সৌরভ পালোধী। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আর জি করের ঘটনায় ১৪ অগস্ট রাতের দখল নিচ্ছেন মহিলারা। এই মিছিলে শামিল হলেও, রাজনৈতিক রং বা দলীয় পতাকা যেন না থাকে, এমন দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু এই প্রতিবাদ কি সত্যিই ‘অরাজনৈতিক’? সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অভিনেতা তথা পরিচালক সৌরভ পালোধীও সমাজমাধ্যমে একই প্রশ্ন তুললেন।
আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান রাতের কলকাতার মিছিলের উদ্যোগকে তিনি কুর্নিশ জানান। কিন্তু এই মিছিল কী ভাবে অরাজনৈতিক হতে পারে! সৌরভ তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক আকার নিতে চলেছে। কিন্তু একদল মানুষ বারবার এই আন্দোলনকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা বার বার বলছেন, ‘এই মিছিলে রাজনীতি আনবেন না, এই মিছিল কারও বিরুদ্ধে নয়।’”
সৌরভ বলেন, “কিছু দিন আগে সকলে ফেসবুকে ‘বিচার চাই’ বলে একটা পোস্ট সবাই শেয়ার করলেন। কিন্তু এই বিচার কার কাছে চাই, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। অথবা আমরা জানি, কিন্তু বলব না। বিচার অবশ্যই চাই। আরজি কর এবং মহিলাদের সঙ্গে প্রতি দিন আরও যা যা ঘটছে, প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার চাই। কিন্তু কার কাছে বিচার চাইব? কার থেকে সুরাহা পাওয়ার আশা করব? অনেকে বলছেন এটি ‘অরাজনৈতিক মিছিল’। এই মন্তব্যেও কিন্তু চরম রাজনৈতিক গন্ধ রয়েছে। কারণ, এতে ব্যক্তিগত রাজনীতি ঘেঁটে যেতে পারে।”
রাজনীতি মানে শুধুই সিপিআইএম, বিজেপি, তৃণমূল নয়। সমাজনীতিও তো রাজনীতি, দাবি সৌরভের। অভিনেতা বলেন, “আমিও আজ মিছিলে থাকব। বিকেলের মিছিলেও থাকব। গত রাতেও আরজি করে মিছিলে ছিলাম। সমস্ত আর্জি ও মিছিলের পিছনের উদ্দেশ্য সব সঠিক। কিন্তু প্রতিবাদ কার বিরুদ্ধে সেটা স্পষ্ট না হলে এই মিছিলের কোনও মূল্য নেই।” মিছিলে দলীয় পতাকা আনার প্রসঙ্গেও কথা বলেন সৌরভ। তাঁর কথায়, “ভবিষ্যতে নিজেদের কাজ পাওয়া বা না পাওয়া নির্ভর করবে, এই ভেবে প্রতিবাদ করলে তার কোনও ভিত্তি নেই। আমি যদি একে স্বাধীন মিছিল মনে করি, তা হলে পতাকা না আনার অধিকার থাকলে, পতাকা আনারও অধিকার রয়েছে। আমার উপরে যদি চাপিয়ে দেওয়া হয় যে পতাকা আনা যাবে না, সেটাও তো চাপিয়ে দেওয়ার রাজনীতি। বলছি না, দলীয় পতাকা আনতেই হবে। কারও পক্ষ নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। শুধু কার বিপক্ষে এই প্রতিবাদ, সেটা সকলে স্পষ্ট করুন। না হলে তো শুধু এলাম, ছবি তুললাম, পাঁচটা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললাম এখানেই শেষ হয়ে যাবে।”
মিছিলের উদ্যোগের প্রশংসা করে সৌরভ বলেন, “কাল হয়তো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এই উদ্যোগ জায়গা করে নেবে। ভিড় করে ভয় পাওয়ানো জরুরি। কিন্তু কাকে ভয় দেখাতে চাইছি আমরা, সেটা স্পষ্ট করুন। সঠিক জায়গায় প্রশ্ন করুন।”
বাম সমর্থক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে সৌরভের। এমন ঘটনায় বিরোধী দলের ভূমিকা কী? প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, “সদ্য নির্বাচনের একটা ধাক্কা রয়েছে। আরজি করের উল্টো দিকে বাম নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা রোজ অবস্থান বিক্ষোভ করছেন। কিন্তু ফেসবুক ছাড়া এই খবর পৌঁছচ্ছে না মানুষের কাছে। অতএব এমন একটা কিছু ঘটাতে হবে, যা মানুষ জানতে পারবে। অর্থাৎ বিক্ষোভ আন্দোলনটাই করতে হবে। আমি সেটাই সঠিক বলে মনে করি। বামপন্থীরা আন্দোলন করছেন।”