গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভার সাংসদরাও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। এমনই সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। রবিবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ রয়েছে এমন ৬৩ আসনের প্রার্থীদের নাম জানাল গেরুয়া শিবির। তাতে রয়েছেন দলের ৪ সাংসদ। হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবং কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক প্রার্থী হলেন। এ ছাড়াও প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, পরবর্তী তালিকায় আরও কয়েকজন সাংসদের নাম থাকতে পারে। রাজ্যসভা সাংসদ অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও থাকতে পারে সেই তালিকায়। কিন্তু সাংসদ এমন কী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও কেন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে, রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার দাবি, ‘‘আমরা ক্ষমতায় আসছিই। মন্ত্রিসভা কেমন হবে তার স্পষ্ট ছবি রয়েছে প্রার্থী তালিকাতেই।’’ যদিও পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘‘বিজেপি-তে এখন নতুন ও পুরনোদের মধ্যে প্রবল লড়াই। সে সব মেটানোর পাশাপাশি প্রার্থী হওয়ার মতো মুখেরও অভাব। সেই দৈন্যই প্রকাশ পেয়েছে প্রার্থী তালিকায়।’’
রবিবার দু’দিনের রাজ্য সফরে এসেছেন অমিত শাহ। তারই মধ্যে জানা গেল বিজেপি-র দ্বিতীয় দফার তালিকা। প্রতি সফরেই অমিত বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসছে বলে প্রত্যয় দেখিয়েছেন। বিজেপি সত্যিই নীলবাড়ির দখল পেলে কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী? এ ব্যাপারে অমিত বরাবর একই কথা বলে এসেছেন, ‘বাংলার ভূমিপুত্র’। কিন্তু কেমন হবে পদ্মের স্বপ্নের মন্ত্রিসভা? ফেব্রুয়ারির সফরে সংবাদমাধ্যমের এমন প্রশ্নের উত্তরে অমিত বলেছিলেন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলেই মন্ত্রিসভা দেখতে পাওয়া যাবে।
সেটাই কি বিজেপি দেখাতে চাইল এই দফার প্রার্থী তালিকার মধ্যে দিয়ে? যে তিন জন লোকসভার সাংসদ প্রার্থী হয়েছেন তার মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাবুল। পরপর দু’বার লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল আসন থেকে জিতেছেন বাবুল। দু’বারই জায়গা পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভায়। এ বার নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে জয়ের সম্ভাবনা দেখা বিজেপি বিধানসভাতেও চাইছে সাংসদ বাবুলকে। বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গায়ক বাবুল প্রার্থী হচ্ছেন টালিগঞ্জ আসন থেকে। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্র বিজেপি-র কাছে মোটেও ‘সুবিধাজনক’ নয়। ২০১৯ সালে যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত টালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের থেকে বিজেপি পিছিয়ে ছিল প্রায় ৩২ হাজার ভোটে। তবে রাজনৈতিক মহলে এমন জল্পনা রয়েছে যে, নন্দীগ্রামের পাশাপাশি টালিগঞ্জ থেকেও ভোট লড়তে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন ইঙ্গিত তিনি নিজেই দিয়ে রেখেছেন। সেটা যদি হয় তবে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি টালিগঞ্জও হয়ে উঠবে ‘ভিভিআইপি’ আসন। বিজেপি সূত্রে খবর, তেমনটা আন্দাজ করেই বাবুলে ভরসা রাখছে বিজেপি। তবে আপাতত বাবুলের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
অন্য দিকে, কলকাতারই কোনও কেন্দ্র থেকে রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে প্রার্থী করা হবে বলে ভাবা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হুগলির তারকেশ্বর আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজেপি-তে তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত স্বপনকে কো ‘সুবিধাজনক’ আসনে প্রার্থী করার কথা আগেই ভেবেছিল বিজেপি। সেই হিসেবে তারকেশ্বরকে বিজেপি-র পক্ষে খুব ‘সুবিধাজনক’ না বলা গেলেও বিজেপি-র ওই এলাকায় দলের সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগ আসনে মাত্র ১,১৪২ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল বিজেপি। তবে আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত তারকেশ্বরে বিজেপি পিছিয়ে ছিল প্রায় ৫ হাজার ভোটে।
রাজ্য বিজেপি-র সাধরণ সম্পাদক তথা সাংসদ লকেট প্রার্থী হয়েছেন চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে। তাঁর হুগলি লোকসভার মধ্যেই এই বিধানসভা এলাকা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রার্থী হতে বলার পরে লকেট নিজেই এই আসন থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিজেপি ওই আসনে ২০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল।
অন্য দিকে, কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ বিজেপি-তে নতুন হলেও ইতিমধ্যেই দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি অমিত কোচবিহারে সমাবেশ করার আগে অসমে রাজবংশীদের রাজা হিসেবে পরিচিত অনন্ত রায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাতেও অমিতের সঙ্গী ছিলেন নিশীথ। এ বার তিনি প্রার্থী কোচবিহারের দিনহাটা আসন থেকে। লোকসভা ভোটে এই আসনে ১৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন নিশীথ।