গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক পালাবদল দেখেনি জলপাইগুড়ি। জল্পেশ্বর শিবের দেশ সিপিএমের দখলে ছিল প্রায় তিন দশক। ১৯৮০ সাল থেকে টানা ২০০৯ পর্যন্ত সিপিএম জিতেছে এই লোকসভা আসন। কিন্তু বদল আসে ২০১৪ সালে। তৃণমূল দখল করে নেয় জলপাইগুড়ি। ২০০৯ সালেও সিপিএম যেখানে ৮৮,৩৭১ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল, সেখানে তৃণমূল পাঁচ বছর পরেই জয় পায় ৬৯,৬০৬ ভোটে।
কিন্তু তার পাঁচ বছর পরেই ছবি একেবারে বদলে যায়। তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি উঠে আসে প্রথম স্থানে। তারা জেতে ১,৮৪,০০৪ ভোটে। সিপিএম চলে যায় তৃতীয় স্থানে। ঝুলিতে মাত্র ৫.০৭ শতাংশ ভোট। সেখানে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ৫০.৬৫ শতাংশ। তৃণমূলের ৩৮.৩৯ শতাংশ। বিজেপির চিকিৎসক সাংসদ জয়ন্তকুমার রায় এ বারেও পদ্মের প্রার্থী। যদিও কোনও অজ্ঞাত কারণে তাঁর নাম ঘোষণা করতে অনেকটা সময় নিয়ে নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এই আসনে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছ’টিতেই এগিয়ে ছিলেন জয়ন্ত। শুধু রাজগঞ্জে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচন এই আসনের ছবি একটু হলেও বদলে দেয়। রাজগঞ্জের সঙ্গে মেখলিগঞ্জ, জলপাইগুড়ি এবং মাল বিধানসভা আসনে জয় পায় তৃণমূল। এর পরে আরও একটা বদল এসেছে। ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে হওয়া উপনির্বাচনে জয় পায় তৃণমূল। সেই হিসাবে জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনের পাঁচটি বিধানসভা এখন তৃণমূলের। বিজেপির হাতে শুধু ময়নাগুড়ি এবং ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি। এখানেই জলপাইগুড়ি ফিরে পাওয়ার অঙ্ক কষছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল।
তবে এই অঙ্কে শাসক শিবিরের একাংশ আবার খুব বেশি ভরসাও করতে পারছেন না। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনে এখানকার সাত বিধানসভার যে মোট ফলাফল, তাতে এগিয়ে বিজেপি। পদ্মের হাতে ৪৫.৮৪ শতাংশ ভোট আর তৃণমূলের কাছে ৪৩.০৪ শতাংশ। সেই হিসাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে জলপাইগুড়ি। আশ্চর্য নয় যে, এই লোকসভা আসনের জন্য আলাদা করে নির্বাচনী জনসভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তবে তৃণমূলের কাছে এই আসনে ‘সম্ভাব্য জয়’ নিয়ে বলার মতো যুক্তিও রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরেই নতুন মহকুমা হয়েছে ধূপগুড়ি। উপনির্বাচনের আগে ধূপগুড়িকে মহকুমা করার কথা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উপনির্বাচনে জিতে সেই কথা রাখেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জিতেছিলেন নির্মলচন্দ্র রায়। লোকসভায় ধূপগুড়িতে জয়ী বিধায়ক নির্মলচন্দ্রকেই প্রার্থী করেছেন মমতা। সম্প্রতি টর্নেডোর তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত জলপাইগুড়ি নিয়েও বিজেপি বনাম তৃণমূল যুদ্ধ লাগে। মুখ্যমন্ত্রীর ঝড়ের রাতেই অকুস্থলে পৌঁছে যাওয়া, জলপাইগুড়ি গিয়ে অভিষেকের ক্ষতিপূরণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করা ইত্যাদি ঘাসফুলকে ‘বাড়তি সুবিধা’ করে দিতে পারে বলেই মনে করছেন শাসকদলের জলপাইগুড়ি নেতৃত্ব। যদিও বিজেপির দাবি, লোকসভা নির্বাচনে মানুষ মোদীকে দেখে, কেন্দ্রের কাজ দেখে ভোট দেবেন।