সিরিজের একটি দৃশ্যে টোটা।
চারিদিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের রমরমা। ছোট থেকেই যোগাসন করি আমি। আমি আশির দশকের কথা বলছি, যখন আমরা বড় হচ্ছি। তখন কলকাতা শহরে পাড়ার একটা বড় জায়গা ছিল। খেয়াল করে দেখেছি প্রতি পাড়ায় যোগাসনের জায়গা ছিল। বাঙালিদের মধ্যে যোগের একটা অভ্যেসও ছিল। সেরকম এক সময়, মা আমাকে ‘আয়রন ম্যান’ নীলমণি দাসের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি খুব দুরন্ত ছিলাম। মায়ের মনে হয়েছিল চঞ্চল ছেলের মন স্থির হবে যোগাভ্যাসে। মামারবাড়িতেও তখন শরীরচর্চার চল। আমিও ফুটবল খেলতাম। আট কি দশ বছর তখন। মা নীলমণি দাসের বই হাতে দিয়ে দেখতে বলেছিল। বিস্ময়ে পাতা ওলটাতে ওলটাতে ওই সব শরীরচর্চার ছবি দেখে খুব আগ্রহ জন্মাল আমার। আমিও কি এমন করে আসন করতে পারব? তখন থেকেই যোগের প্রতি আমার ভালবাসা। আজও যা চলছে।
নতুন ফেলুদার যোগ দিবস।
সত্যি কথা বলতে অভিনেতা হিসেবে আমার অনেক কিছুই নেই। আমি দুর্দান্ত অভিনেতা নই। খুব সুন্দর করে নিজের কেরিয়ার তৈরি করতে পেরেছি আমি, এমনটাও নয়। এগুলো বিনয়ের সঙ্গে বলছি তা একেবারেই নয়। এটাই সত্যি! কিন্তু এই যোগাভ্যাসই ইন্ডাস্ট্রিতে আমায় জায়গা করে দিয়েছে। এ আমার সব সময়ের বন্ধু। আমরা যে ধরনের কাজ করি সেখানে ওঠা-পড়া লেগেই আছে। সব সময় যে ভাল কাজ পাব এমনও নয়। মন শক্ত করে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকতে হয়। এই যে মনকে সবশে রাখা, এই কাজটা যোগাভ্যাস করলে সহজ হয়। আমার জীবনের ভারসাম্য, মানসিক শান্তি সব ওই অভ্যেসের কারণেই।
আমার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত চরিত্র ফেলুদা। সেই চরিত্রে অভিনয় করাও সম্ভব হয়েছে যোগের জন্যই। আমার সাত বছরের জন্মদিনে সত্যজিতের ‘বাদশাহী আংটি’ উপহার পাই। সেই দিন থেকে আমার ফেলুদা পড়া শুরু। দেখতাম ফেলুদার প্রত্যেক বইয়ে যোগাসনের কথা আছে। ফেলুদা তখন আমাদের ‘সুপারম্যান’। ফেলুদা যোগাসন করে, তাই আমাকেও করতে হবে। তখন যারা ফেলুদা পাগল, তারা ফেলুদা যা যা করে সেটাই করার চেষ্টা করত। কেউ তাই ফেলুদার থেকে যোগাসন নিয়েছিল, কেউ আবার ধূমপান।
এখন সপ্তাহে দু’দিন যোগাসনের জন্য বরাদ্দ। বাড়িতেই করি। শ্যুটে বাইরে গেলেও যোগাসন। আমাদের দেশের এই প্রাচীন পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের উপরে। শরীরের জন্য, আমাদের জীবনের জন্য, যা সবচেয়ে জরুরি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।