গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শনিবার ষষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের ৫৮ আসনে। তার মধ্যে ছিল বাংলার আট আসনও। তবে ভোটদানের হারে এই দফাও ‘হেরে’ গেল ২০১৯ সালের কাছে। এখনও পর্যন্ত কোনও দফাতেই ভোটদানের হার গত বারের পরিসংখ্যান পার করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, শনিবার বাংলার আট আসনে গড় ভোটদানের হার ছিল ৮২.৭১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই আট আসনের গড় ভোটদানের হার আরও দুই শতাংশ বেশি ছিল।
রবিবার ভোটদানের হার সংক্রান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে কমিশন। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ষষ্ঠ দফায় বাংলায় ভোট পড়েছে ৮৩ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ২০১৯ সালে এই আট আসনে ভোট পড়েছিল আরও বেশি। সে বারের হিসাব অনুযায়ী তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনে ভোট পড়েছিল ৮৪.৭৬ শতাংশ।
তমলুক লোকসভা আসনে সোমবার ভোট পড়েছে ৮৪.৭৯ শতাংশ। কমিশন সূত্রে খবর, ২০১৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৮৫.৫১ শতাংশ। এ বার এই কেন্দ্রে তৃণমূল ও বিজেপি, দু’দলই প্রার্থী বদল করেছে। তৃণমূলের দখলে থাকা তমলুকে দিব্যেন্দু অধিকারীর পরিবর্তে দেবাংশু ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছে বাংলার শাসক দল। তাঁর বিপক্ষে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে বিজেপি।
তমলুকের মতো কাঁথিও তৃণমূলের দখলে ছিল। এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ শিশির অধিকারীর পরিবর্তে তৃণমূল এ বার উত্তম বারিককে প্রার্থী করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দুকে প্রার্থী করে বিজেপি। শনিবার এই আসনে ভোট পড়েছে ৮৪.৭৭ শতাংশ, এমনই খবর নির্বাচন কমিশন সূত্রে। তবে ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই আসনে ভোটদানের হার ছিল ৮৫.৯৯ শতাংশ।
ষষ্ঠ দফায় ঘাটালে ভোটদানের হার ছিল ৮২.১৭ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের থেকে সামান্য কম। কমিশন সূত্রে খবর, সে বার ভোটদানের হার ছিল ৮২.৮৫ শতাংশ। এ বার ঘাটাল লোকসভায় ছিল দুই অভিনেতার সম্মুখ সমর। বিদায়ী সাংসদ দীপক অধিকারীকে (দেব) প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তাঁর বিপক্ষে হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে বিজেপি। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে এ বার লড়াই ছিল তৃণমূলের কালীপদ সরেনের সঙ্গে বিজেপির প্রার্থী প্রণত টুডুর। শনিবার এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮৩.৪৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে ভোটদানের হার ছিল ৮৫.৮৪ শতাংশ।
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র ছিল বিজেপির দখলে। এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষকে বিজেপি এ বার বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে। দিলীপের পরিবর্তে অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী করে পদ্মশিবির। অভিনেত্রী-রাজনীতিবিদ জুন মালিয়াকে প্রার্থী করে তৃণমূল। শনিবার এই কেন্দ্রের ভোটদানের হার ছিল ৮১.৫৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই আসনে ভোট পড়েছিল ৮৪.৫৩ শতাংশ। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতোকে এ বারও বিজেপি প্রার্থী করেছিল। তাঁর বিপক্ষে লড়াই করেন তৃণমূলের শান্তিরাম মাহাতো। কমিশন সূত্রে খবর, এই কেন্দ্রে শনিবার ভোট পড়েছে ৭৮.৩৯ শতাংশ। ২০১৯ সাল পুরুলিয়ায় ভোটদানের হার ছিল ৮২.৪৯ শতাংশ।
বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে শনিবার ভোট পড়েছিল ৮০.৭৫ শতাংশ। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের ভোটদানের হার ছিল ৮৩.৪৭ শতাংশ। এই কেন্দ্রে এ বার লড়াই ছিল দুই যুযুধান রাজনীতিবিদ তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী সঙ্গে বিজেপির সুভাষ সরকারের। অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে কৌতূহল ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিল সকলে। বিজেপি এ বারও সৌমিত্র খাঁকে প্রার্থী করেছিল। তাঁর বিপক্ষে তৃণমূল বেছে নিয়েছিল সৌমিত্রের প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতাকে। কমিশন সূত্রে খবর, শনিবার এই লোকসভা কেন্দ্রে ভোটদানের হার ছিল ৮৫.৯১ শতাংশ। আট আসনের মধ্যে এই কেন্দ্রেই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। তবে ২০১৯ সালকে টপকাতে পারেনি। সে বার বিষ্ণুপুরে ভোট পড়েছিল ৮৭.৫৬ শতাংশ।