মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
তিনি কি সিবিআই, ইডির ‘চক্রব্যূহে’ ঢুকে গিয়েছেন? লোকসভা ভোটের আগেই কি তাঁর জায়গা হবে গরাদের ও পারে? আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে এ হেন প্রশ্নে স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিলেন বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ তথা কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘‘জেলের বাইরে থেকে লড়লেও জিতব! ভিতরে থেকে লড়লেও জিতব। বিজেপি যা-ই হাওয়ায় ভাসাক না কেন, কোনও লাভ হবে না।’’
তা হলে জেলে যাওয়ার কি কোনও সম্ভাবনা রয়েছে মহুয়ার? সেই প্রশ্নেও কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থীর জবাব স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ‘‘সেটা বিজেপিই ভাল বলতে পারবে। এটা সম্পূর্ণ ওদের হাতে। এই ভোটটা ওরা এজেন্সি দিয়ে করাতে চাইছে। ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ওরা পিষে ধ্বংস করে দিয়েছে।’’
ভোটের অব্যবহিত আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি একাধিক রাজ্যে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে। যা দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে এমকে স্ট্যালিন, তেজস্বী যাদবরা প্রায় রোজই বলছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির সবচেয়ে বড় শাখা সংগঠন হয়ে নেমেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। মহুয়ারও বক্তব্য একই। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা (বিজেপি) এই ভোটটাকে এজেন্সি দিয়ে করাতে চায়। তাই ওরা যা করার করবে। কিন্তু ভোটবাক্সে শেষ কথা বলেন মানুষই।’’
সংসদে ‘প্রশ্নঘুষ’কাণ্ডে মহুয়ার সাংসদপদ খারিজ হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। কিন্তু সংসদের শেষ দিনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার বয়স এখন ৪৯ বছর। আরও অন্তত ৩০ বছর আমি সংসদের ভিতরে-বাইরে লড়াই করব। আমায় কেউ রুখতে পারবে না।’’ কবিতা উদ্ধৃত করে মহুয়া সে দিনই বলেছিলেন, ‘‘আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই, স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই!’’ সাক্ষাৎকারেও সেই একই কথা জানিয়েছেন মহুয়া। তিনি বলেছেন, ‘‘গত ৮ ডিসেম্বর সংসদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম, ওদের চিতা তুলব। আজও বলছি, চিতায় তুলবই!’’
সাংসদের লগ-ইন আইডির পাসওয়ার্ড দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরান্দানিকে দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, যে কারণে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হতে হয় মহুয়াকে, কৃষ্ণননগরের তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, তার কোনও ভিত্তিই নেই। যে কথা বলা হচ্ছে, তার কোনও আইনই ছিল না। মহুয়া বোঝাতে চেয়েছেন, যে হেতু তিনি সংসদে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সরব হয়েছেন, প্রশ্ন তুলেছেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে একটি ‘সাজানো’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
মহুয়ার শুধু সাংসদপদই যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই এবং ইডি তদন্তে নেমেছে। কলকাতার বাসস্থান, নদিয়ার করিমপুরের বাড়ি, কৃষ্ণনগরের ভাড়াবাড়ি এবং সাংসদের দফতর— সর্বত্র হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এই সমগ্র ঘটনাপ্রবাহকে ভোটের সময়ে তাঁর ‘ফোকাস’ নষ্টের কৌশল হিসেবে দেখাতে এবং দেখাতে চাইছেন মহুয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা চায় বিরক্ত করতে! ভোটের সময়ে ফোকাস দরকার হয়। কিন্তু ওরা রোজ সমন পাঠিয়ে বা নানা ভাবে হেনস্থা করছে। চাইছে নড়বড়ে করে দিতে। কিন্তু আমি যদি মনস্থির করে নিই যে, এটা আমার লড়াই, আমার জমি, তা হলে কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।’’