—প্রতীকী চিত্র।
গত কয়েক বছরের ভোটচিত্র দেখলে মনে হবে, তুলনামূলক ভাবে তৃণমূল ভাল জায়গায় রয়েছে বর্ধমান উত্তর বিধানসভা এলাকায়। কিন্তু ভোটযুদ্ধে অঙ্ক সবসময় মেলে না। সে কারণেই তৃণমূল ও বিজেপি, দুই যুযুধান শিবিরই হিসাব কষতে ব্যস্ত।
২০১১ বিধানসভা ভোটে বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রে ৫০.৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে আইনসভায় ঢোকার ছাড়পত্র পেয়েছিলেন সিপিএমের অপর্ণা সাহা। তার পরে সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কে ‘ধস’ নামতে থাকে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন তৃণমূল প্রার্থী। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনেও ভোট ধরে রেখেছিল শাসক দল। ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে সামান্য ভোট কম পড়েছিল তৃণমূলের বাক্সে (৪৫.৯৬ শতাংশ)। তাতে অবশ্য বিধানসভায় যেতে অসুবিধা হয়নি তৃণমূলের নিশীথ মালিকের।
তৃণমূল তার ভোট ধরে রাখলেও এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপির উত্থান চোখে পড়ার মতো। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে বিজেপি এই কেন্দ্রে পেয়েছিল সাত শতাংশ ভোট। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তা বেড়ে ৩৫.৫ শতাংশ হয়। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮.৮ শতাংশ।
নিশীথের বক্তব্য, “ভোটের এই হিসাবই বলে দিচ্ছে, এই কেন্দ্রে আমাদের এগিয়ে থাকা নিশ্চিত। প্রার্থীকে নিয়ে উৎসাহ এবং প্রচারে জমায়েত দেখে মনে হচ্ছে, আগের থেকেও বেশি ভোট পাব এ বার। গতবার বিজেপি-সিপিএমের দিকে যাওয়া ভোট আমাদের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য হিসাব কষা চলছে।”
অন্য দিকে, দিনভর প্রচারের শেষে কী ভাবে ভোট বাড়ানো যায়, তার অঙ্ক কষে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব-ও। গত বিধানসভা ভোটে ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাধাকান্ত রায়ের দাবি, “আগের ভোটগুলিতে আমাদের বুথে কর্মী ছিল না। অন্তত ২৫ শতাংশ বুথে এজেন্ট ছিল না। এ বার আমরা ৯৫ শতাংশ বুথে এজেন্ট দেব। ভোটলুটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হবে। নিশ্চিত ভাবে ভোট বাড়বে।” বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার সভাপতি অভিজিৎ তা মনে করেন, “সিপিএমের ভোট আরও ভাঙবে। তৃণমূলেরও ভোট কমবে। সেটাই আমাদের দিকে আসবে।”
এই বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে খাগড়াগড়। দশ বছর পরেও যে এলাকার মানুষের মনে বোমা বিস্ফোরণের স্মৃতি টাটকা। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে ওই এলাকার কিছু দূরেই খুন হয়েছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা এবং ৭৩ বছর বয়সি তাঁর দলের জেলা কমিটির সদস্য কমল গায়েন।
‘নৈরাজ্য’ নিয়ে এই বিধানসভা এলাকায় চাপানউতোর চলছে শাসক-বিরোধী শিবিরে। এই বিধানসভা এলাকায় কৃষি ও শিল্পের সহাবস্থান রয়েছে। এই কেন্দ্রের অধীন বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুলে রয়েছে শিল্পতালুক। সেখানে গড়ে উঠেছে চটশিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্প। শিল্প আনার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৫-এ গোপালপুর মৌজায় শিলান্যাস হয় আর এক শিল্পতালুকের। অভিযোগ, সেখানে জমি জরিপের পরে কাজ আর এগোয়নি। বর্ধমান ১ ব্লকের পালিতপুরে বাম আমলে বেশ কয়েকটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা, চালকল, কাগজকল গড়ে উঠেছিল। আমন, বোরো-আলু-সর্ষে চাষর উপরে নির্ভরশীল এখানকার মানুষ।
সিপিএমের দাবি, বাম আমলে এই বিধানসভা এলাকায় উন্নয়ন এবং তৃণমূল-বিজেপি আমলে দুর্নীতি নিয়ে তারা প্রচার করছেন। মানুষের সাড়াও পাচ্ছেন। এক সময়ের শক্তঘাঁটিতে ফের বামেদের পালে হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “তৃণমূল-বিজেপি দুই দলেই বিক্ষুব্ধরা একজোট হয়েছেন। তাঁদের ভোটের হিসাবও হচ্ছে। সেই হিসাব মিললে আমাদের ভোট অনেক বাড়বে।” সিপিএমের ভোট বাড়লে এই আসনে সব সমীকরণ বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ।
কাদের হিসাব মেলে, সেটাই
এখন দেখার।