এই দুই লিফলেট নিয়েই সরগরম পশ্চিম মেদিনীপুর। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
দু’টি ‘লিফলেট’ নিয়ে সরগরম পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই বিধানসভা কেন্দ্র চন্দ্রকোণা এবং কেশপুর। আর তা নিয়ে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে তুঙ্গে তৃণমূল-বিজেপির ভোট তরজা।
বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ভোট পশ্চিম মেদিনীপুরের ন’টি কেন্দ্রে। তার মধ্যে রয়েছে চন্দ্রকোনা এবং কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন বুধবার রাতেই ওই লিফলেট ছড়িয়ে দেওয়া দুই বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরতলি এলাকায়।
দুই লিফলেটের বয়ান মোটামুটি এক— সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে ভাল ফল করতে চলেছে তৃণমূল। তবে ‘লিফলেট’ নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ সেই বয়ান নয়। বরং সেই বয়ানের প্রচারকারী হিসাবে দাবি করা দুই সংগঠনের নাম। দু’টি লিফলেটের একটিতে রাজ্য পুলিশের অন্যটিতে আরএসএস-এর প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও মেদিনীপুর জেলা পুলিশ এবং সঙ্ঘ পরিবারের তরফে বিজেপি বৃহস্পতিবারই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এমন কোনও প্রচারপত্র বিলি করেনি তারা। তবে তৃণমূলের অভিযোগ, আড়ালে থেকে আসলে বিজেপি-ই এ সব করিয়ে তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে।
দু’টি প্রচারপত্রেই জেলার দুই বিধানসভা কেন্দ্রের সমীক্ষাভিত্তিক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের প্রতীক দেওয়া লিফলেটের বয়ান অনুযায়ী, ‘১১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১৪-১৫ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।’ আরএসএসের লিফলেটেও চন্দ্রকোণা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র থেকে এগিয়ে রাখা হয়েছে তৃণমূলকে। এমনকি জেলায় বিজেপির খারাপ ফলের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। বলা হয়েছে, বিজেপির এই দুই নেতার সঙ্গে জনতার মতামত মিলছে না বলেই রাজ্যে বিজেপি-র এই দুরবস্থা। আরএসএসের নাম দেওয়া লিফলেটেও বলা হয়েছে, সমীক্ষার ভিত্তিতেই এই তথ্য এসেছে তাদের হাতে। তবে তাদের সমীক্ষার সময় ১৫-২৫ মার্চ। দু’টি লিফলেটেই অবশ্য রয়েছে ভোটের দু’দিন আগের তারিখ। ২৯ মার্চ।
লিফলেট বিতর্কে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের তরফে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের প্রতীক জাল করে এই ধরনের মিথ্যে প্রচার গুরুতর অপরাধ। দোষীরা দ্রুত শাস্তি পাবে। পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের কথায়, ‘‘দু’ধরনের লিফলেট উদ্ধার হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযোগও জমা পড়েছে। দুটি ঘটনায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’
গ্রামের রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে বিতর্কিত ওই লিফলেট। নিজস্ব চিত্র।
লিফলেট নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিজেপি জেলা সভাপতি সৌমেন তিওয়ারি। তাঁর অভিযোগ, নারায়ণগড়-সহ জেলার বিধানসভা এলাকাগুলিতে পুলিশের প্রতীক ও নাম ব্যবহার করে লিফলেট বিলি করেছে আসলে তৃণমূল। এর আগে তারা সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করার চেষ্টা করছিল। না পেরে এখন লিফলেট বানিয়ে বিলি করছে। আরএসএস-এর লিফলেট প্রসঙ্গে সৌমেনের বক্তব্য, এই ধরনের কাজ সঙ্ঘ করতে পারে না। এর পেছনেও তৃণমূলেরই কারসাজি রয়েছে।
তবে বিজেপির ওই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘প্রার্থী হওয়ায় এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এ সবের সময় নেই। পুলিশের নাম ব্যবহার করে লিফলেট বিলি করার প্রয়োজনও নেই তৃণমূলের। বিজেপি নোংরা রাজনীতির জন্য এ সব করে বেড়াচ্ছে। আসলে মানুষ ওদের মিথ্যে ধরে ফেলেছে। তাই ওদের এত কিছু করতে হচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এমনই আরও একটি ভুয়ো প্রচারের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রশান্ত কিশোরের ভোট সমীক্ষা ফাঁস হয়েছে বলে একটি পরিসংখ্যান সামনে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে সংস্থার নামে ওই সমীক্ষাপত্রটি প্রকাশ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল, সেই সংস্থাই বৃহস্পতিবার টুইটারে একটি বিবৃতি দিয়ে জানায় পুরোটাই বিজেপির মিথ্যে অপপ্রচার।