Lok Sabha Election 2024

২০১৯-এ চতুর্মুখী লড়াইয়ে রায়গঞ্জের রায় গিয়েছিল পদ্মে, এ বার যুদ্ধ ত্রিমুখী

এ বারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের আসনগুলির মধ্যে সব চেয়ে বেশি জল্পনা রায়গঞ্জ আসনকে নিয়ে। আসলে এই সংসদীয় এলাকায় যেমন অনেক দলবদলের ঘটনা ঘটেছে তেমনই রাজনৈতিক অঙ্কও বদলে গিয়েছে।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের কোন কেন্দ্র নিয়ে এ বার জল্পনা সবচেয়ে বেশি? রায়গঞ্জ। কারণ, পাঁচ বছর আগে অঙ্কের দৌলতে পদ্ম ফুটেছিল এই আসনে। এ বার অঙ্ক পাল্টাতে সব পক্ষই বদলে দিয়েছে প্রার্থী।

Advertisement

২০১৯ সালে এই আসন থেকে জিতে বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে এ বার তাঁকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। বদলে দেবশ্রী লড়ছেন কলকাতা দক্ষিণে। যদিও বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, দেবশ্রীর জন্য কলকাতা দক্ষিণের মতোই কঠিন ছিল রায়গঞ্জ। দেবশ্রী নিজে দমদমে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দল দেয়নি।

২০১৯ সালে রায়গঞ্জে বাম-কংগ্রেস জোট ছিল না। বাম এবং কংগ্রেস— উভয়পক্ষই ‘ওজনদার’ প্রার্থী দিয়েছিল। ২০০৯ সালে এই আসন থেকে সংসদে গিয়েছিলেন দীপা দাশমুন্সি। প্রয়াত কংগ্রেসনেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী জিতেছিলেন লক্ষাধিক ভোটে। তার আগে পর পর দু’বার রায়গঞ্জ থেকে সাংসদ হয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। হাজার চল্লিশ ভোট পেয়ে বিজেপি তৃতীয়। পরের বার ২০১৪ সালে সিপিএম প্রার্থী করে মহম্মদ সেলিমকে। সামান্য ভোটে হলেও দীপাকে হারিয়ে দেন সেলিম। তবে কংগ্রেস এবং সিপিএম দু’দলেরই ভোট কমেছিল। সেই ভোট গিয়েছিল বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা নিমু ভৌমিকের বাক্সে। তিনি পেয়েছিলেন দু’লাখের বেশি ভোট। আর প্রিয়রঞ্জনের ভাই সত্যরঞ্জন দাশমুন্সিকে প্রার্থী করে ভোট বাড়িয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। চতুর্থ স্থানে থাকলেও তাদের ভোট ছিল বিজেপির কাছাকাছি।

Advertisement

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৯ সালে সেই তৃতীয় ও চতুর্থ বিজেপি এবং তৃণমূলের লড়াই হয়। বিজেপির দেবশ্রীর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করে ইসলামপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে। অন্য দিকে, কংগ্রেসের টিকিটে দীপা এবং সিপিএমের টিকিটে সেলিমও প্রার্থী হন। বিজেপির ভোট আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছিল। তৃণমূলেরও ভোটপ্রাপ্তির হার বাড়ে। কিন্তু রাজ্যের বাকি সব জায়গায় কংগ্রেস বা বামের ভোট যতটা কমেছিল, ততটা এখানে হয়নি। সেলিম ১,৮৩,০৩৯ এবং দীপা ৮৩,৬৬২ ভোট পান। তাতেই কানাইয়ালালকে হারিয়ে জিতে যান দেবশ্রী। ব্যবধান ৬০,৫৭৪ ভোট। রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়, বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগাভাগি না হলে এমন ফল হত না।

এবার রায়গঞ্জে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী আছেন। তিনি কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রম‌্জ। রাজ্য রাজনীতিতে যিনি বেশি পরিচিত ‘ভিক্টর’ নামে। ভিক্টর আগে ছিলেন বামফ্রন্টের দল ফরওয়ার্ড ব্লকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে চাকুলিয়ায় লড়ে তৃতীয় হয়েছিলেন। অনেকে মনে করছেন, যুদ্ধের ময়দানে ভিক্টর থাকায় সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ ভাগাভাগি হতে পারে। তাতে লাভ হবে বিজেপির। রায়গঞ্জে এ বার বিজেপি প্রার্থী করেছে তৃণমূল থেকে আসা কার্তিক পালকে। একটা সময়ে তিনি কালিয়াগঞ্জ পুরসভায় তৃণমূলের চেয়ারম্যান ছিলেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূল প্রার্থী করেছে ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে রায়গঞ্জ বিধানসভা আসন থেকে জেতা কৃষ্ণ কল্যাণীকে।

অর্থাৎ, তিন ‘দলবদলু’ রাজনীতিকের লড়াই দেখছে রায়গঞ্জ। গত লোকসভার নিরিখে এই আসনের চারটি বিধানসভা আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বিধানসভায় জয় পায় দু’টিতে। সেই দুই আসনের বিধায়ক রায়গঞ্জের কৃষ্ণ এবং কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায়ও পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তবে ভোটের আগে আগেই সৌমেন বিজেপিতে ফিরেছেন। বিজেপি সম্প্রতি দলে ফিরিয়েছে প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়িকেও। একটা সময়ে রায়গঞ্জে বিজেপির ‘রাজবংশী নেতা’ হিসাবে পরিচিত রূপক রায় এবং দ্বারিকনাথ বর্মণ এ বার নির্দল প্রার্থী।

মোটামুটি এই হল রায়গঞ্জে এ বারের ভোটের অঙ্ক। বিধানসভা ভোটে এই লোকসভা আসনের অন্তর্গত বিধানসভাগুলিতে অনেকটাই এগিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এ রাজ্যের সাম্প্রতিক অতীতের নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, লোকসভার সঙ্গে বিধানসভার আসনপ্রাপ্তি মেলে না। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং তার পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ছবি দেখিয়েছে। ২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। কিন্তু ২০১৯ সালে অনেকটাই উত্থান হয়েছিল বিজেপির। কিন্তু ২০২১ সালে সেই বিজেপিকেই আবার পরাভূত করে ক্ষমতায় ফেরত এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রায়গঞ্জ কি গত লোকসভা ভোটের ছবিতে ফিরবে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement