কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
এ যে কতটা মর্মান্তিক ঘটনা, তা সত্যিই বলার অবকাশ রাখে না। শুধু এক জন চিকিৎসক হিসেবে নয়, এক জন নাগরিক হিসেবে এই ঘটনা আমার কাছে নজিরবিহীন। আমার নিজেরও তো মেয়ে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাই আমি শঙ্কিত ও ত্রস্ত হয়ে রয়েছি এই ঘটনায়। একই সঙ্গে এক জন চিকিৎসক হিসেবেও লজ্জিত ও বেদনাহত। এমন রাতের ডিউটি একসময়ে আমাদের এবং আমাদের বন্ধুবান্ধবksও করতে হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্য কর্মীদের নিয়েই তো একটা হাসপাতাল চলে। তাঁরাই যদি নিজেদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা না পান, এটা বিরাট দুঃখের বিষয়।
এখন একটাই দাবি, এই ঘটনার যেন নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। কোনও কিছু ধামাচাপা না দিয়ে যেন এই তদন্ত হয়। আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। এই তদন্ত যেন দ্রুত শেষ হয়। অপরাধীদের যেন দ্রুত চিহ্নিত করা যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে যে মহিলা ও ছাত্র-যুবরা পথে নেমেছেন, তাঁদের সঙ্গে আমি সহমত। আমি নিজেও পথে নামব এবং এর একটা বিহিত করেই ছাড়ব।
আর, ‘মেয়েটি ওই সময় হাসপাতালে কী করছিলেন’ জাতীয় কথা বার্তা যারা বলছে, আমি তাদেরও একই ভাবে বিরোধিতা করছি। ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’-এর মতো নিন্দাজনক ঘটনা আর হয় না। একটি মেয়ে কখন, কোথায় যাবে এবং কোন পোশাক পরে যাবে, সেটা অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তিনি এক জন স্বাধীন নাগরিক, স্বনির্ভর, কর দেন। তাই তিনি কী করবেন, অন্য কেউ বলতে পারে না। সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া। নিরাপত্তা দিতে না পারলে বুঝতে হবে, সরকার ব্যর্থ।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ আসার আগে কয়েকটি প্রশ্ন আছে। কে ঘটনাটা ঘটিয়েছে? এত সাহস তারা কোথায় পেল? এদের পিছনে কাদের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে? দ্বিতীয়ত, এই সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়োজন কেন হচ্ছে? অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলি উঠলেই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লেগেই যাচ্ছে। প্রতিবাদেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আসবেন। কিন্তু বিষয়টা হল, তাঁরা দলীয় পতাকা নিয়ে আসবেন কি না! আমার মনে হয় না, এখনই দলীয় পতাকা নিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে। এটা আন্দোলনের প্রথম ধাপ। তার পরে বৃহত্তম আন্দোলন হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেটা অবশ্যই রাজনৈতিক আন্দোলন হবে।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)