(বাঁ দিক থেকে) কুণাল ঘোষ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
উত্তর কলকাতায় মিছিল শেষ করে সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে কয়েক মিনিট আলাদা করে কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলেন বিশেষ নির্দেশও। দলের অন্দরে ওই দুই নেতার মধ্যে ‘বিবাদ’ কারও অজানা নয়। মনে করা হচ্ছে, দু’জনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে সেই ক্ষততেও খানিক প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা করলেন সর্বময় নেত্রী।
সুদীপের সমর্থনে বুধবার শ্যামবাজার থেকে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি পর্যন্ত পদযাত্রা করেন মমতা। সেই মিছিল শেষের পরেই ডেকে নেন কুণালকে। সামনেই ছিলেন সুদীপও। মমতার সঙ্গে এই দু’জনকে কয়েক মিনিট কথা বলতে দেখা যায়। তার পর গাড়িতে উঠে ডায়মন্ড হারবারের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা।
মঙ্গলবার কলকাতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে রুটে মিছিল করেছিলেন, বুধবার মমতার মিছিলও ছিল সেই রুটেই। স্বামীজির বাড়ির সামনে মিছিল শেষ করে তাঁর মূর্তিতে মালা পরিয়ে দেন মমতা। গাড়িতে ওঠার সময় দলনেত্রীর দিকে এগিয়ে যান সুদীপ। তাঁকে দেখে মমতা বলে ওঠেন, ‘‘কুণাল কই?’’ তখন সেখানে উপস্থিত বাকি নেতারা কুণালকে ডাকতে যান। তিনি তখন রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। দিদি ডাকছেন শুনে এগিয়ে আসেন গাড়ির সামনে। এর পরেই সুদীপ এবং কুণালের সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা হয় মমতার। তৃণমূল সূত্রে খবর, দুই নেতার উদ্দেশেই মমতা বলেন, ‘‘কলকাতা উত্তরের আসনটি জিততে হবে আমাদের। তোমরা সেটা দেখে নিয়ো।’’ জিততে হলে কী কী করণীয়, এর পর কুণাল সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যা শুনে সুদীপ এবং মমতা, দু’জনেই ঘাড় নেড়েছেন বলে খবর তৃণমূল সূত্রে।
মমতা, কুণাল, সুদীপের কয়েক মিনিটের এই বাক্যালাপ বর্তমানে বাংলার রাজনীতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, গত কয়েক মাস ধরে কলকাতা উত্তর তৃণমূলকে চিন্তায় রেখেছে। প্রকাশ্যেই প্রার্থী সুদীপের বিরোধিতা করে মুখ খুলেছেন কুণাল। তাঁর এবং সুদীপের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা কারও অজানা নেই। এমনকি, বরাহনগরের প্রাক্তন বিধায়ক এবং কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের তৃণমূল ত্যাগের নেপথ্যেও অন্যতম কারণ সুদীপের সঙ্গে মনোমালিন্য। ফলে দলের অন্দরের ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে কিছু দিন আগে তাপসের সঙ্গে অরাজনৈতিক মঞ্চে একসঙ্গে দেখা যায় কুণালকে। তার পর দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কুণালকে। তারকা প্রচারকের তালিকা থেকেও বাদ পড়েন তিনি। এর পর সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগরে দেন কুণাল। একাধিক দলবিরোধী মন্তব্যও করতে শোনা যায় তাঁকে। যদিও কুণাল বার বার বলেন, তিনি তৃণমূলের সৈনিক। মমতাই তাঁর নেত্রী। কোনও পদ তাঁর প্রয়োজন নেই। এই পর্বের শেষে ব্রাত্য বসুর মধ্যস্থতায় ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে কুণালের বৈঠক হয়। তার পরেই কুণাল আবার ‘ছন্দে’ ফেরেন। দলের তারকা প্রচারকের তালিকাতেও ফেরে তাঁর নাম। গোটা পর্বে মুখ খোলেননি সুদীপ নিজে। মমতাকেও কিছু বলতে শোনা যায়নি। বুধবার সুদীপ এবং কুণালের সঙ্গে ‘সংক্ষিপ্ত’ বৈঠক করলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, ব্যক্তিগত মতপার্থক্য দূরে রেখে কলকাতা উত্তর আসনটি দখলই একমাত্র লক্ষ্য হতে হবে তাঁর দলের সৈনিকদের।