বুকে মোদীর ছবি। মুখে নেই মাস্ক। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে বিধান রায়ের গড়া কল্যাণী শিল্পাঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত করা আর এক দিকে মমতা সরকারকে আক্রমণ। এই কৌশলেই কল্যাণীর ভাবাবেগ ছুঁতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী।
কল্যাণীতে সতীমাতার পীঠস্থানের জমি বেদখল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে মোদী বলেন, “সতীমাতার পবিত্র পীঠস্থান, সেই পীঠস্থানের জায়গাও ছাড়েনি তৃণমূল। এটাই দিদির রিপোর্ট কার্ড। দিদির দুর্নীতির জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায়ের পরিকল্পনা আজ পূরণ হয়নি। কল্যাণীকে আধুনিক বাংলার মডেল বানাতে চেয়েছিলেন এঁরা। কিন্তু দিদির দুর্নীতির জন্য আজ সেই পরিকল্পনা শতবর্ষ পিছিয়ে গিয়েছে।”
মোদী অভিযোগ করেন, “দিদি বলেছিলেন, কল্যাণীকে ফিল্মসিটি বানাবেন। কিন্তু তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চালিয়ে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত আর পুরসভাকে তৃণমূল নিজের দফতর বানিয়ে ফেলেছে। হারার ভয়ে পুরভোট করায়নি।” তাঁর চাঁচাছোলা আক্রমণ, “এখানকার মানুষ আমার চেয়ে বেশি জানে। বিল্ডিং প্ল্যান, জলের কানেকশন, এনওসি প্রত্যেকটার জন্য কাটমানি নিয়েছে। আপনাদের ঘরে জল আসছে না, কারণ জল মাফিয়াদের হাতে। এই অবস্থা শুধু কল্যাণীর নয়, সারা বাংলার একই অবস্থা।”
মোদীর প্রতিশ্রুতি, “বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার পরিস্থিতি বদলের জন্য, আপনাদের জন্য কাজ করবে। আমরা কল্যাণী শিল্পশহরের পুনর্নির্মাণ করব। আধুনিক শহর হিসাবে গড়ে তুলব। কল্যাণীকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট হিসাবে গড়ে তুলব। বাংলার বিজেপির ইস্তাহারে, সংকল্পপত্রেও তা বলা হয়েছে। কল্যাণী ও তার আশপাশের এলাকাকে আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করব। সেখানে আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির কথা বলা হচ্ছে।”
কল্যাণীকে মেট্রো নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার কথাও বলেন মোদী। তাঁর দাবি, “যেখানে যেখানে বিজেপি সরকার আছে, মেট্রোর পাশাপাশি গণপরিবহণকে আধুনিক করা হয়েছে। কল্যাণীকে মেট্রো নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। সেটা হলে এখানকার মানুষের জীবনযাপন সহজ হয়ে যাবে। এই জায়গা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাব। পশ্চিমবাংলায় প্রথম এমসও কল্যাণীতে।” মোদীর কটাক্ষ, মমতা এমসের সঙ্গে কল্যাণী স্টেশনকে যুক্ত করার কাজও করে উঠতে পারেননি।
মোদীর প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “যে ভাবে বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি দিয়েছেন, যে ভাবে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন, তেমন ভাবেই কল্যাণীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়ে গেলেন। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা উচিত।” তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলছেন, “দেশটাকে কয়েক জন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা ছাড়া উনি আর কিছুই করেননি। আগে পেট্রল, ডিজেল, গ্যাস আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমান, তার পর উন্নয়নের কথা বলবেন! যে উন্নয়ন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তার পর ওঁদের মুখে কিছুই মানায় না।”