বহরমপুরে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তীর সমর্থনে সভায় অধীর চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
শীতলখুচির ঘটনা নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হবে না, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। রাজ্য সরকার কেন তাঁদের গ্রেফতার করছে না সেই প্রসঙ্গ তুলে সোমবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘দুর্বল’ বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারকে ‘কাপুরুষ’ বলেও কটাক্ষ করেছেন অধীর। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারে কমিশনের ২৪ ঘণ্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়েও মমতাকে কটাক্ষ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা নেই মমতার।
সোমবার বহরমপুরে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তীর সমর্থনে সভা করেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-র যে সমস্ত নেতারা বড় বড় কথা বলছেন, ৪টের জায়গায় ৮টা গুলি করবে... দিদিমণির পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছে না কেন? রাজ্যে সরকার আপনার। রাজ্যের পুলিশ আপনার। দিদির যদি হিম্মত থাকে তা হলে গ্রেফতার করুন।’’ এর পরেই অধীর মন্তব্য করেন, ‘‘যাঁরা রাজনীতি করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন তাঁদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এক জন। বিজেপি-ও ওই দলে। দিদিমণি বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছেন না। দিদি এত দুর্বল কেন? কংগ্রেস সরকারে থাকলে এত ক্ষণ সব নেতাকে জেলে ঢুকিয়ে দিতাম।’’ রাজ্য সরকারকে ‘কাপুরুষ’ ও ‘দুর্বল’ বলেও মন্তব্য করেন অধীর। প্রসঙ্গত, গত শনিবার শীতলখুচিতে ভোটপ্রক্রিয়া চলাকালীন ৫ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে ৪ জন নিহত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিন্হা এ প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সে প্রসঙ্গ তুলেই অধীর তাঁদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন।
একই সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন কমিশনের দিকেও আঙুল তুলেছেন। তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন করাতে কমিশন ব্যর্থ। অধীর দাবি তুলেছেন, শীতলখুচিতে যে কারণে গুলি চলেছে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। তাঁর কথায়, ‘‘কেন বাংলার ৫ নাগরিকের অকারণে মৃত্যু হল? যারা দোষী তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। সিবিআই তদন্ত হোক।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে অধীর বলেন, ‘‘এই সুযোগে তিনি ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। বাংলার মানুষ মারা যাচ্ছে। তাঁদের জাত, ধর্ম আমাদের দেখার দরকার নেই। এই মৃত্যু আমাদের কাছে অনেক দুঃখের, যন্ত্রণার, বেদনার। তাঁদের জীবন হয়তো ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু যারা দোষী, তাদের শাস্তির দাবি করছি।’’
নির্বাচন কমিশন মমতার প্রচার কর্মসূচিতে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সোমবার। সে প্রসঙ্গে অধীর বলেন, ‘‘এক জন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এর থেকে বড় অপমান আর কিছুতে নেই। মুখ্যমন্ত্রীর যে যোগ্যতা নেই, এটা তার প্রমাণ। বাংলায় আজ উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে রাজনীতি করবেন না।’’
তবে অধীরের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার কটাক্ষ, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বোধ হয় মনে নেই, রাজ্যে নির্বাচন চলছে। আর নির্বাচনের সময় পুলিশ-প্রশাসন সবটাই কমিশনের আওতায় থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর আওতায় নয়।’’