Sandeshkhali Incident

সন্দেশখালির ধর্ষণকাণ্ড সাজানো? স্টিং-ভিডিয়ো প্রসঙ্গে ‘ধর্ষিতা’র আত্মীয় আনন্দবাজার অনলাইনে

আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিযোগপত্রে সই থাকা সেই মহিলার বৌদি জানিয়েছেন, ননদকে ধর্ষণ করা হয়নি। শাহজাহান এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছিল, তা মিথ্যা।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ১৮:৩৩
Share:

সন্দেশখালির সেই ভাইরাল ভিডিয়ো। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

ধর্ষিতা হননি সন্দেশখালির জুঁই (নাম পরিবর্তিত)। অথচ তাঁরই সই করা কাগজে ধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁর কাছে পৌঁছেছিল এসসিএসটি কমিশন! আনন্দবাজার অনলাইনকে তেমনটাই জানালেন জুঁইয়ের বৌদি অর্পিতা (নাম পরিবর্তিত)। শনিবার সকাল থেকেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিষয়, সন্দেশখালি নিয়ে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়ো। যে ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। সেই ভিডিয়োতে এক মহিলাকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। ভিডিয়োতে তিনি দাবি করেছেন, তাঁকে ধর্ষণ করেননি শাহজাহানরা। লেখাপড়া না জানার কারণে ‘না বুঝেই’ অভিযোগপত্রে সই করেছিলেন তিনি। এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ফোন ধরেন তাঁর বৌদি। সেই বৌদিও জানিয়েছেন, শাহজাহান এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের অভিযোগ তাঁর ননদের সই করা কাগজের মাধ্যমে করা হয়েছিল, তা মিথ্যা। পাশাপাশি এ-ও দাবি করেছেন, ভিডিয়ো ভাইরাল করে তাঁর ননদকে ফাঁসানো হচ্ছে। এর নেপথ্যে তৃণমূল রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

Advertisement

ভাইরাল ভিডিয়োয় যে মহিলাকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে, তিনি সন্দেশখালির একটি এলাকার বাসিন্দা। ভিডিয়োতে এক প্রশ্নকর্তাকে তাঁকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, তাঁর সই করা কাগজে শাহজাহান, শিবুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছিল কি না। সেই প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে সম্মতি জানাতেও শোনা যায় ওই মহিলাকে। অর্থাৎ, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়নি। পরে তিনি জানান, সন্দেশখালি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলাকালীন রাতের অন্ধকারে কয়েক জন এসে তাঁর কাছে ওই অভিযোগপত্রে সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছে। পুরো অভিযোগপত্র ইংরেজিতে থাকায় তিনি অভিযোগপত্রের বিষয়বস্তু ‘বুঝতে পারেননি’। ‘না বুঝেই’ সই করে দিয়েছেন অভিযোগপত্রে। পরে এসসিএসটি কমিশনার তাঁকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ঘাবড়ে যান। তাঁর হয়ে এসসিএসটি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁর বৌদি।

আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিযোগপত্রে সই থাকা সেই মহিলার বৌদি জানিয়েছেন, ননদকে ধর্ষণ করা হয়নি। শাহজাহান এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছিল, তা মিথ্যা। শাহজাহান, শিবুদের সঙ্গে সে ভাবে চেনাজানাও ছিল না। সন্দেশখালিকাণ্ডে মিটিংয়ের নামে ডেকে মহিলাদের উপর নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠে এসেছিল, তেমনটাও তাঁর ননদের সঙ্গে হয়নি।

Advertisement

অর্পিতা বলেন, ‘‘ননদ পড়াশোনা জানে না। ওই কাগজে ইংরেজিতে কী লেখা ছিল, তা বুঝতে পারেনি। এসসিএসটি কমিশনার এসে বললেন যে কাগজে ধর্ষণের কথা লেখা আছে। কিন্তু ওর সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আগেও ও স্বীকার করে যে, ওর সঙ্গে কিছু হয়নি। কে লিখেছিল, বুঝতে পারছি না। তখন খুব আন্দোলন চলছিল। অনেকে এসে সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ইংরেজিতে। তাড়াতাড়ি করে এসে সই নিয়ে চলে যায়। তার পর যখন ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন ও কিছু বলতে পারেনি। ও কিছু জানে না বলে জানিয়েছিল। আমিও কথা বলি।’’

তাঁর ননদ যে ধর্ষিতা হননি, তা পুলিশকে জানিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন অর্পিতা। দিল্লি থেকে এসসিএসটির কমিশনার এসে তথ্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, শাহজাহানকে তাঁরা কেউই ভাল ভাবে চিনতেন না। তাঁর কথায়, ‘‘শাহজাহানকে চিনতাম বললে ভুল হবে। আমরা এখানকার ছেলেমেয়ে। তাই নিশ্চয়ই দেখেছি। এক বার মিটিংয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ধর্ষণ করা হয়নি। এই সব দেখিয়ে আমাদের ডাকা হচ্ছে। ভিডিয়ো করে নিচ্ছে। আমরা ফেঁসে যাচ্ছি। আমরা মিথ্যা বলিনি। পুলিশও জানে।’’ অভিযোগপত্রে সই করানোর জন্য ননদকে ভয় দেখানো হয়নি বা টাকা দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেছেন বৌদি।

শনিবার ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় গঙ্গাধর কয়াল নামে এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। তাঁর পরিচয় হিসাবে ভিডিয়োতে বলা হয়েছে, তিনি সন্দেশখালি ২ ব্লকের ‘মণ্ডল সভাপতি’। যদিও স্থানীয় বিজেপির দাবি, গঙ্গাধর আদৌ মণ্ডল সভাপতি নন। সেই গঙ্গাধরকেও এক মহিলা প্রসঙ্গে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আরও তিন জনকে দিয়ে অভিযোগ করানোর চেষ্টা করেছিলাম। ওরা ঠিক ঠিক রাজি হল না। ভয় পেয়ে গেল। এসসিএসটি কমিশনার প্রথমে এসে যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, সে একদম ঘাবড়ে যায়। এসসিএসটি কমিশনার তো জানতেন না যে বিষয়টি সাজানো। কিন্তু ওই মহিলা তো জানে যে মিথ্যা কথা বলছে। তাই বলতে গিয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিল। এত বড় অফিসারের সামনে কত মিথ্যা বলবে?’’ তবে গঙ্গাধর যে মহিলার কথা বলেছেন এবং যে মহিলার বৌদির সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে কথা বলা হয়েছে, তাঁরা একই ব্যক্তি কি না, তা ভিডিয়ো থেকে স্পষ্ট নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement