PM Narendra Modi

ভোট শুরুর দু’দিন আগে রামনবমী, যা সামনে রেখে দেশ জুড়ে ফের মেরুকরণের রাস্তায় হাঁটতে চাইছেন মোদী

কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির মনে করছে, লোকসভা নির্বাচনে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ধনী-গরিব বৈষম্য থেকে নজর ঘোরাতে মোদী নতুন করে ধর্মীয় ভাবাবেগ ও ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৩
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

আগামী ১৯ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তার ঠিক দু’দিন আগে ১৭ এপ্রিল রামনবমী। এই রামনবমীকে সামনে রেখে ফের ভোটের মুখে নরেন্দ্র মোদী দেশ জুড়ে রামমন্দির ঘিরে আবেগ উস্কে দিতে চাইছেন।

Advertisement

আজ প্রথমে উত্তরপ্রদেশের সহারাণপুর, তার পরে রাজস্থানের অজমের থেকে কংগ্রেসকে অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠায় অনুপস্থিত থাকার জন্য দোষারোপ করেছেন মোদী। একই সঙ্গে কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, “রামনবমী আসছে। গোটা দেশের মানুষ উদযাপন করবে। দেখব আপনারা কত বিরোধিতা করতে পারেন?” পাশাপাশি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নতুন করে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তুলে দিয়ে মোদী দাবি করেছেন, শুক্রবার কংগ্রেস যে ইস্তাহার প্রকাশ করেছে, তাতে স্বাধীনতার সময় মুসলিম লিগের যে ভাবনাচিন্তা ছিল, সেই সব ভাবনা ফুটে উঠেছে।

কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির মনে করছে, লোকসভা নির্বাচনে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ধনী-গরিব বৈষম্য থেকে নজর ঘোরাতে মোদী নতুন করে ধর্মীয় ভাবাবেগ ও ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছেন। গত দু’দিন তিনি বিহার, রাজস্থানে গিয়ে ‘ভারত এখন ঘরে ঢুকে মেরে আসে’ বলে উগ্র জাতীয়তাবাদও উস্কে দিতে চেয়েছেন। এ বার রামমন্দির, মুসলিম লিগের মতো রাজনৈতিক ভাবে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে আনছেন। আজ জয়পুরে কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে প্রচারে গিয়ে সনিয়া গান্ধী বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী নিজেকে মহান বলে মনে করছেন। অথচ তিনি দেশের গণতান্ত্রিক মর্যাদার বস্ত্রহরণ করছেন।”

Advertisement

বিজেপি সূত্র বলছে, জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করে মোদী রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় যে হিন্দু ভাবাবেগ তৈরি হয়েছিল, তা গত দু’মাসে অনেকটাই স্তিমিত। লোকসভা ভোটে জিততে সেই আবেগ উস্কে দেওয়া বিজেপির কাছে জরুরি। রামনবমীকে ঘিরে সেই কাজটাই করা হবে। অযোধ্যায় এই প্রথম রামমন্দিরে ভক্তরা রামলালার মূর্তি দর্শন করবেন। প্রসার ভারতী সারা দিন ধরে তার সম্প্রচার করবে। রামনবমীর দিন সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে রামলালার মূর্তির কপালে পড়ে ‘সূর্যতিলক’ তৈরি করবে। বিজেপি নেতৃত্ব গোটা দেশে রামনবমীকে ঘিরে উৎসবে যোগ দেবেন। এ ভাবেই লোকসভা ভোটগ্রহণ শুরুর ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে নতুন করে রামমন্দিরের আবেগ উস্কে দিতে সব রকম চেষ্টা চালাবে বিজেপি।

আজ মোদী ভোটপ্রচারে সহারাণপুরে গিয়ে অবশ্য বলেছেন, অযোধ্যায় বিশাল রামমন্দির নির্বাচনী ঘোষণা নয়, আসলে বিজেপির মিশন ছিল। তিনি বলেন, “এই বছর রামনবমীতে প্রভু রাম তাঁবুতে নয়, বিশাল মন্দিরে দর্শন দেবেন।” এর পরে রাজস্থানের অজমেরে মোদী ফের রামমন্দিরের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। জনতাকে প্রশ্ন করেন, “রামমন্দির তৈরি হয়েছে, আপনারা সন্তুষ্ট কি না? প্রাণপ্রতিষ্ঠায় যোগদানের বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, তা কি ঠিক করেছে?” কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “কেউ প্রাণপ্রতিষ্ঠায় যোগ দিলে কংগ্রেস তাঁকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে। এ দেশে এমন হতে পারে? প্রভু রামকে বাদ দিয়ে এ দেশের কথা কল্পনা করা যায়? রামনবমী আসছে। গোটা দেশের মানুষ রামনবমী উদ্‌যাপন করবে। দেখব, আপনারা কত বিরোধিতা করতে পারেন?”

