ভূপতিনগরে এনআইএ হানা নিয়ে বিজেপির জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তৃণমূলের কুণাল ঘোষ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ভূপতিনগরকাণ্ডে এনআইএ এবং বিজেপির ‘যোগসূত্র’ রয়েছে। এমনকি, বিজেপির কাছ থেকে ‘টাকা নিয়ে’ ২০২২ সালের পুরনো মামলার তদন্তে গিয়ে দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই অভিযোগ করলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তৃণমূল দাবি করেছে এনআইএর এসপি ধনরাম সিংহের বাড়িতে বৈঠক করেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি।অন্য দিকে, এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে চ্যালেঞ্জ করেছেন জিতেন।
কুণাল সাংবাদিক বৈঠকে একটি কাগজ তুলে ধরে দাবি করেন, সেটি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার এক এসপি পদমর্যাদার আধিকারিকের বাড়ির ঠিকানা। গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে প্রায় ঘণ্টাখানেক ছিলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি এনআইএর এসপি ধনরামকে তৃণমূল নেতাদের একটি তালিকা ধরিয়ে দেন বলে দাবি কুণালের। তাঁর আরও দাবি, ধনরামকে বলা হয় ভোটের আগে কোন কোন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, একটি সাদা প্যাকেটও এনআইএর ওই অফিসারকে দেন বিজেপি নেতা। তাতে টাকা আছে কি না, পুলিশ তার তদন্ত করুক বলে দাবি করেছে তৃণমূল।
এর আগেও এই বিষয়ে সমাজমাধ্যমে লেখালিখি করেন কুণাল। বস্তুত, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার নোটিসের কিছু আগে এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূলের মুখপাত্র বিজেপি এবং এনআইএর এক কর্তার মধ্যে ‘গোপন আঁতাঁত’-এর অভিযোগ আনেন। কুণালের অভিযোগ, ভোটের আগে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করতেই এনআইএর এক কর্তার বাড়িতে ‘গোপন বৈঠক’ করেছেন বিজেপির দুই নেতা। কুণাল এ-ও দাবি করেছিলেন, শনিবারই তৃণমূলের কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করতে তৎপর হতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনাক্রমে, শনিবার ২০২২ সালের বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তে ভূপতিনগরে যায় এনআইএ। দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয়দের হামলার মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এ নিয়ে শোরগোলের মধ্যে কুণাল দাবি করেন, ‘‘২৬ মার্চ সন্ধ্যায় এনআইএর এসপি ধনরাম সিংহের বাড়িতে ‘এন্ট্রি’ নিয়েছিলেন জিতেন তিওয়ারি।’’
কুণালের অভিযোগ, সাদা প্যাকেটে মুড়ে টাকার লেনদেন হয়। সেখানে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারি নিয়ে কথাবার্তা হয়। এবং আলোচনা হয়েছে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর, যখন নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, তাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনআইএর এসপির বিরুদ্ধে তদন্ত করুক পুলিশ। পাশাপাশি, টাকার লেনদেন হয়েছিল কি না, তারও তদন্ত হোক। এবং ওই দিন জিতেনের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখা হোক। কুণাল বলেন, ‘‘সে দিন আর কোথায় কোথায় জিতেন ফোন করেছিলেন, সেটাও তদন্ত করা হোক। ধনরামের মতো অফিসারেরা বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে এনআইএর হয়ে তদন্ত করছে। অবিলম্বে ধনরামকে বাংলা থেকে দূর করে দিতে হবে।’’ এর পরেই কুণালের হুঁশিয়ারি, ‘‘যদি কেউ এটা মানতে না চান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ভিডিয়ো রিলিজ় করে দেব। দেখিয়ে দেব, এনআইএর এসপির বাড়িতে ঢুকছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি।’’ তৃণমূল জানিয়েছে, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হচ্ছে তারা।
এই একই বিষয়ে অভিযোগ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘আদর্শ আচরণবিধির মধ্যে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই যোগসাজশ অব্যাহত থাকলেও নির্বাচন কমিশন অদ্ভুত ভাবে নীরব। ভোট সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা করছে তারা।’’
কুণাল-সহ তৃণমূলের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘কোনও আধিকারিকের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে, এটা যদি প্রমাণ করতে পারে, তা হলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ এমনকি, তৃণমূল তাদের এই অভিযোগের জন্য ক্ষমা না চাইলে সাত দিনের মধ্যে তিনি মানহানির মামলা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অন্য দিকে, সাংবাদিক বৈঠকের শেষ দিকে কুণালের কটাক্ষ, ‘‘চৈত্র মাস চলছে। শুধু এনআইএরটা দিলাম। বৈশাখ পড়বে, কেন্দ্রীয় সংস্থার আরও দুই অফিসারের গল্প দেব।’’