সংগৃহীত চিত্র।
রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়ন্ত্রণ করতে আরও কঠোর হচ্ছে সরকার। পরিচালন সমিতির ক্ষমতা খর্ব করে প্রশাসকের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে তৎপর স্কুল শিক্ষা দফতর।
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের বহু স্কুল থেকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না প্রধান শিক্ষকরা। এমনকি, পরিচালন সমিতিও স্কুল পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছেন। শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছে মতো অনুপস্থিত থাকছেন ও ছুটি নিচ্ছেন। যার ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে অব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে পড়াশোনার মন অনেকটাই নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। তাই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পথে স্কুল শিক্ষা দফতর।
সূত্র, সম্প্রতি কলকাতার বুকে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের পরিচালন সমিতির ঠিক মতো পরিচালনা না করায় সমস্যা তৈরি হচ্ছিল, পরবর্তীকালে সরকার প্রশাসক বসায় সেখানে। এর ফলে স্কুল পরিচালনা থেকে পঠন-পাঠনের মান সব কিছুই উন্নতি হয়েছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। এ বার রাজ্যের অন্য স্কুলগুলিতেও স্থানীয় ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সরিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে স্কুল শিক্ষা দফতর। আর সরকারের এই সিদ্ধান্তেই দ্বিমত তৈরি হয়েছে প্রধান শিক্ষক থেকে শিক্ষক মহলে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “স্বাভাবিক ছন্দে বিদ্যালয় চলতে দিলে সেখানে প্রশাসক থাকুক বা অন্য কেউ, অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে স্কুল পরিচালনা করতে গেলে জটিলতা বৃদ্ধি পাবে।”
প্রসঙ্গত, সরকার পোষিত স্কুলে নিজেদের লোক পরিচালন সমিতিতে রাখে সরকার। তবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের ক্ষেত্রে অভিভাবদের দ্বারা নির্বাচিত হয় পরিচালন সমিতি। শিক্ষক মহল বা সংগঠনগুলির একাংশের বক্তব্য, পরিচালন সমিতি সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে প্রশাসক বসাতে গেলে সরকারকে আইন পরিবর্তন করতে হবে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সব স্কুলেই যদি প্রশাসক বসানো হয়, তা হলে কিন্তু নতুন করে জটিলতা তৈরি হবে। আইন অনুযায়ী প্রতিটি স্কুলে বৈধ পরিচালন সমিতি থাকা বাধ্যতামূলক। আইনে পরিবর্তন আনতে হবে সরকারকে।”
শিক্ষকদের একাংশের মত পরিচালন সমিতিতে স্থানীয় সদস্য থাকলে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান তৎক্ষণাৎ হয়ে যায়। প্রশাসক দিয়ে কি সেই সমস্যার সমাধান হবে? যোধপুর পার্ক গার্লস হাইস্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা চৌধুরী বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই প্রধান শিক্ষকরা অনেক কিছু করতে পারেন না। প্রশাসক বসলে সেক্ষেত্রে সুবিধা হবে। পরিচলন সমিতির সদস্য স্থানীয় ভাবে কাজ করত। প্রশাসক কেমন কাজ করবেন সেটা সময় বলবে।”
প্রশাসকের দায়িত্ব দিতে হবে এআই বা এসআই-দের। ২০১৯ সালের পর থেকে রাজ্যের সিংহভাগ স্কুলে পরিচালন সমিতি নেই। এর ফলে স্কুলগুলিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আর এতদিন পর্যন্ত পরিচালন সমিতিতে সরকারের মনোনীত সদস্য হিসাবে এসআইরা থাকতেন। কিন্তু স্কুলের কোন বিষয়ে অংশগ্রণ করতেন না তাঁরা। উল্লেখ্য, স্কুল অনুযায়ী এত প্রশাসক আছেন কি না তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে শিক্ষক মহলে। একজন প্রশাসককে একাধিক স্কুলের দায়িত্ব দিলে লাভের লাভ কিছু হবে না দাবি শিক্ষক সংগঠনগুলির। কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “শুধুমাত্র প্রশাসক বসালে হবে না। সমস্ত নিয়ম বাস্তবসম্মত হতে হবে। এআই বা এসআইরা প্রশাসক হিসেবে কাজ করলেও স্কুলের সংখ্যা ও তাঁদের সংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন।”