(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
মহিলা দিবসের আগে বারাসতে মহিলা সম্মেলন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তার আগে আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগরেও মহিলাদের জন্য কেন্দ্র কী করেছে সেই বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নারী দিবসের পরের দিন শিলিগুড়ির সমাবেশ থেকে একই ভাবে মহিলা ভোট টানার লক্ষ্য দেখা গেল মোদীর বক্তব্যে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বাংলায় মহিলা ভোটের সিংহ ভাগই তৃণমূলের। ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান তোলা তৃণমূল তখন শুধুই ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল। তা এখন কার্যকর শুধু নয়, রাজ্যের অধিকাংশ মহিলাই সেই প্রকল্পের সুবিধা পান। তার উপরে ওই প্রকল্পের টাকা দ্বিগুণ করার ঘোষণাও করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে মহিলা ভোট আরও বেশি করে তৃণমূলের ঝুলিতে যাবে বলে যে আশঙ্কা বিজেপির মধ্যে রয়েছে তা মোদীর প্রতিটি সভাই বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই প্রতিটি সভাতেই মহিলাদের জন্য কেন্দ্রের প্রকল্পের কথা বলার পাশাপাশি সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে বাংলায় নারী নির্যাতন চলছে বলে আক্রমণ শানাচ্ছেন মোদী।
শনিবার শিলিগুড়িতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি, তৃণমূলকে ‘মহিলা-বিরোধী দল’ বলেও উল্লেখ করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মহিলা-বিরোধী তৃণমূল সরকার রেশন দুর্নীতি করেছে। এদের নেতা মন্ত্রী রেশন দুর্নীতিতে জেল খাটছে। রেশনের সঙ্গে সঙ্গে মোদী গরিব পরিবারকে বিনামূল্যে চিকিৎসার গ্যারান্টি দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার এখানে আয়ুষ্মান ভারত চালু হতে দেয় না।’’ সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনেও আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে। মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে গরিব ,দলিত, আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা কী কী করেছে তার চর্চা পুরো দেশে হচ্ছে। মহিলাদের অত্যাচার আর গরিবদের টাকা লুট করাই তৃণমূলের তোলাবাজদের কাজ।’’
শুক্রবার আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসে রান্নার গ্যাসের দাম ১০০ টাকা কমানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে উজ্জ্বলা প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। এ কথার উল্লেখ করতে গিয়েও মোদীর লক্ষ্য ছিল মহিলারাই। প্রসঙ্গত, উজ্জ্বলা প্রকল্পটি মহিলাদের জন্যই। মোদী শিলিগুড়িতে বলেন, ‘‘কোটি কোটি মহিলাকে এর আগে উজ্জ্বলা যোজনায় কম দামে গ্যাস দিয়েছি। গত কাল মহিলা দিবস উপলক্ষে আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব মহিলাদের জন্য গ্যাস আরও ১০০ টাকা কম।’’ এর পরেই নতুন এক অভিযোগ শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর মুখে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস দিয়েছি। কিন্তু তৃণমূল এখানে ১৪ লাখ গ্যাস সংযোগ দিতে দিচ্ছে না।’’
উত্তরবঙ্গকে ‘মিনি ভারত’ বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি মোদী বলেন, ‘‘আমি যখনই উত্তরবঙ্গে এসেছি আপনাদের ভরপুর আশীর্বাদ পেয়েছি। বিশেষ ভাবে আমাদের মা, বোন, কন্যাদের তরফ থেকে যে স্নেহ পাই, তা অদ্ভুত।’’ এর পরে মহিলাদের জন্য কেন্দ্রের কী কী প্রকল্প আছে তা জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘যেমন জীবন আমি কাটিয়েছি তাতে মায়েদের ছোট ছোট জিনিসের জন্য কষ্ট করতে দেখেছি। এই জন্য শৌচালয়, জল, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, গর্ভাবস্থায় সাহায্য-সহ মহিলাদের জন্য নানা বিষয়ে জোর দিচ্ছি। যাতে সব গরিব পরিবার, মা-বোন ভাল থাকেন সেই চেষ্টা করেছি।’’ পাহাড়ি এবং চা-বাগানের মহিলাদের আবেগ ছোঁয়ারও চেষ্টা করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ি অঞ্চলে আগুন জ্বালানোর জন্য কাঠ পেতে এবং জলের কত সমস্যা হয় আমি জানি। মায়েদের কষ্ট সবাই জানে। কিন্তু প্রথমে বাম সরকার আপনাদের কথা শোনেনি। এখন তৃণমূল সরকারও এই সমস্যা উপেক্ষা করেছে। ওরা তো গরিবদের জমি লুটতে ব্যস্ত ছিল। যখন আপনারা আমাকে সুযোগ দিলেন তখন এই সুবিধা আমি আমার পরিবারের মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’’
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতাকে বিজেপি অন্যতম অস্ত্র বানাতে চায়। সেই বার্তা দিতে গিয়েও তৃণমূলকে আক্রমণ করেন মোদী। তবে কারও নাম নেননি। মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূলের ভাইপোর চিন্তা রয়েছে। কংগ্রেস পরিবারের রয়েছে নিজের ছেলেমেয়ের চিন্তা। বামেরা এদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, যাতে তাদেরও সংস্থান হয়। আপনার পরিবার, ভবিষ্যৎ, সন্তান নিয়ে এরা কেউ ভাবে না। এদের কথা একমাত্র মোদী ভাবে, বিজেপি ভাবে।’’ সরকারের আরও নানা ক্ষেত্রের সাফল্যের দাবি করার পাশাপাশি, বিরোধীদের আক্রমণও করেন মোদী। তবে মহিলা ভোট যে তাঁর প্রধান লক্ষ্য তা কথায় কথায় বুঝিয়েছেন। তবে এমনটাও দাবি করেছেন যে, ‘‘কৃষক, যুবক, নারীশক্তি এবং গরিব বিকশিত ভারতের চার স্তম্ভ।’’