কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি প্রতি বুথে রাজ্য পুলিশ রাখার দাবিতে কমিশনে তৃণমূল। শৌভিক দেবনাথ
কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি প্রতি বুথে রাজ্য পুলিশকেও রাখতে হবে। শুক্রবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে এই দাবি জানাল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্র, নাজিমুল হক, প্রতিমা মণ্ডল এবং সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া যশবন্ত সিনহা। কমিশনের কাছে তাঁরা জানান, এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভাষা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাই প্রতি বুথে কমপক্ষে এক জন করে রাজ্য পুলিশ রাখতে হবে। বিজেপি অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাদের মতে, আসলে ভোট কারচুপি করতেই রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট করানোর কথা বলছে তৃণমূল।
বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে আগেই ঘোষণা করেছে কমিশন। সেই মতো রাজ্যের প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হবে এবং ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও রাজ্য পুলিশ থাকবে না বলেও কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। এর জন্য ৭২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ইতিমধ্যে রাজ্যে এসে পৌঁছেছে। শুক্রবার এই মর্মে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল কমিশনের কাছে জানতে চায়, রাজ্যের সব বুথে কি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীই থাকবে? যদি থাকে, তবে ভোট পরিচালনায় অসুবিধা হতে পারে। তাদের দাবি, বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান হিন্দি ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু বাংলায় ভোট পরিচালনার দায়িত্বে অনেকে আছেন, যাঁরা হিন্দি ভাষা বোঝেনই না। তাই সমস্যা হতে পারে। সে জন্যই প্রতিটি বুথে কমপক্ষে একজন করে হলেও রাজ্য পুলিশের কর্মীকে রাখা হোক। সৌগত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভাষা অনেকে না বুঝতে পেরে ভয় পায়। এমনকি এলাকা রুট মার্চের সময় শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা বলে জওয়ানরা আশ্বস্ত করলেও, তাঁদের ভাষা না বুঝতে পেরে অনেকে ভয় পান। তাই আমরা চাই ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট হোক। সে জন্যই বুথে বুথে রাজ্য পুলিশ রাখার দাবি জানিয়েছি।’’
প্রতিনিধি দলের দাবিগুলি শুনে কমিশন তাঁদের আশ্বস্ত করেন বলে জানান মহুয়া। বলেন, ‘‘পুরো অভিযোগ শুনে কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে। জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। নির্বাচনের সময় শুধুমাত্র সাহায্যের জন্য আমরা তা ব্যবহার করি। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’ এমনকি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে কমিশন আলোচনা করবে বলেও জানান মহুয়া।
অন্য দিকে, তৃণমূল কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভাষাগত সমস্যার কথা বললেও বিজেপি তা মানতে নারাজ। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানি, যে সমস্ত অফিসার ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা প্রায়ই সকলেই হিন্দি বোঝেন। আসলে ভোটে অশান্তি করার জন্য রাজ্য পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট হলে কারচুপি করতেও সুবিধা হবে। এর আগের নির্বাচনগুলিতে যা আমরা দেখেছি। তাই আমরা এই দাবির বিরোধিতা করছি।’’
কমিশন সূত্রে খবর, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, পাঁচ রাজ্যের ভোটেই ১০০ মিটারের মধ্যে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এলাকা চিহ্নিতকরণ, রুটমার্চ, গন্ডগোল নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সাহায্য করবে রাজ্য পুলিশ। এ ছাড়া নির্বাচনে বুথস্তরের অফিসারের দায়িত্বে থাকবে রাজ্য পুলিশই।
বুথে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি গণনার সময় ইভিএম মেশিনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ভিভিপ্যাট গণনারও দাবি জানায় তৃণমূল। এ নিয়ে তারা ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কেও সামনে এনেছে। প্রসঙ্গত, গণনার সময় বেশি লাগবে বলে সমস্ত ভিভিপ্যাট গণনা করত না কমিশন।