Jyotipriya Mallick

জেলবন্দি বালুর বিধানসভা হাবড়ায় লোকসভা ভোট পরিচালনার ভার সাত নেতার উপর, কারা দায়িত্বে?

বারাসত লোকসভায় ভোট সপ্তম দফায়। ১ জুন ভোট হবে সেখানে। হাবড়া বিধানসভা নিয়ে যথেষ্ট সাবধানি তৃণমূল নেতৃত্ব। এ জন্য তাঁরা পৃথক পরিকল্পনা করেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৯
Share:

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র ।

রেশন দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি রয়েছেন বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাই তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা ভোট পরিচালনার জন্য সাত জনের কমিটি গড়ে দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই কমিটি গঠন করা হয়েছে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে। আগামী মঙ্গলবার এই কমিটির প্রথম বার বৈঠকে বসবে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে, হাবড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নারায়ণচন্দ্র সাহাকে। আহ্বায়ক হয়েছেন সীতাংশু দাস ও জ্যোতি চক্রবর্তী। এ ছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন হাবড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেহাল আলি, হাবড়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাস, অজিত সাহা, তপতী দত্ত। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের তিনটি বিধানসভায় ভাল ব্যবধানে এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কাকলি ঘোষ দস্তিদার তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হলেও, বিধাননগর, অশোকনগর এবং হাবড়া বিধানসভাতে ভাল ব্যবধান পেয়ে এগিয়েছিল পদ্মশিবির। হাবড়াতে প্রায় ১৯ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সেই ফলাফলের পর প্রকাশ্যেই জ্যোতিপ্রিয় জানিয়েছিলেন, এমন ফলের পর তিনি আর বিধানসভা নির্বাচনে হাবড়ায় দাঁড়াতে ইচ্ছুক নন। কিন্তু দলীয় নির্দেশে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্র থেকে জোড়া ফুলের প্রতীকে প্রার্থী হয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিন্‌হাকে পরাজিত করেন তিনি। এ বারের নির্বাচনে গত লোকসভা ভোটের পুনরাবৃত্তি চাইছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই এ বার কমিটি গড়ে আগে থেকেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে ইডি। সেই ঘটনার পরেও তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ১৬ ফেব্রুয়ারি আচমকা রাজভবন থেকে জানানো হয়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জ্যোতিপ্রিয়র হাতে থাকা বন দফতরের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে। অনুষ্ঠানিক ভাবে ওই দিন থেকে মন্ত্রিপদে নেই বালু। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগে জ্যোতিপ্রিয়ের ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও ভাবেই আর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পুনরাবৃত্তি চাইছেন না। তাই ভোটঘোষণার অনেক আগে থাকতেই কমিটি গঠন করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০১ এবং ২০০৬ সালে গাইঘাটা বিধানসভা থেকে জিতে বিধায়ক ছিলেন বালু। কিন্তু আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে ২০১১ সালে গাইঘাটা আসনটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হলে হাবড়ায় প্রার্থী হন তিনি। সেই থেকে পর পর তিন বার সেখান থেকে জয়ী হয়ে বিধানসভার সদস্য হিসেবে মমতার মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জ্যোতিপ্রিয় রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে জেলবন্দি। তাই এ বার তাঁর দায়িত্ব স্থানীয় নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করে লোকসভা ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিল তৃণমূল।

বারাসত লোকসভায় ভোট সপ্তম দফায়। ১ জুন ভোট হবে সেখানে। হাবড়া বিধানসভা নিয়ে যথেষ্ট সাবধানি তৃণমূল নেতৃত্ব। বারাসাত লোকসভার অন্তর্গত হাবড়া বিধানসভায় মতুয়া এবং উদ্বাস্তু ভোটারদের আধিক্য। সিএএ কার্যকর হওয়ার পর বিজেপি নেতৃত্ব বারাসত লোকসভা আসনটিকে ইতিবাচক হিসাবে ধরছেন। তাই বনগাঁ দক্ষিণ থেকে বিজেপির বিধায়ক মতুয়া সমাজের স্বপন মজুমদারকে বারাসত লোকসভায় প্রার্থী করেছেন তাঁরা। এমতাবস্থায় বিজেপির এমন কৌশলী চালের পর স্থানীয় নেতাদের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে হাবড়া লোকসভায় বিজেপির জয়ের স্বপ্নকে রুখে দিতে চায় তৃণমূল। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর রেশন বণ্টন মামলায় গ্রেফতার হন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়। শারদোৎসবের আবহে তাঁর বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশির পর রাতে গ্রেফতার করেন ইডির আধিকারিকেরা। ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইডি সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি রয়েছেন হাবড়ার বিধায়ক। মাঝে শারীরিক অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও, সুস্থ হয়ে ফের জেলে ফিরে গিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে আদালতে কয়েক বার তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement