর্ষণীয় মাদকতা। সব মিলিয়ে তাঁর প্রতিটি গান যেন অনন্তযৌবনা! সব সময়ে ভীষণ রঙিন।

Advertisement

এই বাপ্পিদারই আর এক অস্ত্র মেলোডি। সেই অস্ত্রে শান দিয়ে তিনি অসংখ্য কালজয়ী গানেরও জন্ম দিয়েছেন। যেমন, ‘চলতে চলতে’ ছবির গান। এ রকম বহু ছবি আছে। ওঁর ‘শরাবি’র ‘মঞ্জিলে আপনি যাগা হ্যায়’ গেয়েই সম্ভবত রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন কিশোর কুমার। ওই গানের সুর মেলোডি, বেদনায় মাখামাখি। কেউ কোনও দিন ভুলতে পারবে না সেই গান। একই ভাবে আজও আমার কানে বাজে ‘অ্যায়তবার’ ছবির গান। ভূপিন্দর সিংহ, আশা ভোঁসলে একটি গজল গেয়েছিলেন। অসাধারণ তাঁর সুর। অনেকেই জানেন না, বাপ্পি লাহিড়ির একাধিক গজল আঙ্গিকের গানও রয়েছে। আসলে, নানা ধরনের গান বাপ্পিদা পরীক্ষামূলক ভাবেই হয়তো তৈরি করেছিলেন। যেগুলো নিজগুণে যুগোত্তীর্ণ হয়েছে।

আর ছিল ওঁর নিজস্ব তালজ্ঞান। ছোট থেকে তবলা শিখেছিলেন। ফলে, তালবাদ্যে মাস্টারপিস। বাপ্পিদার আগে এই পথের পথিক পঞ্চমদা অর্থাৎ রাহুল দেববর্মণ। তিনিও তবলা, সরোদ শিখেছিলেন। দারুণ বাজাতে পারতেন। ঠিক সে ভাবে দু’জনের কণ্ঠস্বরই ভীষণ অন্য রকম। সকলের চেয়ে আলাদা। এই ধরনের গলা সচরাচর শোনা যায় না। নিজেদের সুরে ওঁদের গাওয়া অনেক গান জনপ্রিয়ও হয়েছে। পঞ্চমদাকে নিয়ে, তাঁর কাজ নিয়ে গত ২৭-২৮ বছর ধরে বহু আলোচনা হয়েছে। এ বার বাপ্পিদার পালা।

Advertisement

তবলা শিখেছিলেন বলেই বাপ্পিদার প্রতিটি গানে ছন্দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আবারও ‘শরাবি’র উদাহরণ দিই। ‘মুঝে নও লখা মাঙ্গা দে রে’ গানের তালের বৈশিষ্ট্য কোনও দিন খেয়াল করেছেন? ওই গানে তবলা তরঙ্গা ব্যবহার করেছিলেন বাপ্পিদা। যা শচীন দেববর্মণ ছয়ের দশকে ‘জুয়েল থিফ’-এ করেছিলেন। কিন্তু এই ধরনের বাণিজ্যিক ছবিতে চট করে তালের এই ব্যবহার দেখা যায় না। পঞ্চমদার মতোই গানের অ্যারেঞ্জমেন্টেও ওঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। বিশেষ করে শব্দপ্রক্ষেপ বা শব্দগ্রহণের ক্ষেত্রে। যা এখনকার সুরকারদের মধ্যে দেখা যায় না বললেই চলে। একমাত্র এ আর রহমানের কাজে কিছুটা হলেও আছে।

এ বার বলি ব্যক্তি বাপ্পিদার কথা। আমার সঙ্গে ভীষণ ভাব ছিল এমন নয়। মুম্বইয়ে গেলে দেখা হয়ে যেত। কখনও বিমান সফরেও। দেখলেই শিশুর মতো খুশি হয়ে উঠতেন। ভীষণ ইতিবাচক মন। সারাক্ষণ আনন্দে উচ্ছ্বল থাকতেন। আর সব বিষয়ে খুবই কৌতূহলী। দেখা হলেই জানতে চাইতেন, নতুন কী করছি? আমিও জানতে চাইতাম, দাদা নতুন কী করছেন। সেই সময়ে ‘ডার্টি পিকচার’-এর ‘‘উলালা উলালা’’ গানটি বানিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে শোনালেন। আসলে বাপ্পিদা প্রজন্মের স্পন্দন বুঝতে পারতেন।

তার পরেও ওঁর মতো স্রষ্টা একটি যুগেই আবদ্ধ। এটা আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য, আমরা গুণীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেঁধে ফেলি। যেমন, রাহুল দেববর্মণের যুগ, বাপ্পিদার যুগ। হলিউডে কিন্তু এই ধারা নেই। যে যত দিন পারেন, তত দিন তাঁর জমানা। আমাদের দেশে সেটা নয় বলেই পঞ্চমদা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে অস্তমিত। বাপ্পিদাও গত কয়েক বছর ধরে সে ভাবে সক্রিয় ছিলেন না। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে তাই শিল্পীদের উচিত নিজস্ব অ্যালবাম করা। শুধুই ছবির সুর দিলে হবে না। তাঁদের কাজ আলাদা করে সংগ্রহে রাখবেন শ্রোতারা। সেই কাজে মিউজিক সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, ইন্ডাস্ট্রি ভীষণ কঠোর। পরপর পাঁচটি ছবি হিট হলে মাথায় তুলে নাচবে। না হলেই ‘অপয়া’ তকমা সেঁটে দেবে। তাই আমি ছবির পাশাপাশি অ্যালবামও তৈরি করি।

আফশোস, বাপ্পিদা যদি একবারের জন্যও অ্যালবামের প্রয়োজনীয়তা বুঝতেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement