ফাইল চিত্র।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপি যখন সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে, তখন রাজ্য জুড়ে নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ ‘অস্বস্তি’ তৈরি করেছে পদ্মশিবিরে। সেই ক্ষোভে যে তিনি অখুশি, সেটাই যেন নেটমাধ্যমে বার্তা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই বার্তায় তিনি শোনালেন সঙ্ঘ-শিক্ষার তিন মন্ত্র— প্রথমে রাষ্ট্র। তার পরে দল এবং সব শেষে ব্যক্তি। ইংরেজিতে দিলীপ লিখেছেন, ‘নেশন ফার্স্ট, পার্টি সেকেন্ড, সেল্ফ লাস্ট’।
আদতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রচারক দিলীপ প্রায়শই এ কথা বলে থাকেন। কর্মিসভা থেকে ঘরোয়া আলোচনায় তাঁর মুখে এ কথা শুনতে অভ্যস্ত ঘনিষ্ঠজনেরা। তাঁরা বলেন, দিলীপ নিজেও এই নীতিতে বিশ্বাস করেন। আর এই শিক্ষা তাঁর আদি সংগঠন আরএসএস থেকেই পেয়েছেন দিলীপ। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও নিজের এই নীতির কথা বলেন দিলীপ। এক দিলীপ-ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘দিলীপ’দা শুধু সংগঠনের দিক থেকেই নয়, এই বিষয়টাকে আধ্যাত্মিক কারণেও বিশ্বাস করেন। উনি মনে করেন ‘সত্ত্ব গুণ’ হল রাষ্ট্র অর্থাৎ দেশকে ভালবাসা। ‘রজঃ গুণ’ হল সংগঠনের হয়ে লড়াই করা। সর্বস্ব সমর্পণ করা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ‘তমঃ গুণ’ হল নিজের কথা ভাবা। ব্যক্তি স্বার্থের কথা চিন্তা করা।’’
নির্বাচনী প্রচারের উত্তাপের মধ্যে এমন তত্ত্বকথা শোনালেন কেন দিলীপ? তবে কি তিনি নিজের কোনও সিদ্ধান্তই বুঝিয়ে দিলেন? কারণ, দলের প্রায় সব নেতাই বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইতে থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে তিনি পথে পথে থাকছেন প্রচারে। বৃহস্পতিবারই বিশেষ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। শুক্রবার ওই পোস্ট করার পরে দিলীপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘‘চারদিকে প্রার্থী হওয়ার জন্য সবার এত চাহিদা দেখেই কথাগুলো লিখলাম। সকলেই প্রার্থী হতে চান। কিন্তু আমি যে তিনটি কথা লিখেছি, তা আমাদের দলের বেশিরভাগ সদস্য বিশ্বাস করেন। সেই কারণেই সংগঠন এত বড় এবং এত শক্তিশালী হয়েছে। সেটাই নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিলাম।’’
কিন্তু এর পরেও কি ক্ষোভ কমানো যাবে? জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতি হিসেবে দলের নীতি সকলের কাছে নতুন করে তুলে ধরা দরকার বলেই আমি এটা পোস্ট করেছি। দলে যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁরাও বুঝবেন বিজেপি-তে ব্যক্তির চেয়ে সংগঠন এবং সংগঠনের চেয়ে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ।’’ তবে দলে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে, সেটা খুব বেশি বড় করে দেখছেন না দিলীপ। তাঁর দাবি, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যা মিটে যাবে। সকলে জোট বেঁধে লড়াই করবেন।’’
দিলীপের কথায়, ‘‘কিছু কিছু ক্ষোভ রয়েছে এটা ঠিক। সংবাদমাধ্যম ছাড়াও ডিজিটাল যুগে অল্পটাই বেশি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সবাইকে বুঝতে হবে শুধু আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। কৌশলকেও গুরুত্ব দিতে হয়। খুব তাড়াতাড়ি সকলের অভিমান মিটিয়ে দেওয়া যাবে।’’ প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারেও দলের ভিতরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন দিলীপ। জানিয়েছিলেন, যাঁরা প্রার্থী হতে পারলেন না, তাঁদের সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ক্ষোভের আগুনে সেই আশ্বাস-বারি সিঞ্চনের পরে শুক্রবার মনে করালেন ‘নীতি’।