Srijit Mukherjee

Feludar Goyendagiri Review: সন্তোষ দত্তকে ফেরালেন অনির্বাণ, সৌমিত্রের জায়গা ধরে রাখলেন টোটা, লিখলেন সোহিনী

ফেলুদা, জটায়ু, তোপসে ফের ওটিটি পর্দায়। কেমন হল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি-দার্জিলিং জমজমাট’?

Advertisement

সোহিনী সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ১৯:১১
Share:

সিরিজের একটি দৃশ্যে টোটা, অনির্বাণ, কল্পন।

ফেলুদার গল্প, ফেলুদার ছবি মানেই তো আস্ত ছোটবেলা আর অফুরন্ত নস্টালজিয়া। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন ওয়েব সিরিজে নজর কাড়া সহজ নাকি? সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি- দার্জিলিং জমজমাট’ কিন্তু সেখানেই জিতে গিয়েছে। অনেক দিন পর একটা গোটা সিরিজের সবক’টা পর্ব একটানা দেখে ফেললাম। ফেলুদার গল্প, ছবি শেষ না করে ছাড়তে না পারার যে ট্র্যাডিশন, তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সৃজিতের নতুন সিরিজ সগৌরবে পাশ।

Advertisement

ফেলুদা বলতেই ঠিক কেমন ছবি মাথায় আসে আমাদের? ভীষণ স্মার্ট, যোগব্যায়াম করা পেটানো চেহারা, শিক্ষিত-বুদ্ধিদীপ্ত ঝলক, ঝকঝকে ইংরেজি, চোস্ত হিন্দি— তাই তো? টোটা রায়চৌধুরী এই সবক’টা দিকেই এক্কেবারে মানিয়ে গিয়েছে। এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে টানা অভিনয় করছে, ওর তরতাজা, ঝরঝরে প্রাণবন্ত চেহারাটা দেখে সেটা বোঝার জো আছে নাকি? এবং জটায়ু! অনির্বাণ চক্রবর্তী যে কী ভাল করেছে চরিত্রটা! এমনিতেই ও আমার ভীষণ প্রিয় অভিনেতা। এই সিরিজে ও যেন সব প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে। জটায়ু হয়ে ওর ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্তগুলো, বাঙালিয়ানা-কমেডির দুর্দান্ত মিশেল সবটাই এক কথায় অনবদ্য। কল্পন মিত্রকেও তোপসে হিসেবে বেশ লাগে। এই তিন জনের বয়সগুলোও একেবারে গল্পের মানানসই মনে হয়েছে পর্দায়।

তবে আমার মতে সবচেয়ে কঠিন ছিল দর্শকের মনে গেঁথে থাকা চরিত্রগুলোর জায়গায় নিজেদের বসানো। ছোটবেলা থেকে যে গল্প পড়ে বাঙালি বড় হয়েছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা সন্তোষ দত্ত যে চরিত্রগুলোর সমার্থক হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের জায়গায় মানিয়ে যাওয়া কি মুখের কথা? সৌমিত্রর জায়গায় পরে অন্যরা ফেলুদা হয়েছেন সফল ভাবে। টোটাও সেই জায়গাটা ধরে রেখেছেন নিজ গুণে। জটায়ু চরিত্রে এর আগে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁরাও নিঃসন্দেহে ভাল করেছিলেন। কিন্তু সন্তোষ দত্তের জটায়ুকে একেবারে ঠিকঠাক ফিরিয়ে আনাটা বোধহয় অনির্বাণ দারুণ ভাবে পেরেছেন। অন্তত আমার তো তা-ই মনে হয়েছে।

Advertisement

আর একটা ব্যাপার খুব ভাল লেগেছে। তা হল ডিটেলিং। সিরিজে অতীতের দার্জিলিংকে ফিরিয়ে এনেছেন পরিচালক। যে সময়ের গল্প, সেই সময়টাকে ধরেছেন ছোট্ট ছোট্ট জিনিসে। একেবারে নিখুঁত ভাবে। একটা দৃশ্যে যেমন স্যুটকেস বয়ে আনছে কয়েক জন। সবক’টা স্যুটকেসই পুরনো দিনের, সেই সময়কার মডেল। এগুলোই বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। ভাল লেগেছে ছবির আবহ। সত্যজিৎ রায়ের কাল্ট ফেলুদা মিউজিক তো আছেই। একাধিক বার আছে। তা ছাড়াও সুরের ব্যবহার, গল্পের মেজাজের সঙ্গে তার মানিয়ে যাওয়া ভীষণ ভাল।

অনেকে হয়তো বলতে পারেন সিরিজের সবটাই কি ভাল? কিছুই কি তবে খারাপ নেই? সবটাই একেবারে ত্রুটিহীন, নিখুঁত? এখানে একটাই কথা বলার, সব কিছুই কি সর্ব ক্ষণ আতসকাচের নীচে ফেলে দেখতে হবে? কোনও কাজ যদি ভাল লাগে, সেটা অকুণ্ঠচিত্তে বলতে ক্ষতি কী? সারা ক্ষণ ভুল বা খারাপের খোঁজ না-ই বা করলাম! কোভিডের ধাক্কা সামলে এই সবে টলিউড একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ভাল কাজ হলে খুঁত না খুঁজে বরং একটু প্রশংসা করি না আমরা? তাতে তো যাঁরা এত পরিশ্রম করে বিনোদনের রসদ জোগাচ্ছেন, তাঁদের একটু উদ্যম বাড়ে। ভাবুন না একটু এ ভাবে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement