তৃতীয়ই কি প্রথম? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভোটগ্রহণ চতুর্থ দফায় ১৩ মে। মাঝখানে এক মাসের সামান্য বেশি সময়। এখনও আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারল না বিজেপি।
আসানসোলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৫ এপ্রিল। সেই হিসাবে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম মঙ্গলবার ঘোষিত হলেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে বিশেষ সময় পাবেন না বিজেপির প্রার্থী। ঘটনাচক্রে, আসানসোলে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রচারে এগিয়ে গিয়েছে। কারণ, ব্রিগেড সমাবেশে তৃণমূলের সম্পূর্ণ প্রার্থিতালিকা প্রকাশের অনেক আগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, আসানসোলে বর্তমান সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হাই আবার প্রার্থী হবেন।
তবে প্রার্থীর নাম নিয়ে জল্পনার মধ্যে বিজেপির প্রচারও চলছে। দেওয়াল লিখনে নামের জায়গাটা ফাঁকা রাখা হয়েছে। বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে উপনির্বাচনে হেরে গেলেও ওই আসন দু’বার জিতেছে বিজেপি। প্রথমবারের থেকে প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছিল জয়ের ব্যবধান। সিপিএমের ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত আসানসোলে ২০১৪ সালে বিজেপি জেতে ৭০,৪৮০ ভোটে। ২০১৯ সালে সেই ব্যবধান বেড়ে হয় ১,৯৭,৬৩৭ ভোট। তবে ২০২২ সালের এপ্রিলের উপনির্বাচনে তৃণমূল জিতেছিল ৩,০৩,১৪৯ ভোটে।
উপনির্বাচনে সাধারণ ভাবে যে হেতু রাজ্যের শাসক দলের দিকেই ভোট বেশি যায়, তাই সেই ফলাফলকে ধর্তব্যের মধ্যে না রেখে আসানসোলকে বিজেপি ‘নিশ্চিত’ আসন হিসাবেই দেখছিল। প্রার্থীও ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল ২ মার্চ প্রথম তালিকায়। ভোজপুরী শিল্পী পবন সিংহের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু নাম ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি নিজে থেকেই সরে দাঁড়ান। এর পরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি রাজ্যের জন্য দু’টি তালিকা প্রকাশ করলেও তাতে আসানসোলের প্রার্থীর নাম ছিল না। ফলে সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্য বিজেপি নেতাদের মধ্যে। অনেকে এমনও মনে করছেন যে, দেরি করায় জেতা আসন আসানসোল ‘কঠিন’ হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু কেন এত দেরি? বিজেপির একটি সূত্রের খবর, ‘সহজ জয়’ ধরে নিয়েই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘কঠিন’ ডায়মন্ড হারবারের সঙ্গে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনে ভোট একে বারে শেষদফায় ১ জুন। কিন্তু আসানসোলের শিরে সংক্রান্তি অবস্থা। বিজেপি শিবিরে এখন তিনটি নাম নিয়ে জল্পনা চলছে। এক পক্ষ চাইছে, প্রাক্তন মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকেই প্রার্থী করে দেওয়া হোক। কারণ, তাঁর জেতার মতো সামর্থ্য রয়েছে। ২০১৯ সালে শেষ মুহূর্তে নাম ঘোষণা হলেও বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন জিতে দেখিয়েছিলেন অহলুওয়ালিয়া। সেই আসনে এ বার লড়ছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে বিজেপির অন্দরে তৃণমূল থেকে আসা জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নিয়ে আলোচনাও কম নয়। অনেক দাবি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জিতেন্দ্রকে প্রার্থী চান। সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র ও পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র জিতে আসতে পারেন বলেই যুক্তি। তবে এনআইএ-র এসপির বাড়িতে জিতেন্দ্রর যাওয়া নিয়ে যে অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে, তার পরে তাঁকে নিয়ে দিল্লির ভাবনা বদলে যেতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। তবে লড়াইয়ে এখনও রয়েছেন তিনি।
তবে জিতেন্দ্র এবং অহলুওয়ালিয়া সমানে সমানে লড়াইয়ের মধ্যেই আলোচনায় রয়েছে আরও একটি নাম। তিনি কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু আসানসোল উত্তর বিধানসভা আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন ২০২১ সালে। আসানসোল লোকসভা আসনের মধ্যে দু’টি বিধানসভায় জয় পেয়েছিল বিজেপি। অগ্নিমিত্রা পাল জেতেন আসানসোল দক্ষিণ আসন থেকে আর কুলটি থেকে অজয়কুমার পোদ্দার। কৃষ্ণেন্দু রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে পরাজিত হন ২১,১১০ ভোটে। নির্বাচনে পরাজিত হলেও রাজ্য বিজেপির কয়েকজন শীর্ষনেতার সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক রয়েছে কৃষ্ণেন্দুর। সেই সূত্রেই তাঁর নাম দিল্লিতে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে অহলুওয়ালিয়া বা এবং জিতেন্দ্রর সঙ্গে তৃতীয় নাম হিসাবে কৃষ্ণেন্দুও রয়েছেন বলেই বিজেপির সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু কবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটি নাম বেছে নেবেন, তা জানেন না রাজ্য নেতারাও।