ফাইল চিত্র
বৃহস্পতিবার একই দিনে ভোট পিতাপুত্রের। তাই অন্যবারের মতো আর পাশে থেকে সাহায্য করতে পারবেন না ভোটগ্রহণের দিন। তাই সোমবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগর থেকে কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে এসে ছেলে হাপুনকে (মুকুলপুত্র শুভ্রাংশুর ডাকনাম) ভোট জয়ের টিপ্স দিয়ে গেলেন বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া পিতা মুকুল রায়। প্রতিবারই ভোটের আগে পুত্রকে এমন পরামর্শ দেন। কিন্তু এবার তিনি নিজেও ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ। ২০ বছর আগে ২০০১ সালে জগদ্দল বিধানসভায় ভোটে লড়াই করে ফরওয়ার্ড ব্লকের হরিপদ বিশ্বাসের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মুকুল। ২০ বছর পর তিনি বিজেপি-র হয়ে সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধেই যুযুধান।
এক দশক তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন মুকুল। ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তার মধ্যে ছিল রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরও। এখন তিনি বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহসভাপতি। পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর উত্তর আসনে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বীজপুর আসনে আবার প্রার্থী হয়েছেন তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু। বৃহস্পতিবার পিতাপুত্র একইদিনে অবতীর্ণ ভোটের ময়দানে। প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকেই বীজপুরের বিধায়ক মুকুলপুত্র। কিন্তু এবার তাঁর লড়াই ভিন্ন দলে মর্যাদা পাওয়ার। সম্ভবত সে কারণেই সোমবার সন্ধ্যায় বিধায়ক পুত্রকে শেষ মুহূর্তের পরামর্শ দিতে কৃষ্ণনগর থেকে কাঁচরাপাড়ার ঘটক রোডের বাড়িতে এসেছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বাড়িতেই গভীর রাত পর্যন্ত ভোটের প্রস্তুতি তথা পরিচালনা নিয়ে পুত্রের সঙ্গে বৈঠক হয় পিতার। ভোটের আগে বা পরে বা ভোট চলাকালীন করণীয় যাবতীয় কাজ প্রসঙ্গে পুত্রের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাস প্রয়াত হওয়ার পর বাংলার রাজনীতির ‘চাণক্য’ মুকুলকেই বলা হয়। তৃণমূলের থাকাকালীন লোকসভা থেকে রাজ্যসভা, পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা— ভোটযুদ্ধ জয়ের চাবিকাঠি থাকত তাঁর কাছেই। সময় বদলেছে। বদলেছে মুকুলের রাজনৈতিক অবস্থানও। ২০১৭ সালে বিজেপি-তে যোগ দিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপি-কে চমকপ্রদ সাফল্য এনে দিয়েছিলেন মুকুল। বাংলার ভোট রাজনীতির এমন একজন কুশীলব যে নিজের পুত্রের হয়ে ভোটের ঘুঁটি সাজাবেন, তাতে আশ্চর্যের কিছু দেখছেন না রাজনীতির কারবারিরা। এক মুকুল-ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘কৃষ্ণনগর উত্তরে নিজের লড়াইয়ে চেয়ে দাদা বেশি চিন্তিত হাপুনকে নিয়ে। কারণ, এতদিন ওঁর ভোটের দিন দাদার নজর থাকত বীজপুরেই। বহুক্ষেত্রে নিজে বীজপুরে থেকে ভোট পরিচালনা করেছিলেন। এবার আর তেমন হচ্ছে না। নিজের ভোট নিয়েও ব্যস্ত থাকতে হবে দাদাকে। তাই আগে থেকেই ছেলেকে পরামর্শ দিয়ে এলেন।’’ যদিও মুকুল-তনয়ের দাবি, বাবার সঙ্গে তাঁর নির্বাচন নিয়ে মুখওমুখি কোনও আলোচনা হয়নি। তাঁর দাবি, ‘‘বাবার সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি! ফোনে কথা হয়েছে শুধু।’’
তবে রায় পরিবার সূত্রের খবর, পুত্রকে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি স্ত্রী, নাতি ও নাতনির সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ সেরে মঙ্গলবার বিকেলে কাঁচরাপাড়ার বাড়ি থেকে কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান মুকুল। ফেরার কথা একেবারে ভোট সেরে। ততক্ষণে ভোটপর্ব সাঙ্গ হয়ে যাবে বীজপুরেও। মুকুলের প্রয়াত পিতার নাম যুগলনাথ রায়। পিতার নামানুসারেই কাঁচরাপাড়ার বাড়ির নাম রাখা হয়েছে ‘যুগল ভবন’। এখন দেখার, কাঁচরাপাড়ার ‘যুগল ভবন’-এর বৈঠকের রসায়নে বীজপুর এবং কৃষ্ণনগরর উত্তরের যুগল আসনে বৃহস্পতিবার পিতাপুত্রের ‘যুগলবন্দি’ দেখা যায় কি না।