নির্বাচনী প্রচারে এসে আলিপুরদুয়ারের নিমতি দোমোহনী এলাকায় গানের তালে পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।নারায়ন দে।
বিজেপি নয়, চা শ্রমিকদের মর্যাদা দেওয়া ও বাগানের প্রকৃত উন্নয়ন তাঁর সরকারই করেছে বলে আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনিতে এসে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট এলেই বন্ধ চা বাগান খোলার ক্ষেত্রে বিজেপি যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়, সেই অভিযোগও তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ৫৯টি চা বাগান খুলেছে। তবে এর পাল্টা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীকেও আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। কালচিনিতে শুক্রবারের সভা থেকে এই মুহূর্তে বন্ধ থাকা চা বাগান খোলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন কোনও বার্তা দিলেন না, সে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রকে সামনে রেখে গত ৫ এপ্রিল কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জে প্রথম জনসভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে, আর একটি শুক্রবারে সভা করলেন চা বলয় অধ্যুষিত কালচিনি বিধানসভার নিমতিতে। এর আগেও কালচিনির বিভিন্ন সভা থেকে চা শ্রমিক ও বাগানের উন্নয়নে নানা প্রকল্পের কথা ঘোষণাও করেছিলেন মমতা। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্বের দাবি, যার সবটাই পূরণও হয়েছে।
নিমতির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও বলেন, “চা বাগানের শ্রমিকেরা আগে কোনও মর্যাদা পাননি। এখন তো আমরা চা বাগানে পাট্টা দিচ্ছি। কোনও বন্ধ চা বাগান থাকলে সেখান থেকেও আমরা জমি নিচ্ছি, গরীব চা শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার জন্য। যে লাইনে তাঁরা কাজ করেন, সেখানেই তাঁদের পাট্টা দেওয়া হবে। পাট্টাও পাবেন, সেখানে ঘর তৈরির জন্য চা সুন্দরী এক্সটেনশন প্রকল্পে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকাও পাবেন।”
এর পরেই বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “২০১৪ সালে বিজেপি এসে বলেছিল, পাঁচটা চা বাগান খুলে দেবে। ২০১৯ সালে এসেও বলেছিল। তার পরে একটা বাগানও খোলেনি। কিন্তু আমাদের সরকার ৫৯টা চা বাগান খুলেছে।’’ এই প্রসঙ্গেও নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “তুমি তো ট্রিটমেন্টের সুযোগ না দিয়ে একেবারে বন্ধ করে দিলে। এই বরবাদি চলবে না।” বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন মমতা।
আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী তথা বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার কটাক্ষ, “বিধানসভায় প্রশ্ন করা হলেই তৃণমূল সরকারের মন্ত্রীরা জানান, তাঁদের আমলে রাজ্যে না কি কোনও বাগানই বন্ধ নেই! অথচ, মুখ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন, তাঁর সরকার ৫৯টি বন্ধ বাগান খুলেছে। এটা বেশ বিভ্রান্তিকর। তা ছাড়া, শুধু আলিপুরদুয়ার জেলাতেই বছরের বিভিন্ন সময় অন্তত দশটা বাগান বন্ধ থাকে। এই মুহূর্তেও জেলায় সাতটি বাগান বন্ধ রয়েছে। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী সেই বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। সে জন্যই হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের সভায় চা শ্রমিকদের দেখা গেল না।” জবাবে আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যসভার সদস্য প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের জনসভার মূল ভিড়টা যে চা শ্রমিকদের ছিল, সেটা সকলেই দেখেছেন। কিন্তু তাঁর প্রচারে কেন চা শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে না, সেই উত্তর আগে বিজেপি প্রার্থী দিন।”