গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রায় দেড় মাস ধরে চলা সাত দফার লোকসভা নির্বাচন শেষের মুখে। ফল ঘোষণা হবে আগামী মঙ্গলবার (৪ জুন)। আর তার মাঝের সময়টুকুতে বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হবে। ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রের ভোটের প্রকৃত ফলের সঙ্গে বুথফেরত বা জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস মেলে না। তবে মিলে যাওয়ার উদাহরণও কম নেই।
বস্তুত, রাজনৈতিক দলগুলির অন্দরে এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে বুথফেরত সমীক্ষা বা ভোট পরবর্তী সমীকরণের চর্চা। দৌড়ে মূলত দু’টি গোষ্ঠী বা জোট। প্রথমত, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)। ১১ মাস আগে গড়ে ওঠা যে জোটের নামকরণে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর।
গত ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী নেতাদের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র আবির্ভাবের সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছিল ১৯ বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স)। ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন সমঝোতা হয়েছে। বাংলায় তৃণমূল, কেরলে বাম, পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো কেউ আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ভোটের পর জোটের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের রাজ্যে আলাদা করে লড়েছে।
২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারের ডাকে পটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয়েছিল ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে নীতীশ সদলবলে ফিরে গিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে। মায়াবতীর বিএসপি, নবীন পট্টনায়কের বিজেডি বা জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস কোনও শিবিরে না থাকলেও ‘সঙ্কটের মুহূর্তে’ মোদীর পাশে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই।
ভোটের ফল কী হবে, সেটা জানা যাবে ২ জুন, মঙ্গলবার। ফল ঘোষণার পর এবং সরকার গঠনের আগে পর্যন্ত আরও অনেক সমীকরণ রদবদল হতে পারে বলেও ধারণা যুযুধান দুই শিবিরের অনেক নেতার। আর সে ক্ষেত্রে নতুন করে প্রমাণিত হবে পুরনো সেই আপ্তবাক্যের সারবত্তা— ‘পলিটিক্স মেক্স স্ট্রেঞ্জ বেডফেলোজ’ (যার অর্থ, রাজনীতি বিচিত্র সঙ্গী তৈরি করে)!