শান্তনু ঠাকুর এবং মমতাবালা ঠাকুর। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে এ বার ‘শারীরিক নিগ্রহের’ অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। মতুয়া ধর্ম মহামেলা চলাকালীনই রবিবার রাতে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে। বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনুর বিরুদ্ধে তালা ভেঙে মতুয়াদের প্রয়াত বড়মা বীণাপাণিদেবীর ঘরের ‘দখল’ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মমতাবালার দাবি, বড়মার ঘরে ঢোকার সময় তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছেন শান্তনু! তৃণমূল সাংসদের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেখানে ‘নারীর সশক্তিকরণ’ নিয়ে নানাবিধ দাবি করে থাকেন, সেখানে তাঁরই ‘পরিবারের সদস্য’ এক মহিলার উপর অত্যাচার করেছেন। দেশে বিজেপির শাসনকালে এক জন রাজ্যসভার সাংসদের উপর যদি এমন ‘অত্যাচার’ হয়, তা হলে সাধারণ মহিলাদের কী অবস্থা হতে পারে আগামী দিনে, সেই প্রশ্ন তুলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মমতাবালা।
মমতাবালার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে শান্তনুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘ঠাকুরবাড়িতে কী হয়েছে, সে ব্যাপারে বলে দিয়েছেন আমাদের প্রার্থী তথা দেশের মন্ত্রী। কিন্তু মহিলাদের উপর নির্যাতন নিয়ে সন্দেশখালিকাণ্ডের পর তৃণমূলের আর মুখ খোলাই উচিত নয়। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর মানুষ জানেন, নরেন্দ্র মোদী নারী সশক্তিকরণের জন্য কী ভাবেন আর কী কী করেছেন। একই ভাবে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপের মানুষ জানেন, তৃণমূল নারীদের কী চোখে দেখে, আর কী কী অপরাধ করেছে।’’
২০১৯ সালে প্রয়াত হন বীণাপাণি দেবী। ঠাকুরবাড়িতে যে ঘরে তিনি থাকতেন, সেই ঘরেই রবিবার রাতে দলবল নিয়ে শান্তনু চড়াও হন বলে অভিযোগ উঠেছে। দাবি, শাবল, হাতুড়ি দিয়ে তিনি নিজেই তালা ভাঙেন। পরিবারের আরও কয়েক জন ছিলেন তাঁর সঙ্গে। বীণাপাণিদেবী বেঁচে থাকাকালীন তাঁর পাশের ঘরে থাকতেন ঠাকুরবাড়ির বড় বৌমা মমতাবালা। বর্তমানে তিনি থাকেন বীণাপাণিদেবীর ঘরটিতেই। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বড়মা বীণাপাণিদেবী নারী সমাজে সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন। তাঁকে সকলে বড়মা বলে পুজো করি। মোদীর পরিবারের সদস্য শান্তনু ঠাকুর জুতো পায়ে লাথি মেরে তালা ভেঙে বড়মার ঘরে ঢুকে আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। আমি ও আমার মেয়ে ঘরের দরজার পাশে বসেছিলাম। আমাদের ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বড়মার ঘরে জুতো পায়ে ঢুকেছে।’’
ঠাকুরবাড়ির ঘটনা নিয়ে বিজেপিকেও নিশানা করেছেন মমতাবালা। তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী নানা জায়গায় নারীর সশক্তিকরণ নিয়ে অনেক কথা বলেন। তাঁর দলের লোক মহিলাদের উপর এ ভাবে অত্যাচার করছে! রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে যদি আমাকে এই অত্যাচার সহ্য করতে হয়, তা হলে ভাবুন, ২০২৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এলে দেশের সাধারণ মহিলাদের হাল কী হবে? আমি সমগ্র নারী সমাজের কাছে বিচার চাই।’’ শান্তনু মতুয়াদের আবেগে আঘাত করেছেন বলে দাবি করেছেন মমতাবালা। তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, বড়মার প্রতি যে কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা রয়েছে, সেই শ্রদ্ধাকে আঘাত করেছে শান্তনু ঠাকুর।’’
মমতাবালার বক্তব্য, ১৯৮৫ সাল থেকে ওই বাড়িতে থাকেন তিনি। শান্তনুরা সেখানে থাকেন না। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ-প্রশাসনকেও জানাবেন বলে জানিয়েছেন। রবিবারই বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেছেন, ‘‘অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’ ঠাকুরবাড়ির ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, শান্তনু তাঁর দলবল নিয়ে বড়মার ঘরের ‘দখল’ নেওয়ায় সারা রাত বাইরে কাটাতে হয়েছে মমতাবালা ও তাঁর মেয়েকে। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূলের প্রশ্ন, মোদী তো ‘নারী শক্তি’ নিয়ে এত কথা বলেন, এক মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে লাগাতার হামলার ঘটনায় কি তিনি তাঁর মন্ত্রী (শান্তনু)-র বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবেন? না কি এই ধরনের হামলার ঘটনাকে সমর্থন করেন মোদী?
হামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবারই বিবৃতি দিয়েছিলেন শান্তনু। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার ঠাকুরদার বাড়িতে আমার সমান অধিকার। সেখানে তালা ভেঙে ঢুকব না কী ভাবে ঢুকব, আমার ব্যাপার। একটা ঘরে উনি (মমতা ঠাকুর) থাকুন, অন্য ঘরটি আমরা বুঝে নিয়েছি। মমতা ঠাকুর পুরো বাড়িটাই জবরদখল করে রেখেছিলেন।’’ দল হিসাবে বিজেপি অবশ্য ঠাকুরবাড়ির ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের মদতে মমতাবালা ঠাকুর এই ধরনের অভিযোগ করছেন। বিজেপি ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ঢুকবে না। বিজেপি চায়, ঠাকুরবাড়ির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকুক।’’ মন্তব্য করতে চাননি দিলীপ ঘোষও। বলেছেন, ‘‘এটা ওঁদের পারিবারিক বিষয়। এ নিয়ে কিছু বলব না।’’