মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুস্মিতা দেব। —ফাইল চিত্র।
অসমের সব আসনে প্রার্থী দিক তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এমনই আবেদন করেছেন অসমের তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব। বিজেপি-বিরোধী জোট ইন্ডিয়াতে একাসনে বসলেও তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই লড়াই করবে তাঁর দল। এ ছাড়াও অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও উত্তরপ্রদেশের একটি আসনে তৃণমূল লড়াই করতে চায় বলে শাসকদল সূত্রে খবর।
অসমে তৃণমূলের প্রার্থী দেওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সুস্মিতা বলেন, ‘‘আমাদের উচিত অসমের সব লোকসভা আসনে প্রার্থী দেওয়া। আমি সে কথা আমাদের দলের সর্বোচ্চ নেত্রীকেও জানিয়েছি। বিজেপিকে একমাত্র জবাব তৃণমূলই দিতে পারে, তা মমতাদিদি বার বার করে দেখিয়েছেন। তাই তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপিকে হারাতে অসমেও তৃণমূলকে লড়াই করুক।’’ সব আসনে প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘অসমের রাজনীতিতে দিনে দিনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে কংগ্রেস। বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল হলেও লোকসভা ভোটে তারা লড়াই নেই বললেই চলে। বরং বিজেপির বিরুদ্ধে অসমে কিছুটা হলেও লড়াই দিচ্ছে এআইইউডিএফ। তাই অসমে বিরোধী রাজনীতির পরিসর এখনও ফাঁকা রয়ে গিয়েছে। তাই মমতাদির নেতৃত্বে আমরা যদি লড়াই করি তাহলে আগামী দিনে অসমে প্রধান দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে তৃণমূলই।’’
এমনই সব যুক্তি সাজিয়ে এ বার অসমের ১৪টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন সুস্মিতা। ২০২২ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল যোগদান করার পরেই তাঁকে মানস ভুঁইয়ার ছেড়ে দেওয়া আসনে দেড় বছরের জন্য রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। পাশাপাশি, অসম এবং ত্রিপুরায় তাঁর নেতৃত্বে সংগঠন গড়ার দায়িত্বও দেওয়া হয়। ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে ভাল ফল করতে ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল। তাতেও দমে না গিয়ে অসমে তৃণমূলের সংগঠন গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন সুস্মিতা। কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ রিপুন বোরাকে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছেন। তাঁকেই অসমে প্রদেশ তৃণমূলের সভাপতি করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে রাজ্যসভা আসনের মেয়াদ শেষ হলে সুস্মিতাকে আর ফেরত পাঠায়নি তৃণমূল। কিন্তু ২০২৪ সালে আবারও পূর্ণ সময়ের জন্য রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তাই লোকসভা ভোট তো বটেই, অসমের আগামী বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলকে প্রাসঙ্গিক করে বিজেপিকে লড়াই দিতে চান সুস্মিতা।
অসমের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৯টি বর্তমানে বিজেপির দখলে। তিনটি আসন কংগ্রেসের দখলে। আর একটি করে আসন অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) এবং নির্দল সাংসদ নবকুমার সারানিয়ার দখলে। অসমের রাজনীতিতে কান পাতলেই শোনা যায় অসম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত সাইকিয়াও কংগ্রেস নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ। তাই তিনিও দল ছাড়তে পারেন বলেই খবর। দেবব্রত আবার অসমের প্রয়াত কংগ্রেস নেতা হিতেশ্বর সাইকিয়ার পুত্র। অসমের রাজনীতিতে আরও গুঞ্জন যে, লোকসভা ভোটের আগেই প্রয়াত কংগ্রেস নেতা চন্দন সরকারের পুত্র বিধায়ক প্রদীপ সরকার দল ছাড়তে পারেন। সেই নেতাদের দিকেও নজর রয়েছে তৃণমূলের। অসম তৃণমূল সূত্রে খবর, রাজ্য স্তরের কয়েক জন নেতা কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
শিলচর লোকসভা আসন সংরক্ষিত হওয়ায় এ বার আর ভোটে লড়াই করতে পারবেন না সুস্মিতা। ২০১৪ সালের এই আসন থেকে কংগ্রেসের হয়ে জিতে প্রথম বার সংসদে গিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলে যোগদানের পর প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষ মোহন দেবের কন্যা মমতাকে জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তাঁকে যেন শিলচর থেকে প্রার্থী করে দল। তাতে সম্মতিও দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই আসনটিকে তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত করে দেওয়ায় আর শিলচর থেকে দাঁড়াতে পারবেন না সুস্মিতা। নিজের প্রার্থী না হতে পারলেও, ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিক, চান তিনি। সঙ্গে অসমের করিমগঞ্জ, ধুবড়ি, লক্ষ্মীমপুর এবং নগাঁও লোকসভা আসনও তৃণমূলের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন অসম তৃণমূল নেতৃত্ব। লক্ষ্মীমপুর এবং নগাঁও লোকসভা আসনে আবার প্রার্থী হিসেবে ভাবা হচ্ছে রাজ্য সভাপতি রিপুনের নাম।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে জয়ের পর অসমের নেতা অখিল গগৈকে দলে টানতে চেয়েছিল তৃণমূল। পাশাপাশি, কোকড়াঝাড়ের নির্দল সাংসদ নবকুমারকেও তৃণমূলে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে যাত্রায় এই জোড়া উদ্যোগ সফল হয়নি। পরে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষ মোহনের কন্যাকে দলে টেনে অসমে রাজনৈতিক জমি তৈরির কাজ শুরু করেছে তৃণমূল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বাংলায় জোট ইন্ডিয়ার সমীকরণ ভাঙার পর আবারও কি অসমের ক্ষেত্রেও একই পথে হাঁটবেন তৃণমূল নেতৃত্ব? এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের অসমের নেতারা।