মহুয়া মৈত্র।
লোকসভা নির্বাচন দুয়ারে। কিন্তু তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী মহুয়া মৈত্রের ডাকা বৈঠকে দেখা গেল না কালীগঞ্জের বিধায়ক তথা প্রাক্তন জেলা চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ ওরফে লাল-কে। অনুপস্থিত রইলেন মহুয়া-বিরোধী বলে পরিচিত একাধিক জেলা পরিযদ সদস্যও।
সোমবার জেলা পরিষদের সভাকক্ষে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, জেলা পরিষদের সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন মহুয়া। সেই বৈঠকে কয়েক জন গরহাজির থাকায় ভোটের আগে শাসক দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারার পরিবর্তে প্রবল গোষ্ঠী কোন্দলই আবার সামনে চলে এল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ, যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলার তৃণমূল নেতারাও।
পঞ্চায়েত ভোটের পর নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁকে সরিয়ে মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী করেছিল দল। সেই সঙ্গেই নাসিরুদ্দিনকে সরিয়ে চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমানকে চেয়ারম্যান করা হয়। প্রথম থেকেই মহুয়ার সঙ্গে বিধায়কদের একটা বড় অংশের বিবাদ বার বার সামনে এসেছে। তিনি জেলা সভানেত্রী হওয়ার পর তা আরও প্রকট হয়। যদিও রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে অনেকেই মুখ বুজে প্রকাশ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন বলে তৃণমূলের একাধিক সূত্রের দাবি।
দলীয় সূত্রের দাবি, তবে প্রথম থেকেই নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে মহুয়ার বিরোধ সামনে আসছিল। সম্প্রতি কালীগঞ্জের বিধায়ক তার এলাকার অঞ্চল সভাপতি পরিবর্তন করা নিয়ে মহুয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, যা নিয়ে দুই শিবিরে বিরোদের চোরাস্রোত বইতে থাকে।
দিন কয়েক আগে জেলা পরিষদের ভিতরে অনেক কর্মীর সামনেই উত্তপ্ত কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ন মহুয়া ও নাসিরুদ্দিন, যা কার্যত ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুড়ির পর্যায়ে পৌঁছয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এর পর নাসিরুদ্দিন আবার রাজ্য নেতৃত্বের কাছে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে নাসিরুদ্দিন যে মহুয়ার ডাকা বৈঠকে না-ও যেতে পারেন, সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সোমবার তা কার্যত সত্য প্রমাণ করে অনুপস্থিত থাকলেন নাসিরুদ্দিন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, জেলা পরিষদের ঘটনায় কালীগঞ্জের বর্ষীয়ান বিধায়ক এতটাই মানসিক আঘাত পেয়েছেন যে তিনি মহুয়ার মুখোমুখি হতে চাইছেন না। যদিও এ দিন এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি নাসিরুদ্দিন।
এ দিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন জেলা পরিযদের সদস্য টিনা ভৌমিক সাহাও। একদা মহুয়া-ঘনিষ্ঠ টিনার সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট নিয়ে মহুয়ার দূরত্ব তৈরি হয়। বর্তমানে তিনি মহুয়ার প্রবল বিরোধী বলে পরিচিত। টিনাও যে মহুয়ার ডাকে কোনও কর্মসূচিতে যোগ দেবেন না তা তাঁর ঘনিষ্ঠমহল থেকে আগেই বলা হচ্ছিল। এ দিনের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন তেহট্টের আর এক জেলা পরিষদে সদস্য সুনীলকুমার দাসও, যাঁকে মহুয়া প্রকাশ্যে ‘অপমান’ করেছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। ফলে তিনি উপস্থিত না হওয়ায় কার্যত কেউই অবাক হননি। তবে নাসিরউদ্দিনের মতো টিনা বা সুনীলও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিধায়কের মতে, “এমনিতেই এ বার এই কেন্দ্রে পরিস্থিতি কঠিন। বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছে। সেখানে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়তে না পারি তা হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে। অথচ বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, সংসদে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ তোলার অভিযোগে বহিষ্কৃত কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া এ দিনের বৈঠকে ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে হেনস্থার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তা অবশ্য নতুন কিছু নয়, কেননা আগেই তাঁর বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইডি। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, এখন থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রস্তুতি শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন মহুয়া।
এ দিন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তারান্নুম সুলতানা মীরকে একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। ফোনে পাওয়া যায় নি মহুয়া মৈত্রকেও। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও তার উত্তর মেলেনি।