এক দিকে মোদী কংগ্রেসকে রামমন্দির বিরোধী বলে তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে কংগ্রেসের চিন্তাভাবনায় স্বাধীনতার আগে মুসলিম লিগের ভাবনা ফুটে উঠছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপি নেতাদের দাবি, মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগই দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা বলে দেশভাগের দাবি তুলেছিল। কংগ্রেস ইস্তাহারে মুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকার, নিজস্ব ধর্মাচরণের অধিকার, ধর্মীয় বিধি পালনের স্বাধীনতার অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছে। আজ মোদী অভিযোগ তুলেছেন, কংগ্রেসের ইস্তাহারে পুরোপুরি মুসলিম লিগের প্রভাব ফুটে উঠেছে। বাকি অবশিষ্ট অংশে বামপন্থীদের প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে বিজেপির দাবি উড়িয়ে কংগ্রেসের শশী তারুর-সহ একাধিক নেতার বক্তব্য, ১৯৪০ সালে মুসলিম লিগ দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে প্রস্তাব পাশ করানোর তিন বছর আগেই, ১৯৩৭ সালে আমদাবাদে হিন্দু মহাসভার অধিবেশনে প্রথম ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের তত্ত্ব তুলে ধরেন হিন্দুত্ববাদী নেতা সাভারকর। পরবর্তী কালে তিনি সরাসরি জিন্নার তত্ত্বকে সমর্থনও করেন। আজ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশও এ কথা মনে করিয়ে বলেন, স্বাধীনতার আগে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হিন্দু মহাসভা বাংলা, সিন্ধ, নর্থ-ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্সে মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট সরকার চালাচ্ছিল। লালকৃষ্ণ আডবাণী জিন্নার প্রশংসা করেছিলেন। কংগ্রেস ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দেলন করায় শ্যামাপ্রসাদ তার বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “কে বলেছে, আমরা রাম বিরোধী? আমার তো জয়রাম নামের মধ্যেই রাম রয়েছে।” মোদীর পাল্টা যুক্তি, স্বাধীনতার সময় যে কংগ্রেস ছিল, তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আজকের কংগ্রেসের কাছে দেশহিতের নীতি, রাষ্ট্রনির্মাণের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুই নেই। তাঁর দাবি, তিনি ২০৪৭-এ উন্নত ভারতের লক্ষ্যে ‘২৪/৭ ফর ২০৪৭’ কাজ করছেন। কংগ্রেসের দাবি, মোদী মুখে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন দেখান। বাস্তবে ‘বিভাজিত ভারত’-এর রাজনীতি করেন।

জয়রাম রমেশের বক্তব্য, মোদী নিজের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের অসন্তোষ, কৃষকদের ক্ষোভ থেকে নজর ঘোরাতে মুসলিম লিগের মতো প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। কংগ্রেস নিজের ইস্তাহার, পাঁচ ন্যায়, ২৫টি গ্যারান্টি নিয়ে ভোটে যাচ্ছে। আজ জয়পুরে সনিয়া গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। সনিয়া গান্ধী সদ্য রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তার পরে তিনি এই প্রথম রাজস্থানে গেলেন। সেই কারণেও জয়পুরকে ইস্তাহার নিয়ে প্রচারের জন্য বেছে নেওয়া হয়। অন্য দিকে রাহুল গান্ধী তেলঙ্গানার হায়দরাবাদ থেকে ইস্তাহার নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। যে তেলঙ্গানায় কংগ্রেস লোকসভার আগের দফায় বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছে। মোদীকে নিশানা করে খড়্গে বলেন, “মোদীর গ্যারান্টি হল শুধু মিথ্যে বলার। উনি কংগ্রেসের গ্যারান্টির স্লোগানও চুরি করে নিয়েছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement