বিজেপির পদযাত্রায় তীব্র উত্তেজনা। —নিজস্ব চিত্র
একদিকে উঁচু গাড়ির উপর সওয়ার শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন সিংহ, মুকুল রায়রা। অন্যদিকে রাস্তার উপর যুযুধান শাসক শিবির। বুধবার বিকালে ধুন্ধুমার বেধে গেল আমহার্স্ট স্ট্রিটে। ভাঙচুর হল অর্জুন সিংহের কনভয়ের একটি গাড়ি। অভিযোগ উঠল শাসক তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের দিকে। পক্ষান্তরে, শাসক শিবিরের অভিযোগ, সিটি কলেজের মধ্যে ঢুকে বিজেপি-র লোকজন চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেছে। হাতাহাতি বেধে যায় দু’পক্ষের। ইট-পাটকেল পড়তে থাকে।
বিজেপি নেতাদের দাবি, বুধবার যে আমহার্স্ট স্ট্রিটে ওই রোড-শো হবে, তা আগে থেকেই পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা করেনি। উল্টে নীরব দর্শক হয়ে থেকে দাঁড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে মদত দিয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীবের কথায়, ‘‘পুলিশের ভূমিকা ন্যক্কারজনক। এগুলো সব ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হল!’’ অর্জুন বলেন, ‘‘মিছিল করার সময় ঝাঁটা-জুতো দেখানো হচ্ছে! এগুলো কি বাংলার সংস্কৃতি! এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোথাও মিছিল করলে তো বিজেপি-র লোকজন তাঁকেও ঝাঁটা-জুতো দেখাবে! সেটা কি ভাল হবে!’’
প্রসঙ্গত, বুধবার বিজেপি-র রোড-শো ছিল হৃষিকেশ পার্ক থেকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার (লেবুতলা পার্ক) পর্যন্ত। রোড-শো’র শেষে সভায় বিজেপি-তে যোগ দেন এলাকার তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ। যোগ দেন বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দা। ঘটনাচক্রে, বুধবার দুপুরে হুগলির সাহাগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তৃণমূলে যোগ দেন বাংলার ক্রিকেটদলের প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিজেপি-তে গেলেন অশোক। ওই সভায় শুভেন্দুরা ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং সল্টলেকের প্রাক্তন মেয়র তথা অধুনা বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্ত।
তবে সভার আগেই গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছিল। রোড-শো শুরুর সময়েই শুভেন্দুদের গাড়ি ঘিরে ধরে রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়। অভিযোগ, শাসক তৃমমূলের কর্মী-সমর্থকেরা ওই গাড়ি লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন। ঝাঁটাও দেখানো হয়। তাতেই ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। পাল্টা তেড়ে যান রোড-শোয়ে উপস্থিত বিজেপি সমর্থকেরা। দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ এবং বচসা বাধে। তার পরেই ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সেই ধস্তাধস্তিই গড়িয়ে যায় হাতাহাতিতে। গোটা এলাকায় প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দু’পক্ষই একে-অপরের দিকে লাঠিসোটা উঁচিয়ে তেড়ে যায়। একটা সময়ে দেখা যায়, বিজেপি সাংসদ অর্জুনের কনভয়ের একটি গাড়ির পিছনের কাচ ইটের ঘায়ে চুরমার হয়ে গিয়েছে।
শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে আসরে নামে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ওই বাহিনীর সদস্যরাই শুভেন্দু-রাজীব-মুকুলদের ঘিরে ধরে রোড-শো’র গাড়ি থেকে সভামঞ্চে নিয়ে যান। তবে ততক্ষণে আমহার্স্ট স্ট্রিট খানিকটা শান্ত হয়েছে। রোড-শো’র শেষে ওই সভামঞ্চেই হয় যোগদান পর্ব।