Movie Review

ভাগ্যলক্ষ্মী: বাজেটের দৈন্য বা রোমাঞ্চের ভাটা থেকে চোখ সরিয়ে নিতে পারে অভিনয়ের গুণ

ছবি দেখতে দেখতে বাজেটের স্বল্পতা চোখে পড়ে। পরিচালককে সাধারণ ড্রয়িং রুমে পুলিশের বড় কর্তার অফিস বানাতে হয়। সে সমস্ত দৈন্য ঢেকে দেয় এক অভিনেতার হাতযশ।

Advertisement

অময় দেব রায়

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৫
Share:

মৈনাক ভৌমিকের ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’তে ঋত্বিক চক্রবর্তী ও শোলাঙ্কি রায়। ছবি: সংগৃহীত।

ধুলো জমা জানালার কাচ ভেদ করে আলো আসে ছাপোষা ডাইনিং টেবিলে! সত্য আর কাবেরী সেরে নেয় প্রাতরাশ— ডিম পোচ আর পাউরুটি। গৃহকর্ম সহায়িকা না এলে রান্না, বাসন ধোয়া নিয়ে সকাল সকাল ঝামেলা হয় একপ্রস্ত। সত্য অফিস যায়। সংবাদপত্রের অফিস। শহরের নামী রাজনীতিবিদের চোরাকারবারের খবর করে তাক লাগিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়! কিন্তু সত্যের আর খবর করা হয় না। উল্টে কপালে জোটে ঊর্ধ্বতনের ধাতানি। দিনের শেষে বন্ধু আর বন্ধুর বৌয়ের বিদেশ ভ্রমণ, ব্যাঙ্ক ব্যাল্যান্স, ছেলেকে ভাল স্কুলে ভর্তির ঘ্যানঘ্যান ক্লান্তি বাড়ায়!

Advertisement

বৈচিত্রহীন দৈনন্দিন জীবন, রোমাঞ্চহীন দিন গুজরান। হয়তো এ ভাবেই কেটে যেতে পারত সত্য আর কাবেরীর মধ্যবিত্ত প্রাত্যহিক দাম্পত্য। এক সময় আলো কমে আসত চোখে। ঝুঁকে পড়ত মেরুদণ্ড। দেরাজের চাবির গোছা সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে কুশায়ায় হাঁটা লাগাতে পারতেন বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু কোথায় কী! সত্য আর কাবেরীর জীবনে হঠাৎ হাজির এক অচেনা অতিথি। ম্যাজিক শোয়ের মতো পর্দা সরে যায়। কোন জাদুবলে রোমাঞ্চ আর দুর্ভাবনা আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে নেয় দম্পতি। শুরু হয় সাপ-লুডোর গুটি চালাচালি। একের পর এক খুন জখম। তাড়া তাড়া নোট। মোজাইক মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত! কোদাল চালিয়ে লাশ চালান! পুলিশ, রাজনীতিবিদ— লাল, নীলের ডার্ক হিউমার! একের পর এক মোচড়।

ছবির একটি দৃশ্যে সাজানো সংসারে প্রতিচ্ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ছবি দেখতে দেখতে বাজেটের স্বল্পতা চোখে পড়ে। পরিচালককে সাধারণ ড্রয়িং রুমে পুলিশের বড় কর্তার অফিস বানাতে হয়। সে সমস্ত দৈন্য ঢেকে দেয় এক অভিনেতার হাতযশ। এক একটি ক্লোজ় শটে সুজন নীলের ফ্যাচফেচে হাসি, লোকনাথের চাহনি, বাড়ি ফেরার পথে আরও এক বার চোখের সামনে ভেসে উঠতে বাধ্য। গাড়িতে দু’বার সুটকেস, মালপত্র তোলার দৃশ্যে অভিনয়ের সূক্ষ্ম পার্থক্যে ম্যাজিক তৈরি করেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। তিনি শীতের সকালে ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দুর মতো সুন্দর। যত দেখি তত খিদে বেড়ে যায়। শোলাঙ্কিও যেন হুবহু পাশের পাড়ার কাবেরী।

Advertisement

প্রশ্ন উঠতেই পারে পুলিশকে ক্লু দেবেন বলেই কি গাঙ্গুলি দম্পতি পাচার করা বাক্সপ্যাটরায় টেডিবেয়ার রেখে দিলেন? কিংবা সত্য-কাবেরীর কাণ্ডকারখানা আদৌ কতটা বাস্তবোচিত?

সে সব প্রশ্ন আজ তোলা থাক! কারণ মৈনাক ভৌমিক আর একটি ‘একান্তবর্তী’ বা ‘চিনি’ বানাননি! তিনি ‘আমরা’, ‘মাছ মিষ্টি মোরে’ ফিরেছেন! পর্দার নেপথ্যে বার বার ছলকে উঠেছে স্ট্রিট স্মার্ট মৈনাক! ক্যামেরা, আলো, অভিনয় আর পরিচালকের মুনশিয়ানা যে আর্থিক দৈন্য ঢেকে দিতে পারে তার প্রমাণ ভাগ্যলক্ষ্মী! যা আগামী দিনে মৈনাকের ঘরে ভাগ্য এবং লক্ষ্মী দুইয়ের পথ প্রশস্ত করতেই পারে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement