গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে ভোটপ্রচারে একে অন্যকে টক্কর দিচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি। কুর্সিদখলের সেই লড়াইয়ের মধ্যে দুই দলের কার্যালয় থেকে অদ্ভুত ভাবে চুরি গেল চেয়ার! এই ঘটনায় শোরগোল শহরে। চোর এক জনই কি না, জানার চেষ্টা চলছে। তবে চুরির প্রকার দেখে অভিযোগ জানাতে গিয়েও হেসে ফেলছেন তৃণমূল এবং বিজেপির নেতারা।
বাঁকুড়া শহরের রামপুর পুরএলাকার ৮, ৯ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে চুরির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কার্যালয়ে থাকা টিভি, ফ্যান ইত্যাদি দামি সমস্ত জিনিস অক্ষত রয়েছে। নেই শুধু চেয়ার এবং টেবিল! বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, তাঁদের কার্যত ধোঁকা দিয়ে কার্যালয় থেকে চেয়ার এবং টেবিল বার করে একটি রিকশায় চাপিয়ে চম্পট দিয়েছে চোর। যাতে কেউ কিছু না সন্দেহ করেন, তার জন্য রিকশায় বিজেপির কয়েকটি দলীয় পতাকাও রেখে দেওয়া হয়। ঘটনাটি সোমবার দুপুরের।
স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, তখন দলীয় কার্যালয়ে কোনও কর্মী ছিলেন না। যে কয়েক জন স্থানীয় মানুষের নজরে পড়েছিল, তাঁরা সকলেই ভেবেছিলেন দলীয় কর্মসূচির জন্য হয়তো চেয়ার-টেবিল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই কেউ বাধা দেননি। প্রশ্নও করেননি। এ নিয়ে বিজেপির বাঁকুড়া নগর মণ্ডলের সভাপতি কৌশিক পাঠক বলেন, ‘‘কে বা কারা এই চুরির সঙ্গে যুক্ত জানি না। ইতিমধ্যে স্থানীয় একটি দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ এই চুরির ঘটনায় বিজেপি নেতা দায়ী করেছেন রাজ্যের বেকারত্বকে। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে কাজের অভাব। বেকারত্বের বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজ না পেয়ে মানুষ এমন ছুটকো জিনিসপত্রও চুরি করছেন।’’
চেয়ার চুরির পর তৃণমূল এবং বিজেপির কার্যালয়। —নিজস্ব চিত্র।
তবে শুধু বিজেপির দলীয় কার্যালয়েই নয়, কাউন্সিলরের কাছ থেকে চাবি সংগ্রহ করে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় খুলে সেখান থেকেও চেয়ার চুরি করে চম্পট দিয়েছে চোর। সেটা ঘটেছে বাঁকুড়া শহর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কার্যালয়ে। ওই কার্যালয়ে বসেই ওয়ার্ডের কাজ পরিচালনা করেন বাঁকুড়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভ্রমর চৌধুরী। তাঁর দাবি, ‘‘সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর রাইপুরের সভায় যাওয়ার জন্য আমি ব্যস্ত ছিলাম। তখন এক যুবক দলের প্রচারের ফ্লেক্স রাখার নাম করে আমার কাছ থেকে কার্যালয়ের চাবি চান। সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক পরা ছিল। আমিও সাত-পাঁচ না ভেবে ওঁকে চাবি দিয়ে চলে যাই। মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে এসে দেখি, দলীয় কার্যালয় হাট করে খোলা। বেশ কয়েকটি চেয়ার নেই।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘থানায় ফোন করার নাম করে আমার মেয়ের কাছ থেকে একটি ফোন নিয়েও চম্পট দিয়েছে ওই চোর। গোটা বিষয়টি আমি পুলিশকে জানিয়েছি।’’
তৃণমূল এবং বিজেপি— দুই দলের কার্যালয়ে প্রায় একই কায়দায় চুরির ঘটনায় চোর এক জনই কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশও তাই মনে করছে। এলাকার সিসিটিভি থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার মধ্যে চেয়ার চুরির ঘটনায় চর্চা শুরু হয়েছে বাঁকুড়া শহরে। লোকসভা ভোটের মুখে চেয়ার চুরির ঘটনায় চোরের ‘রসবোধের’ তারিফ করছেন অনেকে।