প্রত্যাশা জাগিয়েও বলিউডে যে নায়িকাদের কেরিয়ার দীর্ঘ হয়নি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সলমা আগা। আশি ও নব্বই দশকের এই জনপ্রিয় নায়িকা সময়ের আগেই হারিয়ে যান ইন্ডাস্ট্রি থেকে।
সলমা আগার জন্ম ১৯৬৪ সালের ২৯ অক্টোবর। পাকিস্তানের করাচিতে। তাঁর বাবা লিয়াকত গুল আগা ছিলেন মূল্যবান পাথর ও অ্যান্টিক ব্যবসায়ী। ইরান থেকে তিনি উপাধি পেয়েছিলেন ‘আগা’। প্রাচীন পারস্যে এই উপাধি দেওয়া হত সম্পন্ন বণিকদের। জন্ম করাচিতে হলেও সালমার শৈশব ও কৈশোরের বড় অংশ কেটেছে লন্ডনে। ব্রিটিশ নাগরিকত্বও রয়েছে তাঁর।
সলমার দিদিমা আনোয়ারি বিবি ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের নায়িকা। তাঁর প্রথম স্বামী রফিক গঞ্জাভি ছিলেন সুরকার। মেয়ের জন্মের পরে রফিকের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় আনোয়ারি বাঈ বেগমের। তিনি বিয়ে করেন ব্যবসায়ী যুগলকিশোর মেহরাকে। আনোয়ারিকে বিয়ে করবেন বলে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মান্তরিত হন যুগলকিশোর। তাঁর নতুন নাম হয় আহমেদ সলমন।
বলিউডের বিখ্যাত কপূর পরিবারের দূর সম্পর্কের পরিজন ছিলেন যুগলকিশোর। কিন্তু ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার কারণে তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল কপূর পরিবার।
আশি ও নব্বইয়ের দশকের বলিউড নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সলমা। ১৯৮২ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘নিকাহ’। রাজ বব্বরের বিপরীতে এই ছবিতে সালমার অভিনয় প্রশংসিত হয়। এই ছবিতে প্লেব্যাক সিঙ্গারও ছিলেন তিনি। নায়িকা ও গায়িকা, দু’টি ভূমিকাতেই পুরস্কত হন সালমা আগা।
১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় মিঠুন চক্রবর্তী ও সলমা আগার ছবি ‘কসম প্যায়দা করনে ওয়ালে কি’। এই ছবিতে তাঁর গলায় ‘কাম ক্লোজার’ খুবই জনপ্রিয় হয়।
সলমার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ছবি হল ‘জঙ্গল কি বেটি’ এবং ‘মহাবীর’। ইন্ডাস্ট্রিতে সলমা ফিরিয়ে এনেছিলেন পুরনো ট্রেন্ড। নিজের সিনেমায় প্লেব্যাক-ও করতেন তিনি। কিন্তু বেশি দিন অভিনয় করেননি সলমা। ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যান এই নায়িকা-গায়িকা।
আশির দশকের শুরুতে লন্ডনের ব্যবসায়ী আয়াজ সিপ্রার সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পর্ক ছিল সলমা আগার। তবে তাঁদের সম্পর্ক বিয়েতে রূপান্তরিত হয়নি। প্রেম ভেঙে যাওয়ার কিছুদিন পরে সলমা বিয়ে করেন পাকিস্তানের অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজক জাভেদ শেখকে। কিন্তু তাঁদের বিয়ে ছিল স্বল্পস্থায়ী।
জাভেদের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে সলমা ১৯৮৯ সালে বিয়ে করেন পাকিস্তানের স্কোয়াশ প্রশিক্ষক এবং প্রাক্তন স্কোয়াশ খেলোয়াড় রেহমত খানকে। তাঁদের দুই সন্তান। মেয়ের নাম সাশা আগা। ছেলের নাম লিয়াকত আলি খান।
২০১০ সালে ভেঙে যায় সলমার দ্বিতীয় বিয়ে। পরের বছর তিনি বিয়ে করেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী মনজর খানকে। তিনি এখন দুবাইয়ে থাকেন। সলমা তাঁর মেয়ে সাশাকে নিয়ে থাকেন মুম্বইয়ে।
সলমার মেয়ে সাশা চেষ্টা করছেন বলিউডে পায়ের নীচে জমি মজবুত করার। ২০১৩ সালে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ‘ঔরঙ্গজেব’ ছবিতে। যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে এই ছবিতে সাশার বিপরীতে নায়ক ছিলেন অর্জুন কপূর।
ভারতে থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে যাতে তিনি জটিলতা এড়াতে পারেন, সে দিকে নজর রেখে কয়েক বছর আগে ‘ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া’ বা ওসিআই কার্ড দেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ নাগরিক সলমা আগাকে। (ছবি: আর্কাইভ ও ফেসবুক)