তৃণমূলের টাকা ‘আটক’ করল ইডি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
অর্থলগ্নি সংস্থা অ্যালকেমিস্ট মামলার তদন্তে নেমে তৃণমূলের ১০ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ‘আটক’ (পরিভাষায় অ্যাটাচ) করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দিল্লি দফতর। ‘ডিমান্ড ড্রাফ্ট’ আকারে ছিল ওই টাকা, যা ‘আটক’ করা হয়েছে। ওই অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে টাকা তছরুপের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে ইডি। ইডির টাকা ‘আটক’ করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, ইডি চিঠি পাঠিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে ‘পদক্ষেপ’ করা হয়েছিল। তাকেই এখন ‘নেতিবাচক’ করে দেখানো হচ্ছে।
ইডির তরফে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে টাকা তছরুপের তদন্তে নেমে তৃণমূলের ১০ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্তা করা হয়েছে। ওই সংস্থার মালিক রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংহ। লখনউতে সিবিআই একটি এফআইআর দায়ের করেছিল। তার ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে নেমে ইডি জানতে পেরেছিল, আমানতকারীদের থেকে ১,৮০০ কোটি টাকা তুলেছিল সংস্থা। প্রচুর টাকা ফেরানোর মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কোনও টাকাই ফেরানো হয়নি।
বিবৃতিতে ইডি আরও দাবি করেছে, আমানতকারীদের থেকে যে টাকা তুলেছিল অ্যালকেমিস্ট সংস্থা, তার একাংশ তৃণমূলের হয়ে বিমান সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। ইডির তরফে আরও জানানো হয়েছে, বিভিন্ন বিমান এবং হেলিকপ্টার সংস্থাকে ১০ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা দিয়েছিল অ্যালকেমিস্ট সংস্থা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় তৃণমূলের তারকা প্রার্থী, যেমন মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, প্রাক্তন সাংসদ মুনমুন সেন, বিদায়ী সাংসদ নুসরত জাহান যে বিমান বা কপ্টারে চেপেছিলেন, তার জন্যই এই দাম দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে কপ্টারের ভাড়ার টাকা সংস্থা দিতে চেয়েছিল। তখন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। কপ্টার ভাড়া নেওয়া হলেও টাকা মেটানো হয়নি। দলের জানাও ছিল না কাকে, কী ভাবে দিতে হবে টাকা। পরে বিষয়টি ইডি হাতে নিলে তৃণমূল জানায়, তারা টাকা মিটিয়ে দিতে প্রস্তুত। সেই মতো দিন কয়েক আগে ড্রাফটও পাঠানো হয়। এই নিয়ে এখন ‘কুৎসা’ চলছে। কুণালের প্রশ্ন, অ্যালকেমিস্টের ‘ব্র্য়ান্ড অ্যাম্বাসাডর’ মিঠুন চক্রবর্তীকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। মুকুলকেই বা কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। একই সুরে কথা বলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন। তিনি বলেন, ‘‘ইডির বিবৃতিতে বলা হয় কপ্টারে উঠেছিলেন নুসরত। সে সময় নুসরত তৃণমূলে ছিলেন না। সাংসদ হননি। যিনি সব থেকে বেশি কপ্টারে উঠেছিলেন, তাঁর নাম মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি এখন বিজেপিতে রয়েছেন বলেই কি তাঁর নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নি?’’
শুভেন্দু এই প্রসঙ্গে পাল্টা এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ‘‘অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে টাকা তছরুপের তদন্তে নেমে ইডির দিল্লি প্রাদেশিক দফতর তোলামূল কংগ্রেস পার্টির ১০.২৯ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। তারা যে পদক্ষেপ করেছে, তাকে স্বাগত জানাই। তবে আমার মতে এটা হিমশৈলের চূড়াও নয়, বরফের একটা কিউব মাত্র। ফাঁস আরও কঠিন হলে এর থেকে ১০ হাজার গুণ বেশি টাকা উদ্ধার হবে।’’
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অ্যালকেমিস্ট মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে তলব করে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ওই মামলায় প্রায় ১৯০০ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল। তৃণমূলের কোষাধ্যক্ষ হিসাবেই অরূপকে তলব করা হয়েছে। তৃণমূলের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে ডাকা হয়েছিল তাঁকে। ২০১৪ সালের ভোটের প্রচারে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে অরূপের কাছে জানতে চাওয়া হতে পারে বলেই ওই সূত্রটির দাবি। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ সময় চেয়ে নেন। তাঁর আবেদন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ইডির একটি সূত্র দাবি করে। এ নিয়ে বিজেপিকে বিঁধেছিল তৃণমূল। ওই মামলায় বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে কেন ধরা হবে না, সেই প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের তৎকালীন মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
তার আগে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুলকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু শারীরিক কারণে তিনি দিল্লি যেতে পারেননি। পরিবারের আবেদন মেনে ইডি আধিকারিকেরা মুকুলের কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ঘটনাচক্রে, তার পরেই অরূপকে তলব করা হয়।