কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র ।
ফের সন্দেশখালি প্রসঙ্গ এল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতায়। যদিও সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়োর কোনও উল্লেখ নেই তাতে। সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে পুরনো মেজাজেই তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতারা ধর্মের ভিত্তিতে মা-বোনেদের উপর অত্যাচার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা দোষীদের ধরেন না। হাই কোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে। শাহজাহানের মতো নেতাদের জেলে পাঠানো উচিত কি উচিত না? মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নাকের নীচে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। যাঁরা অত্যাচার করেছেন, তাঁদের পাতাল থেকেও খুঁজে বার করে সাজা দেওয়া হবে।’’
উল্লেখ্য, দুর্গাপুরের সভার আগে কৃষ্ণনগরে প্রার্থী অমৃতা রায়ের হয়ে রোড-শো করেন শাহ। সেখানেও তাঁকে ভাইরাল ভিডিয়ো প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি। যদিও দুর্গাপুরে শাহের বক্তৃতার আগে রাজ্যের নেতাদের বক্তৃতার সময় বার বার উঠে আসে ভাইরাল ভিডিয়ো প্রসঙ্গ। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ‘ডিপফেক’ ভিডিয়ো বানিয়ে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করেছে শাসকদল।’’ একই বিষয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন প্রার্থী দিলীপও। কিন্তু এই নিয়ে কোনও কথা বললেন না শাহ। বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, কৌশলগত কারণেই এই মুহূর্তে সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর সেই কারণেই দুর্গাপুরে শাহের কথায় শাহজাহান থাকলেও স্টিং অপারেশন অনুপস্থিত বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
শনিবার সকালে প্রকাশ্যে আসা সন্দেশখালির ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। গোপন ক্যামেরায় তোলা সেই ভিডিয়োয় সন্দেশখালির বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল দাবি করেছেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সন্দেশখালিতে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগগুলি ‘সাজানো’ ছিল! মহিলারা টাকার বিনিময়ে শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেছিলেন এবং গোটাটাই শুভেন্দুর ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ বলে দাবি করেছেন ওই পদ্মনেতা। শুভেন্দু সেই দিনই দাবি করেন, ভিডিয়োটি সাজানো। এর পর সোমবার শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিপফেকের যুগে প্রযুক্তিকে তো ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছেই।’’ ভিডিয়োটি ‘ডিপফেক’ বলে দাবি করেছেন বিজেপির অন্য রাজ্য নেতারাও। যদিও সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহকে ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে কোনও কথা বলতে শোনা গেল না।
তৃণমূল কাটমানি খেয়ে এবং অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ করিয়ে ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করেছে। মন্তব্য শাহের। সিএএ-র পক্ষেও আওয়াজ তোলেন তিনি। শাহ বলেন, ‘‘যত খুশি বিরোধ করে ফেলুক তৃণমূল, হিন্দু ভাইদের নাগরিকত্ব দেওয়া থেকে কেউ রুখতে পারবে না।’’
শাহ আরও বলেন, ‘‘বাংলায় ভোট-পরবর্তী হিংসা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। আজকেও বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।’’
তৃণমূলের গুন্ডারা দুর্গাপুর থেকে তোলা তুলে ভাইপোকে দেয়। মন্তব্য করলেন শাহ। পাশাপাশি তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ বছর দুর্গাপুরে থাকলেও এই কেন্দ্র জিততে পারবেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্যের মন্ত্রীর কাছ থেকে টাকা উদ্ধার হয়। বহু কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।’’
বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মতো দল কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রেখে দিয়েছিল। আর সেই কারণেই সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের রমরমা বৃদ্ধি পেয়েছিল। মন্তব্য করলেন শাহ। পাশাপাশি রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করেন তিনি।
তৃণমূল এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং কংগ্রেস দল রামমন্দির তৈরির পথে বাধা দিচ্ছিল। প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওঁরা যাননি। ভোট ব্যাঙ্কের ভয়ে যাননি। ভোটব্যাঙ্কের ভয়ে রামকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল।’’
‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের মাধ্যমে জনসভায় বক্তৃতা শুরু করলেন অমিত শাহ। দিলীপ ঘোষের প্রশংসা করে শাহ বলেন, ‘‘দিলীপদা বড় নেতা। অনেক দিন ধরে দলের সঙ্গে রয়েছেন।’’
রাজ্যপালের চরিত্রহননের চেষ্টা করছে তৃণমূল। সন্দেশখালির ‘ডিপফেক’ ভিডিয়ো বানিয়ে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করেছে শাসকদল। দুর্গাপুরে মন্তব্য করলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ।
সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ কৃষ্ণনগরের বেলডাঙা মোড় থেকে শাহের রোড-শো হয়। ‘রানিমা’ অমৃতা রায়ের হয়ে প্রচারের পরে দুপুরেই তিনি চলে যান দুর্গাপুরে। সেখানে সভা করবেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থী দিলীপ ঘোষের হয়ে।