গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করল নির্বাচন কমিশন। সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত কোনও রকমের নির্বাচনী প্রচার করতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী। কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্ররোচনামূলক বক্তৃতার অভিযোগে মমতাকে পাঠানো নোটিসের জবাবে তারা সন্তুষ্ট নয়। সে কারণেই ২৪ ঘণ্টার এই নিষেধাজ্ঞা। কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর মমতা টুইট করে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিনি এর প্রতিবাদে গাঁধী মূর্তির নীচে ধর্নায় বসবেন।
এর ফলে মমতার মঙ্গলবারের সমস্ত প্রচার কর্মসূচি বাতিল হল। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে মঙ্গলবার বারাসত, বিধাননগর, হরিণঘাটা ও কৃষ্ণগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করার কথা ছিল। শনিবার কোচবিহারের শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যুর পরে রবিবার সেখানে যাবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সেই ঘোষণার পরেই কমিশন ৭২ ঘণ্টার জন্য যে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের শীতলখুচিতে যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পরে মমতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা। তৃণমূলের বক্তব্য, গোটাটাই হচ্ছে বিজেপি-র নির্দেশে। কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞার কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষ এর জবাব দেবে। পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন বিজেপি-র শাখা সংগঠন। ভোটের বাক্সে এর জবাব দেবে মানুষ।’’ দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘এটা গণতন্ত্রের পক্ষে কালো দিন।’’
কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ভোট প্রচারে নিষেধাজ্ঞার নজির অবশ্য নতুন নয়। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে ৭২ ঘণ্টার জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রচারে নিষিদ্ধ হয়েছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী, কংগ্রেসের নভজ্যোৎ সিংহ সিধু, ডিএমকে নেতা এ রাজার প্রচার নিষিদ্ধ করেছে কমিশন। অসমের বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রচারেও অতীতে নিষেদ্ধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন।
গত ৩ এপ্রিল মমতা হুগলির তারকেশ্বরের সভা থেকে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর আব্বাস সিদ্দিকির নাম না করে মন্তব্য করেন। তার পরেই উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হতে দেবেন না। বিজেপি এলে মনে রাখবেন সমূহ বিপদ, সবচেয়ে বেশি আপনাদের।’’ কমিশনের যুক্তি, ধর্ম বা জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী তাঁর প্রার্থীপদ খারিজও করা যেতে পারে। তা নিয়েই নোটিস পাঠায় কমিশন।
এর পর কোচবিহারের জনসভা থেকেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে একহাত নেন তৃণমূল নেত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘নির্দেশে’ই সিআরপিএফ-এর একাংশ বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘সিআরপিএফ যদি গন্ডগোল করে, মেয়েদের একটা দল মিলে ওদের ঘেরাও করে রাখবেন। আর একটা দল ভোট দিতে যাবেন। শুধু ঘেরাও করে রাখলে ভোট দেওয়া হবে না। তাই ভোট নষ্ট করবেন না। ৫ জন ঘেরাও করবেন। ৫ জন ভোট দেবেন।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার মন্তব্যে এর আগে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং কোচবিহারের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিল কমিশন। তার জন্য মমতাকেও নোটিস পাঠানো হয়।
গত শনিবারই কমিশনকে সেই নোটিসের জবাব দেন মমতা। কেন্দ্রীয় বাহিনী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো শো-কজ নোটিসের জবাব দেন তিনি। শনিবার কমিশনে পাঠানো জবাবে তৃণমূলনেত্রী লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ)-র প্রতি আমার সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে। দেশের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তায় তাদের অবদান খুব উঁচুতে’।
এর আগে মমতাকে দু’টি নোটিস পাঠিয়েছিল কমিশন। তারকেশ্বরে গত ৩ এপ্রিল মমতা বিধিভাঙা মন্তব্য করেছেন বলে কমিশন একটি চিঠিতে জানিয়েছিল। এর পরে একটি জনসভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ১০ বার শো-কজ করেও লাভ নেই। একই জবাব দেব।’’ কমিশনের অভিযোগ প্রসঙ্গে পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মুসলিমদের যাঁরা পাকিস্তানি বলেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ক’টা অভিযোগ হয়েছে? খালি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ?’’ এর পর শুভেন্দু অধিকারীকেও নোটিস পাঠায় কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ এবং ৭ এপ্রিল প্রচার সভা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে মন্তব্যের জেরেও নোটিস পাঠানো হয় মমতাকে।