দিলীপ ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
মেদিনীপুর আসনে প্রার্থী হয়ে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘আমি এখানকার ভূমিপুত্র।’’ আসলে অখণ্ড মেদিনীপুরের, এখন ঝড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে দিলীপের জন্ম-শিক্ষা। সেই অর্থেই তিনি এমনটা বলতেন। তবে এখন বলছেন, ‘‘বর্ধমান-দুর্গাপুর আমার কর্মভূমি।’’ বলছেন, এই কারণেই যে, আরএসএস প্রচারক থাকার সময়ে তৎকালীন অখণ্ড বর্ধমান জেলাতেই দায়িত্বে ছিলেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি হিসাবে বাংলার অন্যান্য জায়গার সঙ্গে বর্ধমান-দুর্গাপুরেও আগে এসেছেন। ২০১৯ সালে এই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তখন প্রচারেও এসেছেন। তাই দিলীপ প্রার্থী হওয়ার পরে নতুন আসনের উদ্দেশে কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার আগে বলেন, ‘‘গোটা বাংলাই আমার এলাকা। আমি যেখানেই যাই, জেতার জন্য যাই।’’
সোমবার সকালে দিলীপকে যাঁরাই ‘শুভ দোলযাত্রা’ বলেছেন, তাঁদের দিলীপ পাল্টা বলেন, ‘‘শুভ বিজয় যাত্রা।’’ নেতা থেকে কর্মী, সাংবাদিক সকলকেই বলেন, ‘‘দোলযাত্রা আমার কাছে বিজয় যাত্রা। আজ থেকেই আমি বিপুল জয়ের জন্য যাত্রা শুরু করলাম।’’ মেদিনীপুরে প্রার্থী হতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের তৈরি করা জমিতে এ বার আর ফসল তুলতে পারলেন না। তবে তাঁর দাবি, ‘‘বীজ আমি ছড়িয়ে এসেছি। বিজেপি ওই আসনে জিতবেই।’’ প্রসঙ্গত, দিলীপের পরিবর্তে মেদিনীপুর লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে রাজ্যে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালকে।
দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা দাবি করেন, খড়্গপুর শহরে দিলীপের মূল আস্তানা হলেও তিনি নিয়মিত সবক’টি বিধানসভা এলাকাতেই সফর করতেন। মেদিনীপুরেই প্রার্থী হবেন ধরে নিয়ে গত এক বছরে লোকসভা আসনের অন্তর্গত দেড় হাজার গ্রামেও ঘুরে ফেলেছিলেন। কিন্তু নতুন আসন বর্ধমান-দুর্গাপুরে কী স্ট্র্যাটেজি হবে তাঁর? দিলীপ বলেন, ‘‘এখানেও আমি এক ভাবেই কাজ করব। ওটাই আমার পদ্ধতি। সব জায়গায় রাত্রিবাস করব। জেলার কার্যকর্তাদের বলে দিয়েছি, আমার জন্য কোনও প্রাসাদ চাই না। সব বিধানসভা এলাকাতেই কর্মীদের বাড়ি বা কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ এক আসনের জন্য দিলীপের ‘সপ্তদ্বীপ’ খোঁজার কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের মধ্যে সাতটি বিধানসভা আসন হল বর্ধমান দক্ষিণ, বর্ধমান উত্তর, দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম, মন্তেশ্বর, ভাতার, গলসি। এর মধ্যে একটিই বিজেপির। ২০২১ সালে নীলবাড়ির লড়াইয়ে দুর্গাপুর পশ্চিম থেকে জিতেছিলেন বিজেপির লক্ষ্মণচন্দ্র ঘড়ুই। বাকি জায়গায় সংগঠন থাকলেও বিজেপির পরিস্থিতি ঠিক কেমন, সেটাই আগে দেখে নিতে চান দিলীপ। সোম এবং মঙ্গলবার নেতা, কর্মীদের সঙ্গে দোল খেলার পাশাপাশি সাংগঠনিক বৈঠকও সেরে নিতে চান তিনি। মঙ্গলবার গোটা লোকসভা এলাকার জেলা এবং মণ্ডল স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন। দিলীপ জানিয়েছেন, এর পরেই শুরু হয়ে যাবে তাঁরা বিধানসভা ধরে ধরে গ্রাম-সফর। সেই সময়েই প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় রাত্রিবাস করতে চান তিনি।
দিলীপের নাম এই আসনের জন্য যে ঘোষণা হতে পারে, সেটা অনেকটাই স্পষ্ট ছিল। তাই রবিবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যায় জেলার বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। বিশেষ করে বিজেপির আদি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উল্লাস দেখা যায়। রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় দেওয়াল লেখা। আর সোমবার দুপুর হতে না হতেই কলকাতা থেকে বর্ধমানে পৌঁছে যান দিলীপ। জাতীয় সড়কের প্যামড়া মোড়ে মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ পৌঁছলেই শুরু হয় মিছিল। দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা দিলীপকে নিয়ে যান জেলা দফতরে।
প্রথমে নেতা, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পরে সাংবাদিকদেরও মুখোমুখি হন দিলীপ। নিজস্ব ভঙ্গিতেই তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ সম্পর্কে বলেন, ‘‘আমার বিপরীতে কে আছেন দেখি না। আমি বোলার দেখি না, বল দেখি।’’ তবে বোঝা যায়, মেদিনীপুর না পাওয়ার হতাশা কিছুটা হলেও রয়ে গিয়েছে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির মধ্যে। তিনি ক্রিকেটীয় পরিভাষায় বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে আমি পিচ তৈরি করেছি। বর্ধমান তো জেগে আছে। জোশ তো দেখলেন কর্মীদের। আজ প্রথম বলেই তো ছক্কা হল।’’ জানিয়েছেন, বিজেপির বিদায়ী সাংসদ অহলুওয়ালিয়া এলাকার জন্য কী কী কাজ করেছেন, তার রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করবেন। দরকারে অহলুওয়ালিয়াকেও প্রচারে নিয়ে আসবেন।
বর্ধমানে কিছুটা সময় কাটিয়েই দিলীপ সোমবার দুর্গাপুর চলে যান দোল খেলতে। মঙ্গলবার আবার বর্ধমান। ১০৮ শিবমন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু হবে তাঁর নতুন সফর।