নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা মানে তার প্রস্তুতিও অনেক। জনসমাগমের ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধও মেনে চলতে হয়। আবার প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোরও অনেক আয়োজন থাকে। যে এলাকায় সভা, সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে উপহার, স্থানীয় পোশাকের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উত্তরীয় দেওয়া হয়। বিশাল মাপের ফুলের মালা দেওয়ারও চল রয়েছে। প্রতি সভাতেই তা দেখা যায়। কিন্তু লক্ষণীয় ভাবে মঙ্গলবার বাংলায় মোদীর জোড়া সভা বালুরঘাট বা রায়গঞ্জে সে আয়োজন ছিল না। এমনকি, মোদীর আসনের সামনে জলের বোতল বা গ্লাসও ছিল না।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন মোদী। সেখানে উপহার আয়োজন করার ব্যাপারে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেখা যাবে বলেই মনে করা গিয়েছিল। কিন্তু তেমন কিছুই ছিল না। তবে স্থানীয় বিজেপি নেতারা তা ইচ্ছা করে করেননি এমন নয়। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই সেই মর্মে নির্দেশ এসেছিল বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। একই নির্দেশ এসেছিল রায়গঞ্জে সভার দায়িত্বে থাকা নেতাদের কাছেও। নির্দেশে বলা ছিল, প্রধানমন্ত্রীকে কোনও উত্তরীয় পরাতে হবে না। ফুল-মালারও আয়োজন করতে হবে না। আর খাবারের ব্যবস্থা তো নয়ই।
কিন্তু কেন এমন নির্দেশ? একটি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী এখন নবরাত্রির উপবাসে রয়েছেন। সেই কারণে দেশের যে কোনও জায়গায় প্রচারে গেলেই তিনি কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলছেন। কোনও উত্তরীয় পরছেন না। কারও প্রণামও নিচ্ছেন না। ফুল, মালা, উপহার থেকে দূরত্ব রাখছেন। খাওয়াদাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।
বছরে দু’বার নবরাত্রি পালিত হয়। একটি আশ্বিনে দুর্গাপুজোর সময়ে। অন্যটি চৈত্রে অন্নপূর্ণা পুজোর সময়ে। অষ্টমীতে হয় অন্নপূর্ণা পুজো আর রামনবমীতে শেষ হয় নবরাত্রি। এ বার চৈত্র নবরাত্রি শুরু হয়েছে গত ৯ এপ্রিল। শেষ হচ্ছে বুধবার। বাংলায় মোদী এর আগে যখন এসেছিলেন, তখন নবরাত্রি শুরু হয়নি। তাই কোচবিহার, জলপাইগুড়ির সভায় সব কিছু ‘স্বাভাবিক’ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু নবরাত্রির মধ্যে প্রথম মোদী বাংলায় আসেন মঙ্গলবার। উপবাসী মোদী বাংলায় এসে উপবাসকালীন সব নিয়ম মেনে চলেছেন।
নবরাত্রি পালনের বিষয়ে মোদী যে ‘নিয়মনিষ্ঠ’ তা জানা গিয়েছিল তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে পরেই। ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরে নবরাত্রির মধ্যেই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে তিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে যোগ দিলেও মোদীর জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল হোয়াইট হাউসকে। বারাক ওবামার সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিয়ে মোদী কী কী খেয়েছিলেন, তা জানিয়েছিলেন বারাকের স্ত্রী মিশেল ওবামা। হোয়াইট হাউসের নিজস্ব বাগানের ফল ছাড়া কিছু দেওয়া হয়নি মোদীকে। আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল খাবারের মধ্যে কোনও শস্যদানা যেন না থাকে। প্রসঙ্গত, নবরাত্রির উপবাস যাঁরা করেন, তাঁরা টানা ন’দিন কোনও শস্যদানা খান না। দিনের কয়েকটি নির্দিষ্ট সময়ে ফল আর শরবত খেয়ে থাকেন। মোদী এই ধরনের ধর্মীয় আচার মানার ব্যাপারে খুবই যত্নশীল। সেটা বিজেপি শিবিরের সকলেই জানেন। অযোধ্যায় নতুন মন্দিরে রামলালার বিগ্রহ স্থাপনের আগেও তিনি ‘কঠোর’ ব্রত পালন করেছিলেন।