Sandeshkhali Sting Operation

শুধু ‘ফেক’ নয়, ‘ডিপফেক’ হতে পারে সন্দেশখালির স্টিং ভিডিয়ো: শুভেন্দু ।। ভয়ে পালাচ্ছেন: শান্তনু

সন্দেশখালির ‘স্টিং’ ভিডিয়োয় কণ্ঠস্বর বিকৃত করা হয়ে থাকতে পারে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন শুভেন্দু অধিকারী। এ বার তাঁর আশঙ্কা, ভিডিয়োটি ডিপফেক প্রযুক্তিতে তৈরি হয়ে থাকতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ১২:১৬
Share:

সন্দেশখালি নিয়ে তরজা বিজেপি-তৃণমূলের। —ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালির ‘স্টিং’ ভিডিয়োয় কণ্ঠস্বর বিকৃত করা হয়ে থাকতে পারে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ বার তাঁর আশঙ্কা, ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োটি ডিপফেক প্রযুক্তিতে তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তাঁর দাবি, ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিপফেকের যুগে প্রযুক্তিকে তো ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছেই।’’ এ নিয়ে নাম না করে ফের তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের পরামর্শদাতা সংস্থা ‘আইপ্যাক’কে নিশানা করলেন বিরোধী দলনেতা। তাঁকে পাল্টা জবাব দিলেন তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন।

Advertisement

শনিবার সকালে প্রকাশ্যে আসা সন্দেশখালির ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। ভিডিয়োটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। গোপন ক্যামেরায় তোলায় সেই ভিডিয়োয় সন্দেশখালির বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল দাবি করেছেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সন্দেশখালিতে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগগুলি ‘সাজানো’ ছিল! মহিলারা টাকার বিনিময়ে শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেছিলেন এবং গোটাটাই শুভেন্দুর ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ বলে দাবি করেছেন ওই পদ্মনেতা। শুভেন্দুর সেই দিনই দাবি করেন, ভিডিয়োটি সাজানো। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা তৃণমূলের গলা না কার গলা! গলা যে কারও বিকৃত করা যায়।’’ হুঁশিয়ারিও দেন অভিষেককে। ভিডিয়ো ঘিরে শোরগোলের মধ্যে গঙ্গাধরও দাবি করেন, তাঁর কণ্ঠস্বর বিকৃত করা হয়েছে। এ নিয়ে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগও করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, এর নেপথ্যে আইপ্যাক এবং অভিষেক রয়েছেন।

শুভেন্দু এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্টে তাঁর বক্তব্য, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের ডিপফেক ভিডিয়ো বানিয়ে এখন হামেশাই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের জালিয়াতির জন্যই ‘ভাইপো’ এবং আইপ্যাক পরিচিত। শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘হাতিকে রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। এই ধরনের কাজকর্ম তাদের দলীয় প্রার্থীদের খানিক স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু সাধারণের মনে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

Advertisement

পাল্টা তৃণমূলের শান্তনু বলেন, ‘‘সত্য সামনে এসেছে। শুভেন্দু অধিকারী ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাই এই নতুন চিত্রনাট্য।’’

স্টিং ভিডিয়োতে সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে দেখা গিয়েছে। ভিডিয়োয় গঙ্গাধর জানাচ্ছেন, সন্দেশখালিতে মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মেয়েদের দিয়ে সাজিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে। গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে এক মহিলার নাম করে বলতে শোনা যায়, তাঁকে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়ে সাত-আট মাস আগে গণধর্ষণ হয়েছে বলে অভিযোগ করতে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা-ই করেছিলেন। শুভেন্দুর আপ্তসহায়কের (পীযূষ) নাম উল্লেখ করে গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে বলতে শোনা যায়, “পীযূষ ন্যাজাটের শুভঙ্কর গিরি (বিজেপির সন্দেশখালি বিধানসভার আহ্বায়ক)-কে বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। আর শুভঙ্কর আমাকে বলে দিত, আমি সেই মতো কাজ করতাম।” প্রশ্নোত্তর পর্বের ওই ভিডিয়োর একটি অংশে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যায়, “শুভেন্দুবাবুর নির্দেশে সব হয়েছে। উনি আমাদের বলেন, এখানে তাবড় নেতাদের গ্রেফতার করাতে না পারলে তোমরা দাঁড়াতে পারবে না। আর গ্রেফতার করাতে গেলে ধর্ষণের অভিযোগ করাতে হবে।’’

এ নিয়ে রবিবারও জঙ্গিপুরের সভা থেকে অভিষেককে নিশানা করে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘সন্দেশখালিকে জাগ্রত করে দিয়েছেন আপনি। ওখানে ১০ বছর ধরে আপনার লোকেরা মাঝরাতে মহিলাদের ডেকে তাঁদের সঙ্গে কী করেছে, গোটা দেশের লোক জেনেছে। খুব কাঁচা স্ক্রিপ্ট লিখেছে। কোথায় এটাকে নিয়ে যাই, দেখবেন শুধু। ভাইপো বলেছে, আমাকে জেলে ঢোকাবে। আমি তো বলেছি, কয়লা ভাইপো জেলে যাবে।’’

স্টিং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন অভিষেক। বলছিলেন, ‘‘বিজেপির একটা নির্লজ্জ চেষ্টা প্রকাশ্যে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিন থেকে বলে আসছেন, সন্দেশখালিতে যা বলা হচ্ছে, তা হয়নি। এর আগেও কলকাতার রাজপথে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। আমরা শুধু শুধু বিজেপিকে বাংলা-বিরোধী বলি না। নির্লজ্জতার সমস্ত নজির ভেঙে দিয়েছে।’’ স্টিং অপারেশন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত খবরের ফুটেজও সাংবাদিক বৈঠকে দেখিয়েছিলেন অভিষেক। তাতে মোদী, শুভেন্দুর করা নানা মন্তব্যের ফুটেজও ছিল। অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘শুভেন্দু তো বলেছেন, ৩৫৫ জারির পরিস্থিতি তৈরি হবে। প্রায়ই এই সব বলছেন। বলে থাকেন। এমনও বলেন, ২০২৬ সালে ভোট হবে না বাংলায়। তার আগেই সরকার ভেঙে দেব। পিঠে, পাটিসাপটা বানানো নিয়ে কত কথা বলেছিল সংবাদমাধ্যম। কী ভাবে খবর প্রকাশ হয়েছিল! আর এখন এরা বলছে, ধর্ষণই হয়নি। উল্টে যাতে মেডিক্যাল পরীক্ষা না হয়, সে জন্য ৭ মাস আগের অভিযোগ দায়ের করেছে। সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গকে বদনাম করেছে বিজেপি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement