বাঁ দিক থেকে জুন মালিয়া, কীর্তি আজ়াদ, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
কেউ স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে প্রচার-কৌশল নিয়ে বৈঠকে বসেছেন। কেউ বাইকে চেপে নিজের কেন্দ্র চষে ফেলছেন। কেউ শুরু করে দিয়েছেন দেওয়াল লিখন। কেউ বা আবার মন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু করেছেন প্রচার। রবিবার রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল। তার পর আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করতে নারাজ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, কীর্তি আজাদ, পার্থ ভৌমিক, মিতালি বাগেরা। তাঁদের বক্তব্য, কাজ তো করতেই হবে!
সোমবার বিধানসভায় গিয়েছিলেন রচনা। সেখানে ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র এবং চাপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। অসীমা জানান, কোথায় কী ভাবে প্রচার চলবে, সেই কৌশল নিয়ে কথা হয়েছে। রচনা বলেন, ‘‘কাজ তো করতেই হবে। অসীমাদি ছাড়া এগনো যাবে না। তাঁর ছত্রছাত্রায় থাকতে হবে।’’
হুগলিতে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতি আর সিনেমা দুটো আলাদা বিষয়। এটা কোনও দিদি নম্বর ওয়ানের লড়াই নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। আমি তাঁর সৈনিক।’’ এ প্রসঙ্গে রচনা শুধু বলেন, ‘‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাল থাকুক।’’
অরিন্দম বলেন, ‘‘রচনা শুধু হুগলি লোকসভা নয়, সারা বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন। তিনি দিদি নম্বর ওয়ান।’’
সোমবার বর্ধমানে সর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দিরে যান বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। মন্দির থেকে বেরিয়েই নিজের নাম দেওয়ালে লেখেন। এর পরই কাছের রাধারানি স্টেডিয়ামে যান। সেখানে একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। ব্যাট হাতে মাঠে নেমে পড়েন প্রাক্তন ক্রিকেটার। চালিয়ে খেলেন কয়েকটি শট। তার পর জানান, ভোটের মাঠে এমনই খেলবেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমার কাছে সরস্বতীর মন্দির। যে খেলা আমাকে এত কিছু দিয়েছে, তার কাছে এলাম।’’
বর্ধমান-দু্র্গাপুরের বিদায়ী সাংসদ এসএস অহলুওয়ালিয়া বিজেপির। তবে এই আসন পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী, জানিয়ে দিলেন তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি। তিনি বলেন, ‘‘কোনও আসন কারও কাছে স্থায়ী হতে পারে না। বর্ধমানও নয়। সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনকে দিদি হারিয়ে দিয়েছেন। মোদী-শাহ তো অনেক কিছু বলেছিলেন। আর দিদি হুইল চেয়ার বসে খেলা হবে বলে দেখিয়ে দিয়েছেন।’’ জিতলে খেলার জন্য কিছু করবেন, সে কথাও জানিয়েছেন কীর্তি।
সোমবার কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ। মঠের মহারাজদের সঙ্গে কথা বলেন। ২০১০ সালে রাজনীতিতে হাতেখড়ি মিতালির। বর্তমানে হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য তিনি। তৃণমূলের লোকসভা প্রার্থী বলেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিলেন আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের পাশে থেকেই কাজ করে এসেছি। আগামী দিনেও করে যাব। উন্নয়ন হল আমাদের হাতিয়ার। ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পাচ্ছেন মহিলারা। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীকে মানুষ দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করবেন।’’
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পরের দিনই আমডাঙায় রাস্তার শিলান্যাস করেন পার্থ ভৌমিক। আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সারলেন জনসংযোগ। বাইকে চেপে আমডাঙা বিধানসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি।
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে অভিনেত্রী জুন মালিয়ার নাম ঘোষণা হতেই সক্রিয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। জুন স্থানীয় বিধায়কও। সোমবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরে বাইকে চেপে ঘুরলেন জুন। তার পরে জেলা ফেডারেশন হলে গিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘‘এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে। দল আমার উপরে ভরসা রেখেছে।’’
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি। তবে বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষ মাটি ছাড়তে নারাজ। তিনি জনসংযোগ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। খড়্গপুরে সাউথ সাইড এলাকায় চা-চক্রে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নেতা বলুন, অভিনেতা বলুন, তৃণমূলের কাউকে মানুষ চাইছে না। সে জন্য বারবার মুখ বদল করতে হচ্ছে। নতুন মুখ আনতে হচ্ছে মানুষকে ভোলানোর জন্য। পার্টিটাকে মানুষ খারিজ করে দিয়েছে।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আমার মনে হয় সুন্দর মুখ দেখে মানুষ ভোট দেবে না।’’
সোমবার পূর্ব ঘোষণা মতো নন্দীগ্রামে জানকী মন্দিরে পুজো দিয়ে নিজের প্রচার অভিযান শুরু করেন দেবাংশু। সঙ্গে ছিলেন নন্দীগ্রাম-১ এর ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ। মূলত তাঁর নেতৃত্বেই নন্দীগ্রামে একাধিক কর্মসূচীতে দেবাংশু যোগ দেন।
দেবাংশুর জন্য দেওয়াল লেখা শুরু করেছিলেন তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা শেখ সুফিয়ানের অনুগামীরা। অথচ সেদিকে পা না বাড়িয়েই নন্দীগ্রাম জুড়ে একের পর এক কর্মসূচীতে এগিয়ে যান দেবাংশু। এই ঘটনায় ক্ষোভ চাপা রাখেননি সুফিয়ান। পরে সংবাদ মাধ্যমে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে সুফিয়ানের বক্তব্য, “আমার বাড়িতে আসবে বলে আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল। শতাধিক তৃণমূল কর্মী ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করলেও দেবাংশু এই জায়গায় না দাঁড়িয়েই চলে যান।” ঘটনাটি জানতে পেরে দেবাংশু জানান যে তিনি অবশ্যই সুফিয়ান সাহেবের সঙ্গে দেখা করবেন।