বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার ও যশ দাশগুপ্ত।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই দিল্লিতে বিজেপি দফতরে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত। তারপরে রাজ্যে অমিত শাহ এলে তাঁর সঙ্গেও দেখা হয় যশের। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এ বারের নির্বাচনে টিকিট পেতে চলেছেন তিনি। সেটাই হল। অন্যদিকে, অনেক দিন আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেত্রী পায়েল সরকার। তাঁকেও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে টিকিট দিল গেরুয়া শিবির। এই দু’জন ছাড়া আরও অনেক তারকা মুখ দেখা গেল বিজেপি-র তৃতীয় ও চতুর্থ দফার প্রার্থিতালিকাতে।
তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করার সময় দেখা গিয়েছিল তারকা প্রার্থীর আধিক্য। অভিনেত্রী কৌশানি মুখোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লাভলি মৈত্র, জুন মালিয়া, অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, সোহম চক্রবর্তী, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী থেকে গায়িকা অদিতি মুন্সি, কে ছিলেন না সেই তালিকায়। তুলনায় বিজেপি-র প্রথম দুই দফার প্রার্থিতালিকায় দেখা যায় অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া বিশেষ কোনও তারকার নাম নেই। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের তৃতীয় ও চতুর্থ দফার প্রার্থিতালিকা সেই ঘাটতি অনেকটাই পূর্ণ করে দিল।
রবিবার কলকাতার বুকে যখন হুইলচেয়ারে বসে মিছিল করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন দিল্লিতে দলীয় দফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ দফার আংশিক প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করল বিজেপি। সেখানে যেমন বেশ কিছু সম্ভাব্য মুখ রয়েছে, তেমনই রয়েছে অনেক চমকও।
অভিনেতা যশ দাশগুপ্তকে প্রার্থী করা হয়েছে হুগলির চণ্ডীতলা থেকে। বাংলা ছবির তরুণ নায়কদের মধ্যে অন্যতম তিনি। বিশেষ করে মফস্সল ও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি।
অন্য দিকে, বেহালা পূর্বের প্রার্থী করা হয়েছে পায়েলকে। সেখানে আবার তৃণমূলের প্রার্থী শোভন জায়া রত্না চট্টোপাধ্যায়। রত্নাকে প্রার্থী করার সময় মমতা বলেছিলেন, মহিলাদের সম্মান রক্ষা জন্য লড়াই করবেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে সেখানে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দাঁড় করালে হয়তো দলীয় লড়াই কিছুটা হলেও পারিবারিক জায়গায় চলে যেত। তাই মহিলা বনাম মহিলা লড়াইয়ের রাস্তাতেই হাঁটল গেরুয়া শিবির।
বিজেপি-র প্রার্থী তালিকায় দেখা গেল বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তাঁরা ইতিমধ্যেই লোকসভায় জিতে সাংসদ হয়েছেন। তার মধ্যে বাবুল আবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু ফের তাঁদেরকেই দাঁড় করানো হয়েছে বিধানসভায়। বাবুল প্রার্থী হয়েছেন টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে। লকেটকে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁরই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্র চুঁচুড়ায়। লকেট নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে একটি বিধানসভায় দাঁড়ালেও বাবুলকে আসানসোল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে কলকাতায়। তাঁর প্রতিপক্ষ হতে পারেন তৃণমূলের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে নন্দীগ্রামের পাশে টালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে লড়তে পারেন মমতা নিজেই। ওই কেন্দ্রের সিপিএমের তারকা প্রার্থী দেবদূত ঘোষ।
সোনারপুর দক্ষিণের প্রার্থী করা হয়েছে অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুকে। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী লাভলি মৈত্র। অর্থাৎ এই কেন্দ্রেও তারকা বনাম তারকার লড়াই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই কেন্দ্রে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তাই কঠিন লড়াই অঞ্জনার সামনে।
কিছুদিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। টিকিটও পেয়েছেন তিনি। হাওড়ার শ্যামপুর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁকে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরও অনেক তারকা যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। তাঁদের মধ্যে এখনও অনেকের নাম ঘোষণা বাকি রয়েছে। তবে এখনও নির্বাচনের আরও চার দফার প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা বাকি রয়েছে বিজেপি-র। সেইসব দফাতে আরও অনেক তারকার দেখা মিলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।