ইতিহাস পড়ে পেশা নির্বাচন। প্রতীকী ছবি।
ইতিহাস বিষয়টি পড়ার সময় অনেকেরই হয়তো ঘুমে চোখ ঢুলে আসে। তখন পরীক্ষায় পাশ করাই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়! পুরনো দিনের নানা ঘটনাবলির ইতিবৃত্তান্ত পড়ে আদৌ কোনও কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দিহান থাকেন অনেকেই। তবে ইতিহাস পড়লে সমাজব্যবস্থা, সভ্যতা, মতাদর্শ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সংস্কৃতির ব্যাপারে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। তাই এখন ইতিহাস পড়ে যে যে পেশা নির্বাচন করে নিতে পারেন পড়ুয়ারা, সেই নিয়েই এখানে আলোচনা করা হবে।
ইতিহাস নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পড়াশোনা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যে বিষয়গুলির উপর স্পেশালাইজ়েশন করতে পারেন সেগুলি হল: আর্কিয়োলজি, মিউজ়িয়োলজি, আর্কাইভাল স্টাডি ইত্যাদি।
পড়ুয়ারা ইতিহাস নিয়ে পড়ার পর যে পেশাগুলি নির্বাচন করতে পারেন, সেগুলি হল-
১. আর্কিয়োলজিস্ট বা প্রত্নতত্ববিদ: এক জন প্রত্নতত্ববিদকে গবেষণা-নির্ভর বা ফিল্ড-নির্ভর কাজ করতে হয়। প্রত্নতত্ববিদদের নানা ঐতিহাসিক জায়গায় খনন কাজ চালিয়ে, সেগুলির বিশ্লেষণ করে বর্তমান স্থাপত্যগুলিকে কী ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়, সেই সব দিকে নজর রাখতে হয়। যে হেতু প্রত্নতত্ত্ববিদরা পুরনো দিনের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়বস্তু নিয়ে জনসাধারণকে শিক্ষিত করতে পারে, তাই এঁদের ভূমিকা সমাজে ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ । তবে আর্কিয়োলজি বা পুরাতত্ত্ব ছাড়াও ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় যেমন, নৃতত্ত্ব বা ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করলেও এই পেশায় যাওয়া যেতে পারে। এই পদে আনুমানিক মাসিক ৭০০০০ টাকা বেতন দেওয়া হয়।
২. মিউজিয়োলজিস্ট: একজন মিউজিয়োলজিস্টকে মিউজিয়ামের পরিকল্পনা, সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকতে হয়। তাঁদের মিউজিয়াম সংক্রান্ত গবেষণা,প্রশাসনিক ও জনসংযোগের কাজগুলিও করতে হয়। মিউজিয়ামের ঐতিহাসিক ও শিল্পবস্তুগুলিকে পরীক্ষানিরীক্ষা ও সংরক্ষণের দিকগুলিতে নজর রাখার দায়িত্বও মিউজিয়োলজিস্টদের। তবে প্রত্নতত্ববিদদের মতোই শুধু মাত্র ইতিহাস ছাড়াও বিজ্ঞান, হিউম্যানিটিজ় বা ফাইন আর্টস, এমনকি আর্কিয়োলজি বা পুরাতত্ত্ব নিয়ে পড়লেও মিউজিয়োলজিস্ট হওয়া যায়। এই পদে আনুমানিক মাসিক ১৫০০০ টাকা বেতন পান চাকরিরতরা।
৩. ইতিহাস শিক্ষক: ইতিহাস পড়ে শিক্ষার্থীরা ইতিহাসের শিক্ষক-শিক্ষিকার পেশাকে বেছে নিতে পারেন। ছাত্রছাত্রীদের সঠিক দিশা দেখানোর কাজটা যে হেতু শিক্ষকরাই করেন, তাই শিক্ষকতার চাকরি বরাবরই সকলকে পরিতৃপ্তির স্বাদ এনে দেয়। এই বিষয়টিতে শিক্ষক হিসাবে স্কুল-কলেজে নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে পড়ানোর কাজ করতে পারেন পড়ুয়ারা। স্কুলে পড়ানোর জন্য এ ক্ষেত্রে, শিক্ষক শিক্ষনের বিএড ডিগ্রি কোর্সটিও করতে হয় শিক্ষার্থীদের। একই ভাবে, কলেজে শিক্ষকতা করতে গেলে নেট বা সেট পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। এ ছাড়া, আরও উচ্চশিক্ষার পর গবেষণার কাজও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট বৃত্তি প্রদানেরও ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষক পদে চাকরির ক্ষেত্র হিসাবে নানা বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয় চাকরিরতদের।
৪. আর্কাইভিস্ট: ইতিহাস পড়ে শিক্ষার্থীরা আর্কাইভিস্ট হিসাবেও বিভিন্ন সংরক্ষণাগারে ঐতিহাসিক দলিল, পাণ্ডুলিপি, কাগজপত্র ও নথি সংরক্ষণের কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন মিউজ়িয়াম, গ্রন্থাগার ও সংরক্ষণাগারে এই পদে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা। এই পদে আনুমানিক মাসিক ৩০০০০ টাকা বেতন পান চাকরিরতরা। এই পেশার জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে কোনও ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা কোর্স করার প্রয়োজনীয়তা পড়ে না। ইতিহাস যাঁদের পড়াশুনোর বিষয়, তাঁরা স্বভাবসিদ্ধভাবেই এই পেশার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন।
৫. সিভিল সার্ভেন্ট: সমাজের উন্নয়নের জন্য নানা কাজে নিজেদের যুক্ত করার বাসনা অনেকেরই থাকে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে কেউ সিভিল সার্ভেন্ট হলে সেই সুযোগ অনেকখানিই বেড়ে যায়। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য যে যে বিষয় পড়তে হয়, তার মধ্যে ইতিহাস অন্যতম একটি বিষয়। তাই এই বিষয় নিয়ে পড়াশুনো করলে এই পরীক্ষায় পাশ করাও অনেক সহজ হয়। যে হেতু সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে নানাবিধ পদে নিয়োগ হয়, সেই জন্য উক্ত পদের ভিত্তিতে বেতন পান চাকরিতে নিযুক্তরা।
৬. সাংবাদিক: সাংবাদিকদের কাজই হল খবর সংগ্রহ ও পরিবেশন করা। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বা ইতিহাস সংক্রান্ত জ্ঞান এই কাজের ক্ষেত্রে তাই বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। কোনও খবর পরিবেশনের জন্য শুধু সেই ঘটনাবলী সংক্রান্ত লেখা ছাড়াও, তার পুরনো ইতিহাস জানা অপরিহার্য একটি বিষয়। আর তাই ইতিহাস নিয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা এই পেশাকে বেছে নিতে পারেন। এর জন্য সব সময় কোনও বিশেষ কোর্স করারও প্রয়োজন পড়ে না। প্রাথমিক ভাবে এক জন সাংবাদিক প্রতি মাসে আনুমানিক ১২০০০-২০০০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।
তাই, ইতিহাস পড়ে কিছু ভবিষ্যৎ নেই, এই ধারণা দূরে রেখে, ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী, উপরোক্ত যে কোনও পেশা বেছে নিতে পারেন।