হেলে পড়া বহুতলটি ভাঙার কাজ চলল শুক্রবারেও। —ফাইল চিত্র।
নেতাজিনগর থানা এলাকার হেলে পড়া বহুতলটি ভাঙার কাজ চলল শুক্রবারেও। এ দিন ওই ভাঙা বাড়ির সামনে উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। এমনই এক দম্পতি সন্দীপ পাল ও অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল। তাঁরা বললেন, ‘‘আমাদের যাবতীয় আসবাবপত্র, পরিচয়পত্র, ছেলের পরীক্ষার মার্কশিট— সবই ভাঙা বাড়িতে পড়ে আছে।’’ ওই বাড়ির অন্য দুই বাসিন্দা, সুরজিৎ সাহা ও তপতী মাইতি জানালেন, ঘটনার পর থেকে তাঁরা দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। সমস্ত জিনিসপত্রই বাড়ির মধ্যে পড়ে আছে। এ দিন বাড়ি ভাঙার পাশাপাশি গৃহস্থালির কিছু জিনিসপত্র বার করে এনে বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
হেলে পড়া ওই বহুতলটির আশপাশের বাসিন্দারা এ দিন জানালেন, তাঁরাও প্রবল আতঙ্কিত। ওই বহুতলের পাশের একটি আবাসনের বাসিন্দা স্বপ্না সাহা, বহ্নিশিখা কর্মকার, পূরবী চক্রবর্তীরা জানালেন, তাঁদের কেবলই মনে হচ্ছে, হুড়মুড় করে গোটা বাড়িটাই ভেঙে পড়বে না তো? হেলে পড়া বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি দোতলা বাড়ি। সেটির বাসিন্দা রূপালি সাহার কথায়, ‘‘ওই বাড়িটা যদি আমাদের বাড়ির উপরে ভেঙে পড়ত, তা হলে আমরা সকলেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়তাম।’’ যে সংস্থা ওই বাড়ি ভাঙার কাজ করছে, সেটির তরফে বিজয় সাউ নামে এক জন বললেন, ‘‘আশপাশের কোনও বাড়ির যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকে লক্ষ রেখেই বাড়ি ভাঙার কাজ করছি।’’
এ দিনও প্রশ্ন ওঠে, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বৃহস্পতিবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত প্রোমোটার সুভাষ রায় তাড়াহুড়ো করে হেলে পড়া বাড়িটি সোজা করতে যাওয়ার ফলেই এমন অবস্থা হল। ওই বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাড়িটা সামান্য হেলে ছিল বলে চারতলার দু’টি ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছিল না। ওই ফ্ল্যাট দু’টি বিক্রির জন্যই তাড়াহুড়ো করে বাড়িটি সোজা করার চেষ্টা হচ্ছিল।’’ প্রসঙ্গত, আদালতে তোলা হলে সুভাষকে এ দিন তিন দিনের পুলিশি হেফাজত দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সকলের চোখের সামনেই বহুতল উঁচু করার কাজ চলছিল। সেই কাজের মান ঠিক আছে কিনা, পুরসভার স্থানীয় প্রতিনিধিরা তা খতিয়ে দেখলেন না কেন? স্থানীয়দের একাংশের মতে, পুরসভার নজরদারি চললে হয়তো এত বড় বিপর্যয় আটকানো যেত। যদিও এ বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বৃহস্পতিবারই দাবি করেছিলেন, পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি দল ১৫ দিন পর পর এলাকায় ঘুরে এই ধরনের নির্মাণ খতিয়ে দেখার কাজ করে। তাঁর দাবি, যা ঘটার গত ১৫ দিনের মধ্যেই ঘটে গিয়েছে। তাই খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি।